যেসব পণ্যের দাম বাড়তে-কমতে পারে

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে-কমতে পারে

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তিনি এই বাজেট পেশ করেন।

বাজেটে নিম্নোক্ত পণ্যের দাম বাড়ানো ও কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

দাম বাড়বে

মোবাইলের এসএমএস-কলরেট, সিগারেট, এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর, কাজু বাদাম, আইসক্রিম, পানির ফিল্টার, এলইডি বাল্ব, গাড়ি কনভার্সন খরচ, ফার্নেস অয়েল, লুব অয়েল, মিনারেল লুব অয়েল ও বেজ অয়েল, ফিলিং স্টেশন স্থাপন, সিএনজি কনভার্সন কিট ও সিলিন্ডার, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইকুইপমেন্ট, ইপিজেডের আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী, কার্বনেটেড বেভারেজ, এমিউজমেন্ট পার্ক, থিম পার্ক ও পর্যটন।

দাম কমবে

চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, গুঁড়ো দুধ, চকলেট, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, ডেঙ্গুর চিকিৎসাসামগ্রী, আমদানিকৃত কিডনি ডায়ালাইসিস ফিল্টার ও সার্কিট, ক্যানসার চিকিৎসা সরঞ্জাম, কার্পেট, সুইচ-সকেট, ইলেকট্রিক মোটর, লোহা জাতীয় পণ্য (রড, বার ও এঙ্গেল), উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ ও মিথানল।

দাম বাড়ার কারণ

  • এসএমএস-কলরেট: সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় মোবাইল ফোনের এসএমএস ও কলরেটে খরচ বাড়তে পারে।
  • জ্বালানি খাত: ফার্নেস অয়েল, লুব অয়েল, মিনারেল লুব অয়েল ও বেজ অয়েলের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার প্রস্তাব করায় এসব পণ্যের শুল্ককর বাড়তে পারে।
  • সিগারেট: প্রতিবারের মতো এবারও সিগারেট উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়ানো হয়েছে। তাই সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। সিগারেটের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে সম্পূরক শুল্ক ৬০ থেকে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
  • ফিলিং স্টেশন স্থাপন, সিএনজি কনভার্সন কিট ও সিলিন্ডার: সিএনজি এলপিজি ফিলিং স্টেশন স্থাপন, সিএনজি কনভার্সন কিট, সিলিন্ডার অন্যান্য সরঞ্জামের আমদানি শুল্ক তিন শতাংশ থেকে পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব করায় ব্যয় বাড়তে পারে এ খাতে।
  • বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইকুইপমেন্ট: রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্রের জন্য ইকুইপমেন্ট ও ইরেকশন ম্যাটেরিয়াল আমদানিতে শূন্য শতাংশ শুল্ককর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে।
  • ইপিজেডের আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী: অর্থনৈতিক অঞ্চলের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা (শুল্কমুক্ত) পরিবর্তে এক শতাংশ হারে শুল্ককর আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
  • এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর: দেশে এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও স্টিল সিটের পাশাপাশি রেফ্রিজারেটরের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরের দাম বাড়তে পারে।
  • পানির ফিল্টার: পানি পরিশোধন যন্ত্র দেশে উৎপাদন হওয়ায় পণ্যটি আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টারের দাম বাড়তে পারে।
  • এলইডি বাল্ব: এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তাই এলইডি বাল্বের দাম বাড়তে পারে।
  • গাড়ি কনভার্সন খরচ: গাড়ি সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনের ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। এ কারণে গাড়ি কনভার্সন খরচ বাড়তে পারে।
  • কাজু বাদাম: দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার অংশ হিসেবে খোসা ছাড়ানো কাজু বাদাম আমদানিতে শুল্ক পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে কাজু বাদামের দাম বাড়তে পারে।

দাম কমার কারণ

  • উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ: দেশীয় বিমান পরিচালনা সংস্থাগুলো বিদেশি সংস্থাগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। এই অবস্থায় এভিয়েশন খাতের উত্তরণকল্পে ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনায় এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন ও প্রপেলার আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
  • গুঁড়ো দুধ: প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধের দাম কমতে পারে।
  • চকলেট: চকলেট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এ কারণে চকলেটের দাম কমতে পারে।
  • ল্যাপটপ: ল্যাপটপ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হলেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে ৩১ শতাংশের পরিবর্তে ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ককর দিতে হবে বিধায় ল্যাপটপের দাম কমতে পারে।
  • মোটরসাইকেল: সিকেডি ইঞ্জিনের পার্টস আমদানির শুল্ক কমানো হয়েছে। এ কারণে দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের দাম কমতে পারে।
  • ডেঙ্গুর চিকিৎসাসামগ্রী: ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের কিটসহ সব ধরনের পরীক্ষা সরঞ্জামের ওপর শুল্ককর রেয়াত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
  • আমদানিকৃত কিডনি ডায়ালাইসিস ফিল্টার ও সার্কিট: কিডনি রোগী চিকিৎসার অন্যতম সরঞ্জাম ডায়ালাইসিস ফিল্টার ও ডায়ালাইসিস সার্কিট পণ্যের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা হয়েছে।
  • ক্যানসার চিকিৎসা সরঞ্জাম: ক্যানসার রোগীর চিকিৎসার ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জাম রেয়াতি সুবিধায় যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
  • কার্পেট: কার্পেট তৈরির প্রধান কাঁচামাল পলিপ্রেপাইলিন ইয়ার্ন আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দেশে তৈরি কার্পেটের দাম কমতে পারে।
  • লোহা জাতীয় পণ্য: রড, বার ও এঙ্গেল তৈরির কাঁচামাল ম্যাঙ্গানিজ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। এতে লোহা জাতীয় পণ্যের দাম কমতে পারে।
  • সুইচ-সকেট: দেশে উৎপাদিত সুইচ-সকেট, হোল্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে বিধায় এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
  • ইলেকট্রিক মোটর: এ পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ইলেকট্রিক মোটরের দাম কমতে পারে।
  • মিথানল: ওষুধ, ওয়াশিং প্ল্যান্ট, পেইন্ট প্রভৃতি শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে মিথানল। শতভাগ আমদানিনির্ভর এ পণ্যটি বাল্ক আকারে আমদানি করলে শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এবারের বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়ছে চার দশমিক ছয় শতাংশ। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট।

বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাত শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ হতে পারে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। পরে এটি সংশোধন করে সাত লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Power, Energy Sector: Arrears, subsidies weighing down govt

The interim government is struggling to pay the power bill arrears that were caused largely by “unfair” contracts signed between the previous administration and power producers, and rising international fuel prices.

8h ago