বজ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যু

বজ্রপাত
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মূলত আবহাওয়ার ধরণে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাত বেড়েছে।

পিয়ার-রিভিউ জার্নাল হেলিয়ন এ প্রকাশিত গবেষণা 'বাংলাদেশে বজ্রপাত পরিস্থিতির ওপর জিআইএস-ভিত্তিক স্থানিক বিশ্লেষণ' এ বলা হয়েছে, বেশিরভাগ প্রাণহানিবর্ষা পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষা ঋতুতে ঘটে, যার মধ্যে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।

এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে আবহাওয়ার ধরণ ও বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটছে। এ কারণেই বজ্রপাত বাড়ছে।

মার্চ মাসে প্রকাশিত এ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতের ফলে ২ হাজার ১৪২ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৫৩৮ জন। 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে ৩০০ মানুষ মারা যায়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতের কারণে বছরে ২০ জনেরও কম মৃত্যু ঘটে।

বাংলাদেশ ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত বজ্রপাতে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১০ সালে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১২৩ জন। গত বছর বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩৫০ জন।

জিআইএস-ভিত্তিক স্থানিক বিশ্লেষণের লেখকদের একজন মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, 'বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আবহাওয়ার ধরণ ও বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো চরম জলবায়ু ঘটনা ঘটেছে। এ কারণেই আমরা বজ্রপাতের প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি।' 

গবেষণায় ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বজ্রপাত সংক্রান্ত ঘটনা মূল্যায়নের জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নিয়ার-রিয়েল টাইম মিশন থেকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড এবং নাসার লাইটনিং ইমেজিং সেন্সর ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে।

বর্ষা পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষা ঋতুতে তীব্র সৌর বিকিরণ থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন বজ্রপাত হয়ে থাকে। এই সময়ই মেঘ থেকে মাটিতে বজ্রপাতের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয়। অন্যদিকে সময়টি চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় কৃষক ও জেলেরা বজ্রপাতের হতাহতের বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি অপর্যাপ্ত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা এবং বড় গাছের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন।

দুর্যোগ ফোরামের সদস্য নাঈম ওয়ারা বলেন, 'স্থানীয় সতর্কীকরণ ব্যবস্থা বাড়ানো উচিত এবং বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় বজ্রপাত প্রতিরোধক স্থাপন করা উচিত। আমরা যদি মানুষকে সচেতন করতে পারি, তাহলে এই মৃত্যু রোধ করা যাবে।'

বজ্রপাতে প্রায়ই পরিবারের সবচেয়ে সক্রিয় ব্যক্তি বা উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা যায়। বড় গাছ না কাটতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাইম ওয়ারা বলেন, 'বজ্রপাতের সময় বড় গাছে জীবন বাঁচাতে পারে।'

সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা করে এবং রাস্তার পাশে প্রায় ৫ মিলিয়ন পাম গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পটি এখনও প্রত্যাশিত ফলাফল দেয়নি কারণ যে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল সেগুলো বড় হতে অনেক সময় নেয়।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'যেসব খোলা মাঠে গাছ কম সেখানে লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপনের অনুমোদনের জন্য আমরা পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।' 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, 'আগাম সতর্কবার্তা পাঠাতে আটটি বজ্রপ্রবণ জেলায় বজ্রপাত শনাক্তকরণ সেন্সর স্থাপন করেছে।

আমরা বজ্রপাত শুরু হওয়ার ৩০ মিনিট আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বার্তা পাঠাই। আমরা একটি পাইলট প্রকল্পও চালাচ্ছি যাতে নির্দিষ্ট এলাকায় উপস্থিত লোকজনকে বার্তা পাঠানো যায়।'

Comments

The Daily Star  | English

July 5, 2024: Nationwide protests persist despite holiday

Even on a holiday, the quota reform protests show no sign of slowing. Students across Bangladesh take to the streets, block roads, form human chains, and voice their rejection of the reinstated quota system in government jobs.

7h ago