ঢাকার মধ্যেই প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে ঘুরে আসুন মিরপুর বেড়িবাঁধ

মিরপুর বেড়িবাঁধ
ছবি: শাদাব শাহরুখ হাই

ঢাকা শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশ আর কর্কশ নাগরিক জীবনের ক্লান্তি থেকে একটুখানি পালিয়ে বেড়ানোর কোনো জায়গা নেই– এ অভিযোগ প্রায়ই আসে শহরের বাসিন্দাদের কাছ থেকে। এখানে খোলামেলা জায়গার কমতি আছে ঠিকই, তবে এখনও ঢাকায় কিছু এলাকা আছে, যেখানে হেঁটে বেড়ানোর আরাম পাওয়া যায়, নীরব সূর্যাস্ত উপভোগের সুযোগ আছে, চাইলে ঘুরে আসা যায় নৌকা নিয়েও।

মিরপুর বেড়িবাঁধ এমনই একটি জায়গা। ঢাকার মধ্যে থেকেও প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে দেখার ও অনুভবের সুযোগ আছে এখানে।

কোথায় অবস্থিত

মিরপুর বেড়িবাঁধ মূলত অবস্থিত বহমান, প্রাণবন্ত তুরাগ নদীর তীরে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়ার সময় বামদিকেই রয়েছে এটি। বেড়িবাঁধে যাওয়ার রাস্তাটা খুব সহজ। বাসে চড়ে যাওয়া যায়, আবার মিরপুর-১ থেকে সিএনজি বা রিকশা নিয়েও আধা ঘণ্টার কম সময়ে এখানে পৌঁছানো যাবে।

বেড়িবাঁধের রাস্তাগুলো

বেড়িবাঁধে ভালো সময় কাটানোর বেশ কিছু উপায়ই আছে, তবে শান্তিতে হেঁটে বেড়ানোর রাস্তাগুলো বোধহয় সবচেয়ে সুন্দর। সূর্যাস্তের আগে আগে বেড়িবাঁধে পৌঁছতে পারলে শান্ত বিকেলের হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হেঁটে বেড়ানো যাবে।

মিরপুর বেড়িবাঁধ
ছবি: শাদাব শাহরুখ হাই

নদীর ধারে আছে পায়ে হাঁটার সেতু। নদীর খুব কাছেই, তাই মনে হবে যেন নদীর উপরই হেঁটে যাচ্ছেন। খুব বেশি হলে দুই কিলোমিটার লম্বা এই ফুটব্রিজটিতে হাঁটার সঙ্গে নদীর সুন্দর দৃশ্য উপভোগের সুযোগও আছে।

ব্রিজের চারপাশে, উপরে এবং নিচে– সব দিকের দৃশ্যই মনোরম। একদিকে নদী, দিগন্তের রথে চড়ে মোহময় সূর্যের আবাহন। অন্যদিকে সবুজ পল্লবের শ্যামল প্রাচীর। সেতুর নিচে কখনো জল, কখন শুকনো মাটি– কখনো বা খড়ের গাদা দেখে মনে হয় যেন দূর গ্রামে এসে ঠেকেছে যাত্রার গন্তব্য। এখানটাতে দাঁড়িয়ে যেন দূর থেকে দেখা যায় জাদুর শহর ঢাকাকে, প্রকৃতির সঙ্গে বৈপরীত্যে জন্ম নেয় অপূর্ব এক দৃশ্য।

নদীর কিনারে

খুব ছোট্ট পরিসরে হলেও তুরাগ এখনও এঁকে দেয় মনোহর দৃশ্যের ক্যানভাস। পড়ন্ত বিকেলে অবশ্য নদী অতটাও শান্ত থাকে না। ঢেউ দোলানো জল মনে করিয়ে দেয়, সময়ের মতোই প্রবহমান তুরাগের গতি– আর সেইসঙ্গে দিন শেষের সূর্যের আলো ধরা দেয় চোখের কোণে।

জোয়ারের সঙ্গে ভাসমান শ্যাওলা, নলখাগড়ার দল আর জলের আগাছারা ঘুরে বেড়ায়, নদীর দুধারেই সৃষ্টি হয় প্রকৃতির আরামদায়ক এক মাদুর।

নদীর মধ্যে বড় বড় নৌকা আর তার মধ্যে নিত্যদিনের পেশাজীবী মানুষের দল। বাংলাদেশের জলজীবন আর বহুমুখী জীবনযাত্রা দেখে মনে পড়ে ফেলে আসা সেইসব গ্রামীণ দিনের কথা। ছোট নৌকারাও আছে, জলের ওঠানামার সঙ্গে চলমান। এসব দেখে যদি নিজেরও জলে ভাসতে ইচ্ছে করে, তবে ছোট একটি নৌকায় চড়ে নদীটাকে আরও কাছ থেকে দেখতে পারবেন।

এক ঘণ্টার নৌভ্রমণে এখানে লাগবে ৫০০ টাকার মতো। তবে ভাড়া ঠিক করার সময় দামাদামি না করলে কিন্তু চলবে না। ভালোভাবে আঁধার নেমে আসার আগ পর্যন্ত নৌকায় ঘোরা যাবে, তাই বিকেল থাকতে থাকতেই নদীতে নেমে পড়া ভালো।

দর্শকদের জন্য

বেড়িবাঁধের প্রান্তে কিছু বেসরকারি পার্ক রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক, ফেইরি ল্যান্ড এবং নেভারল্যান্ড। এখানে বসে নাশতা, ফাস্টফুড ইত্যাদি উপভোগ করতে বসে নদীর দৃশ্য দেখার সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পার্কে বাচ্চাদের নাগরদোলার মতো মজাদার রাইডের ব্যবস্থাও আছে। এমনিতে এসব পার্কের প্রবেশমূল্য শুরু হয় ২০ টাকা থেকে, তবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে গেলে বসার ও খাওয়া-দাওয়ার বাড়তি সুবিধাগুলোও নিলে ভালো হয়।

ঢাকা শহরের নিদারুণ ভোগান্তি থেকে বেড়িবাঁধ এক টুকরো প্রশান্তি উপহার দেবে, আর সেইসঙ্গে আশপাশের নদীগুলো মনে করিয়ে দেবে– আমাদের নদীদের হারিয়ে যাওয়ার গল্প। আর১০  বছর পরও নদীগুলো এইটুকু অবস্থাতেও থাকবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা আসবে মাথায়। আমাদের সবসময় মাথায় রাখা উচিত যে যতদিন পর্যন্ত সম্ভব, আমাদের প্রকৃতির সুরক্ষায় আমাদেরই কাজ করে যেতে হবে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

As the interim government is going to complete its six months in office, calls for the national election are growing louder.

12h ago