‘এমন তাপ জীবনে দেখিনি’

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের একটি পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গরমে অতিষ্ঠ দুরন্ত শিশুর দল। ছবি: স্টার

এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত তাপদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও যশোর অঞ্চলের মানুষের জীবন। তীব্র তাপদাহ রূপ নিয়েছে অতি তীব্র তাপদাহে। তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪২ ডিগ্রির ঘরে।

আজ রোববার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চু্য়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস। 

সকাল থেকেই সূর্যের চোখ রাঙানিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দুই জেলার জনপদ। দিনের মতোই থাকছে রাতের তাপমাত্রা। অতি তীব্র তাপদাহে শান্তি নেই কোথাও। গরমে একটু স্বস্তি পেতে কেউ কেউ আশ্রয় নিচ্ছেন গাছের ছায়ায়, আবার কেউ কেউ পুকুর ও সেচ পাম্পে গোসল করছেন।
 
চু্য়াডাঙ্গা শহরের নির্মাণ শ্রমিক রকিব আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত দুই দিন থেকে অসহ্য তাপ পড়েছে। এমন তাপ জীবনে দেখিনি। এই রোদে দাঁড়িয়ে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে একটু কাজ করছি আর একটু ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছি।'
 
অতি তীব্র তাপদাহে করণীয় বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা।

সভায় সরকারি নির্দেশনা মেনে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এ সময়ে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখা, জেলায় এক লাখ গাছের চারা রোপণ এবং জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

এ ছাড়া, তীব্র তাপদাহে জনসাধারণকে সচেতন করতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। 

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলমান অতি তীব্র তাপদাহ কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।'

তীব্র তাপদাহ ও লু হাওয়ায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে যশোরাঞ্চলেও। থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। প্রচণ্ড গরমে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। প্রখর রোদ ও তীব্র তাপদাহে রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি কম। 

যশোরে শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১০ বছরের এটিই ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ৩-৪ দিনেও তাপদাহ পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছে যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটিস্থ আবহাওয়া অফিস। 

যশোর আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৫ শতাংশ। এর আগের দিন ১৯ এপ্রিল তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮ এপ্রিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক শূন্য ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৭ এপ্রিল ছিল ৪০ দশমিক শূন্য ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৬ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তর এক ব্রিফিংয়ে জানায়, ভারতের মহারাষ্ট্র ,উড়িষ্যা, ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের উত্তপ্ত বাতাস সাতক্ষীরা জেলা দিয়ে প্রবেশ করে যশোর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব জেলার আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে। যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে কোনো জলাধার নেই। ছোটখাটো নদ-নদী দু-একটি যা আছে, তা শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে পানির স্তর নীচে নেমে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে। 

গত সপ্তাহ ধরে যশোরে প্রখর রোদ ও তাপপ্রবাহ চরম আকার ধারণ করেছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ। 

যশোর শহরের রিকশাচালক আমিনুর রহমান জানান, গত কয়দিনের তাপপ্রবাহে রিকশায় কোনো যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শহরের ছায়াযুক্ত স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে।
  
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হোসনে আরা বেগম ডেইলি স্টারকে জানান, তাপপ্রবাহে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে যশোর জেনারেল হাসপাতালে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাঁচ শয্যার বিপরীতে শনিবার বিকেল পর্যন্ত অনেক রোগী ভর্তি হয়েছেন। ডায়রিয়া রোগীদের বেশীরভাগই শিশু। শুক্রবার এ ওয়ার্ডে মোট ২৫ জন রোগী ভর্তি ছিল। বৃহস্পতিবার ছিল ১১ জন। 

জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিচিত্র কুমার মল্লিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলমান তাপপ্রবাহের কারণে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদের মধ্যে বাইরে বের না হওয়াই ভালো। এই গরমে হাসপাতালে ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথার রোগীর ভর্তিও সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।'

যশোর মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক আলাউদ্দিন আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতিরিক্ত তাপে ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, হিট স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি হতে পারে। সুস্থ থাকতে ডিপ ফ্রিজের পানি পান করা যাবে না। প্রচুর পানি, ডাবের পানি ও দেশি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন।'
 
যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর গত ১৬ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফায় যশোর ও চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলায় হিট এলার্ট জারি করেছে। প্রখর রোদ ও তাপদাহে মানুষকে সতর্ক করতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Admin officers protest plan for more non-admin deputy secretaries

Non-admin officers announce strike tomorrow, demanding exam-based promotions

1h ago