আদাবরে ৪২ জন অসুস্থ ও একজনের মৃত্যু, ভাঙ্গারির দোকান থেকে যেভাবে ছড়াল বিষাক্ত গ্যাস

ভাঙ্গারির দোকানে থাকা সিলিন্ডার লিক হয়ে আশপাশের এলাকায় গ্যাস ছড়িয়ে যায়। পুলিশ গিয়ে দোকানটি সিলগালা করে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

রাজধানীর আদাবরে বেঁড়িবাধ এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়ে বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে এসে একজন মারা গেছেন ও অন্তত ৪২ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানায়, মঙ্গলবার ভোরে শ্যামলী হাউজিং-২ প্রকল্পের ৩০টি বাড়ির প্রায় ২০০ বাসিন্দা হঠাৎ ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। পরে তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। অনেকেই বমি করতে শুরু করেন।

তাদের চিৎকার শুনে এলাকাবাসী এসে তাদের উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

তাদের মধ্যে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর গ্রামের কবির হোসেন (৪৫) ঢামেকে মারা যান।

গ্যাসের প্রভাবে ওই দোকানের আশপাশের গাছের পাতা ঝলসে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়, কিছু পাতা শুকিয়ে যায়। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

পুলিশ জানায়, আজ মঙ্গলবার ভোর ৩টার দিকে একটি ভাঙ্গারির দোকানের শ্রমিকরা একটি পরিত্যক্ত গ্যাস সিলিন্ডার ভাঙার সময় বিষাক্ত গ্যাস বের হতে শুরু করে।

বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই ভাঙ্গারির দোকানের আশপাশে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে আছে। গাছের সবুজ পাতা গ্যাসের প্রভাবে হলুদ হয়ে গেছে এবং কিছু পাতা শুকিয়ে মচমচে হয়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে এমন হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মীরা ডেইলি স্টারকে জানান, ভোর সোয়া ৪টার দিকে শ্বাসকষ্ট ও চোখ জ্বালাপোড়া নিয়ে শতাধিক মানুষ হাসপাতালে এসেছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, 'অনেককে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছি। কাউকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চারজন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।'

ভুক্তভোগী শ্যামলী আবাসন প্রকল্প-২ এর ব্যবস্থাপক এমরান আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি, আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান টিনের ঘরে ঘুমাই। হঠাৎ, শ্বাসকষ্ট অনুভব করি। আমাদের চোখ জ্বালাপোড়া করে।'

'দ্রুত আমরা ঘর থেকে বের হয়ে গলিতে গিয়ে দেখি অনেক লোক। তাদেরও একই সমস্যা। শ্বাস নিতে পারতেছে না, কেউ কেউ বমি করে। কারও কারও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক ছিল না,' বলেন তিনি।

তিনি ও তার পরিবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করে। তারা আমাদের হাসপাতালে নেয়। আমাদের অক্সিজেন দেওয়া হয়।'

ভাঙ্গারির দোকানের কাছে সাতটি ঘরে থাকতেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজি ডিবি লিমিটেডের ২০ কর্মী। তারা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজার আবদুর রহমান তুহিন জানান।

নিহত কবির এক কর্মীর চাচাতো ভাই এবং সোমবার রাতে তিনি সেখানেই ছিলেন বলে জানান তুহিন।

জানতে চাইলে আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অসুস্থ ৪০ জন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'ভাঙ্গারির দোকানের মালিক বলেছেন যে, তিনি চার দিন আগে একটি পুরোনো সিলিন্ডার কিনেছেন। গতকাল ভোরে তার দোকানে কাজ করার সময় সিলিন্ডার লিক হয়ে গ্যাস আশেপাশের এলাকায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে।'

'এটি কী ধরনের গ্যাস, তা জানতে সিআইডির এক্সপার্টরা কাজ করছেন,' যোগ করেন ওসি।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা খবর পেয়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ২৫-৩০ কেজি ওজনের সিলিন্ডারটি থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। এটি অ্যামোনিয়া গ্যাস ছিল।'

ঘটনার পর দোকান মালিক কালু পালিয়ে গেলেও, সকালে পুলিশ তাকে আটক করে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

1h ago