৫৭ বছর বয়সে এসএসসি পাশ, আরও ৪ বছর পড়তে চান ট্রাফিক পুলিশ ছামাদ

আব্দুস ছামাদ। ছবি: সংগৃহীত

অবসরের পর স্বপ্ন গ্রামের অসহায় মানুষের চিকিৎসা করবেন। তার জন্য দরকার হোমিওপ্যাথিতে চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স। ভর্তির খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন এসএসসি সার্টিফিকেট ছাড়া ভর্তি হওয়া যাবে না। আর তাই ৫৭ বছর বয়সে আবার পড়ার টেবিলে ফেরেন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস ছামাদ।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিবারের সহযোগিতায় কী না হয়! তার প্রমাণ ৫৭ বছর বয়সে সাফল্যের সঙ্গে আব্দুস ছামাদের এসএসসি পাশ। জানান, হোমিওপ্যাথিতে এবার চার বছরের ডিপ্লোমা নিয়ে গ্রামে ফিরে অসহায় মানুষের চিকিৎসায় নিয়োজিত করবেন বাকি জীবন।

গতকাল রোববার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। বগুড়ার ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আব্দুস ছামাদ নাটোরের লালপুর উপজেলার মহর কয়া নতুনপাড়া কারিগরি ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তার এই সাফল্যে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

১৯৬৮ সালে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আশরাফপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুস ছামাদ। পরে ১৯৮৭ সালে অষ্টম শ্রেণি পাশের পর বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগ দেন। আব্দুস ছামাদ এখন  বগুড়া ট্রাফিকে কর্মরত।

আব্দুস ছামাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারাদিন ডিউটি করে গভীর রাতে পড়াশোনা করেছি। এই কাজে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন আমার স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং ছেলে শিহাব আহমেদ (২০)।

দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা আব্দুস ছামাদ শুধু এসএসসি পাশ করেই থামতে চান না। আরও পড়াশোনা করতে চান। ভর্তি হতে চান বগুড়া হোমিপ্যাথি মেডিকেল কলেজে। হতে চান একজন প্রশিক্ষিত ডাক্তার।

'আমার চাকরির মেয়াদ আছে আর দুই বছর ১০ মাস। এর পরে আমি অবসরে যাব। তখন আমার হাতে অনেক অবসর থাকবে। সেই সময়ে গ্রামে গিয়ে গরিব-দুঃখী মানুষকে যাতে চিকিৎসা দিতে পারি সেই জন্য আমি এই ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিতে চাই,' বলেন আব্দুস ছামাদ।

আবার পড়াশোনা কেন শুরু করলেন জানতে চাইলে আব্দুস ছামাদ বলেন, 'চাকরি শেষে আমার হাতে অনেক সময় থাকবে। সেই সময় আমি কী করব? সেই জন্য হোমিওপ্যাথি ডাক্তার হতে চাইলাম। কিন্তু ভর্তি হতে গিয়ে শুনি এসএসসির সার্টিফিকেট ছাড়া হোমিওপ্যাথিতে ডিপ্লোমা করা যায় না। সেই কারণেই আবার পড়াশোনা শুরু করি।'

'ছোটবেলায় পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেই পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম,' বলেন ছামাদ।

হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলে ক্লাস করতে হবে, চাকরিতে থাকাকালীন কীভাবে ক্লাস করবেন জানতে চাইলে আব্দুস ছামাদ বলেন, মাত্র আর দুই বছর চাকরি আছে। দরকার হলে একটু আগেই অবসরে যাব।

তবে বগুড়া ট্রাফিক বলছে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সহায়তা করেবে ডিপার্টমেন্ট। বগুড়া ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন বলেন, ট্রাফিক পুলিশের কাজ দুই শিফট অনুযায়ী হয়। তারপরেও আব্দুস ছামাদ যাতে ক্লাস করতে পারেন সেই জন্য তাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে সহযোগিতা করা হবে।

আব্দুস ছামাদের এই সাফল্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে তাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। পরে তাকে অনুষ্ঠানিভাবে সম্মানিত করা হবে হবে জানিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

দ্য ডেইলি স্টারকে এসপি সুদীপ কুমার বলেন, 'চারিদিকে এত নেতিবাচক সংবাদের ভীড়ে আব্দুস ছামাদের এই অসামান্য প্রচেষ্টা আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করে।'

'৫৭ বছর বয়সে তিনি যা করেছেন তা পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য একটা উদাহরণ তৈরি করল। শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যে সব করা সম্ভব সেটিই প্রমাণ করেছেন আব্দুস ছামাদ। আমরা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দেব,' যোগ করেন এই পুলিশ সুপার।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago