মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ-জাপান

রপ্তানির দিক থেকে জাপান বাংলাদেশের ১২তম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার
রপ্তানির দিক থেকে জাপান বাংলাদেশের ১২তম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ছবি: স্টার গ্রাফিক্স

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পরও বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধার পাশাপাশি জাপানি বিনিয়োগ পেতে বাণিজ্য চুক্তির জন্য জাপানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে।

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) সইয়ের আশায় প্রথম দফা আলোচনা গত ১৯ মে ঢাকায় শুরু হয়ে ২৩ মে শেষ হয়। বৈঠকের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

সংবাদ বিজ্ঞপিতে বলা হয়েছে, 'আলোচনার এই দফায় উভয় পক্ষ আলোচনার পদ্ধতি ও আলোচনার বিস্তৃত ক্ষেত্র সম্পর্কে তাদের মত বিনিময় করেছে।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আলোচনা দলের সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈঠকে মূলত যৌথ পর্যালোচনায় চিহ্নিত ১৭টি বিষয়ের তথ্য আদান-প্রদান করেছি।'

যৌথ পর্যালোচনা দলটি পণ্য বাণিজ্য, বাণিজ্য প্রতিকার, উত্স বিধি, শুল্ক পদ্ধতি, বাণিজ্য সুবিধা, স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি ব্যবস্থাসহ খাতগুলো চিহ্নিত করেছে।

অন্যগুলো হলো—বাণিজ্য, সেবা, বিনিয়োগ, ইলেকট্রনিক কমার্স, সরকারি ক্রয়, মেধাস্বত্ব, প্রতিযোগিতা, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন, শ্রম, পরিবেশ, স্বচ্ছতা, সহযোগিতা ও বিরোধ নিষ্পত্তিতে কারিগরি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা।

বৈঠকে জাপানের অর্থনৈতিক কূটনীতির দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিকবিষয়ক ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক তাকেতানি আতসুশি ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ মুনিরুস সালেহীনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ও জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়াওয়ামা কিমিনোরি।

গত সপ্তাহে আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনার পথ প্রশস্ত করতে গত বছর যৌথ দলের তিন দফা বৈঠক হয়।

২০২৬ সালের নভেম্বরে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার পর বাংলাদেশ রপ্তানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা ধরে রাখতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ), অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ), সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি ও ইপিএ সইয়ের জন্য প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করছে।

ইপিএ সই না হলে জাপানের বাজারে বর্তমানের শূন্য-শুল্ক সুবিধা থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ১৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে।

সব বাজারে বাণিজ্য অগ্রাধিকার শেষ হলে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ বছরে আট বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে দেশের ৭৩ শতাংশ রপ্তানি এই সুবিধা ভোগ করছে।

রপ্তানির দিক থেকে জাপান বাংলাদেশের ১২তম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। আমদানিতে সপ্তম। জাপান এশিয়ার একমাত্র দেশ যেখানে শুল্ক সুবিধার কারণে প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশের রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাপানে পণ্য, বিশেষ করে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল এক দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার ও আমদানি ছিল দুই দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার।

জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ২০২১ সালের জরিপে দেখা গেছে, এই দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা চালানো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৮৫ শতাংশ স্থানীয়। জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো চায় টোকিও এফটিএ সই করুক।

বাংলাদেশে প্রচুর সস্তা শ্রমশক্তির কারণে প্রায় ১৫ বছর আগে জাপানের বস্ত্র ও লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে তাদের ব্যবসা বাড়াতে শুরু করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জাপানের মোটরসাইকেল নির্মাতা, টেলিযোগাযোগ ও আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো ১৭ কোটি মানুষের বাজারে ব্যবসার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এ দেশে বিনিয়োগ করেছে।

গত এক দশকে বাংলাদেশে ব্যবসা করা জাপানি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে প্রায় ৩৫০ হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জাপান থেকে সরাসরি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫৩৩ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে আংশিকভাবে খুলে হওয়া বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনের মাধ্যমে আরও বিনিয়োগ আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জাপানের অংশীদারিত্বে নারায়ণগঞ্জে প্রথম বিশেষ অঞ্চল করা হয়েছে।

২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উভয় পক্ষই আলোচনা শেষ করার লক্ষ্য নিয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ শুল্ক সুবিধা সুরক্ষার জন্য ভুটানের সঙ্গে পিটিএ সই করেছে। এটি কোনো দেশের সঙ্গে এ ধরনের প্রথম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি।

Comments

The Daily Star  | English

What are the five charges against Hasina at ICT?

Former home minister Kamal and ex-IGP Mamun have also been accused

22m ago