‘এই গরমে ঠান্ডা পানি খাওয়া একেবারেই উচিত না’

তাপদাহে কাহিল ঢাকার এক রিকশাচালক। স্টার ফাইল ফটো | ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

বৈশাখের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের জনজীবন। থার্মোমিটারের পারদ চড়ছে প্রতিদিনই। প্রচণ্ড গরমে মানুষের দুর্ভোগের সঙ্গে হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

এদিকে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রখর রোদে পথ-ঘাট সব কিছুই উত্তপ্ত। এ পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার পরবর্তী তিন দিনের জন্য দেশে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে। এর মধ্যে ঈদের ছুটির পর রোববার থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাচ্ছে।

এমন বৈরী পরিবেশে প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয় মানুষ। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান কেউ কেউ। অধিক তাপমাত্রা জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ওপর প্রভাব বেশি পড়ে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

হিটস্ট্রোকের লক্ষণ

হিটস্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলো নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, 'প্রচণ্ড গরমে যখন শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, শরীর থেকে পানি, তরল পদার্থ ও লবনও বেরিয়ে যায়, তখন আমাদের শরীরের রক্তের চাপ কমে যায়। সেইসঙ্গে নাড়ির গতি বেড়ে যায়। শরীর অবসন্ন লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। এ কারণে বমি-বমি ভাব লাগে ও বমিও হতে পারে। অনেকে চোখে আবছা দেখে। মাথা ঘুরতে থাকে। কেউ কেউ অসংলগ্ন কথা-বার্তাও বলে। এগুলো হচ্ছে হিটস্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ।'

এই চিকিৎসকের ভাষ্য, 'হিট স্ট্রোক হলে কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন। জ্ঞান হারালে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।'

প্রতিরোধে করণীয়

লেলিন চৌধুরীর পরামর্শ,  'এই গরমের মধ্যে যারা বাইরে বের হবেন, তারা যদি সঙ্গে একটু খাবার পানি রাখেন এবং যাদের রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকার বাধ্যবাধকতা আছে, তারা যদি ওরস্যালাইন নিয়ে বের হন তাহলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে একটু পর পর তারা পানি ও ওরস্যালাইন খাবেন এবং প্রস্রাবের রঙ ও পরিমাণের দিকে লক্ষ্য রাখবেন। প্রস্রাবের রঙ বদলের পাশাপাশি পরিমাণ কমে গেলে পানিসহ তরলজাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।'

এছাড়া তাপপ্রবাহের সময়টাতে টাইট জামাকাপড় না পরে ঢিলেঢালা সুতি জামাকাপড় পরার পরামর্শও দেন ডা. লেলিন। বলেন, 'এ সময় ছাতা নিয়ে বের হলে ভালো হয়। আর যারা শ্রমজীবী, টানা রোদের মধ্যে কাজ করেন তাদের কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রামের সঙ্গে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। তবে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় যে শরবত, পানি বিক্রি হয় তা খাওয়া যাবে না। কারণ এই সরবৎ যে পানি কিংবা বরফ দিয়ে বানানো হয় সেটা কোনোমতেই সুপেয় না।'

এর বাইরে বয়স্ক মানুষ, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগতে থাকা সংবেদনশীল মানুষদের নিতান্তই প্রয়োজন না পড়লে বাইরে বের না হওয়া ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে দেশজুড়ে চলা তাপদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এমন পরিস্থিতিতে 'প্রাক-প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো পরিস্থিতিতে বন্ধ ঘোষণা করা উচিত' বলে মনে করেন লেলিন চৌধুরী।

ঠান্ডা পানি খাওয়া একেবারেই উচিত না

লেলিন চৌধুরী বলেন, গরমের ভেতর তৃষ্ণা নিবারণে ঠান্ডা পানি খাওয়া একেবারেই উচিত না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'আমাদের গলায় শ্বাসনালির উপরের অংশে কিছু সুবিধাবাদী জীবাণু বাস করে। সুবিধাজনক অবস্থা পেলেই এরা আক্রমণ করে। যখন চারপাশে গরম তখন হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি গলায় গেলে গলার তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। এই জীবাণুগুলো তখন সক্রিয় হয়ে ওঠে।'

এর মধ্যে শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

14h ago