বন্দর নগরীতে খোলা ডাস্টবিনে জনদুর্ভোগ

ছবি: স্টার

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা।

গত রোববার স্কুল থেকে রিকশায় করে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার পাশের খোলা ডাস্টবিনের কারণে বিড়ম্বনায় পড়ে কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী তৃষা বিশ্বাস ও সালমা আক্তার।

তারা জানায়, রিকশাটি নবপণ্ডিত বিহার এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় ২০ গজ সামনে ছোট যানজটে আটকে যায়। প্রায় এক মিনিটের জন্য রিকশাটি যানজটে আটকে ছিল কিন্তু রাস্তার পাশের খোলা ডাস্টবিন থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে তাদের দুজনেরই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। এছাড়া, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) এর পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রাস্তায় রাখা ডাস্টবিন থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার সময় বর্জ্য থেকে আসা নোংরা তরলের ছিটা তাদের পোশাকে এসে পড়ে।

সালমা জানায়, 'স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত এই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।'

একই এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা সুস্মিতা বসাক ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, 'কোনো সভ্য দেশে ব্যস্ত একটি রাস্তার ওপর ডাস্টবিন রাখা যায় না। জনসাধারণের দুর্ভোগ নিরসনের পরিবর্তে চসিক এর পরিচ্ছন্নতা বিভাগ জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়াচ্ছে।'

একই অবস্থা দেখা গেছে চট্টেশ্বরী রোড এলাকায়। সড়কের আলমাস সিনেমা হলের সামনে রাখা খোলা ডাস্টবিন থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধে কয়েক বছর ধরে পথচারী এবং আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা দুর্ভোগের শিকার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন।

শুধু এই দুই এলাকা নয়, বন্দরনগরীর আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় সড়কের ওপর খোলা ডাস্টবিনের কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। অথচ, ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে নগরী থেকে সমস্ত ডাস্টবিন অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কর্তৃপক্ষ।

একটি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলারর লক্ষ্যে, চসিক ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী তারিখে ঘরে ঘরে বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। এই লক্ষ্যে, সংস্থাটি নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বাসাবাড়ি, দোকান, হাট-বাজার, ব্যবসা এবং অন্যান্য স্থাপনায় প্রায় নয় লাখ বিনও সরবরাহ করেছে।

২০২২ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩ হাজার টন মানবসৃষ্ট বর্জ্য উত্পাদন হয়।

চসিক পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি চসিক নগরীতে ডাস্টবিন অপসারণ কার্যক্রম শুরু করার আগ পর্যন্ত নগরীতে মোট ১,৩৫০ টি খোলা ডাস্টবিন এবং ৯৬টি কন্টেইনার ডাস্টবিন ছিল। তবে এই উদ্যোগের সাত বছর পরেও এখনও রাস্তায় অনেক ডাস্টবিন রয়ে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী বলেন, 'চসিক নগরীর প্রায় সব খোলা ডাস্টবিন সরিয়ে নিয়েছে এবং কন্টেইনার ডাস্টবিনগুলো সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) হিসাবে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন রাস্তায় স্থাপন করা হয়েছে। অনেক বাসিন্দা সেই ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলেন যদিও চসিক এর পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ঘরে ঘরে যান।'

চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ঘরে ঘরে বর্জ্য সংগ্রহ করে এবং এসটিএস-এ স্থানান্তর করে উল্লেখ করে তিনি জানান, চসিকের ডাম্প ট্রাকগুলি এসটিএস থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিলে ডাম্প করার জন্য।

জানতে চাইলে চুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ডঃ স্বপন কুমার পালিত বলেন, 'জনউপদ্রব এড়াতে ব্যস্ত রাস্তা এবং জনবসতি থেকে এসটিএসগুলিকে স্থানান্তরিত করা উচিত। এসটিএসগুলিকে স্থানান্তর করার জন্য ব্যস্ত সড়ক ও জনবসতি এলাকার বাইরে কিছু জায়গা খুঁজে বের করা উচিত বা বিকল্প উপায়ে বর্জ্য সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা উচিত।'

এক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন একটি বিকল্প হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

ব্যস্ত সড়কে কেন এসটিএস রাখা হয়েছে জানতে চাইলে কমান্ডার কাজমী বলেন, 'বর্তমানে এর কোনো বিকল্প নেই। চসিক এর কাছে এসটিএস স্থাপনের জন্য কোনো জমি নেই এবং তাই আমরা এসটিএস স্থাপনের জন্য রেলওয়ের কাছে জমি চেয়েছি... রেলের কাছ থেকে জমি পেতে একটু সময় লাগবে।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago