ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস কেন ‘খ’ শ্রেণিতে

ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ছবি: বাসস

আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। এ দিনটিতে দেশের একটি উপজেলায় ছুটি থাকে। এবারও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৭ এপ্রিল শুধু মুজিবনগরে ছুটি ঘোষণা করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, মুজিবনগর দিবসের গুরুত্বের সীমানা কি শুধু একটি উপজেলায় আবদ্ধ? মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ঘোষিত জাতীয় দিবসগুলোর তালিকাতেও দিনটিকে অবহেলা করা হয়েছে কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে। মুজিবনগর দিবসের স্থান জাতীয় দিবসগুলোর 'ক' শ্রেণির মর্যাদায় হয়নি, হয়েছে 'খ' শ্রেণিতে।

বাংলাদেশ সৃষ্টির নেপথ্যে যে কয়টি গর্বের দিবস আছে তার মধ্যে ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস অন্যতম। এই দিনে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করে শপথ নিয়েছিল। এ সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বহুমুখী সমন্বয়ের সফল কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকলেও তিনিই ছিলেন সেই সরকারের রাষ্ট্রপতি, অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় শপথ নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জায়গাটির নামকরণ করেছিলেন মুজিবনগর, এটি বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী।

দিবস মানেই ছুটি দিতে হবে, এমন ধারণা হয়ত সঠিক নয়। কারণ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ এবং এর আগের ২৩ বছর পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন জমা হয়েছে। এসব দিনে যদি সবাই ছুটির চিন্তা করেন সেটা যৌক্তিক হবে না। দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার উদ্যোগ নিলে ছুটির প্রয়োজনও হয় না। তবে ১৭ এপ্রিলের মতো ঐতিহাসিক দিনকে কেন্দ্র করে ছুটির কথা চিন্তা করলে সেটা জাতীয়ভাবে হওয়ার দাবি রাখে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। তবে শুধু মুজিবনগরের জন্য ছুটি ঘোষণার উদ্যোগ কি দিবসটির গুরুত্ব বিবেচনায় যথাযথ সম্মান দেখানো হয়?

যে রাজনৈতিক দলটির নেতৃত্বে মুজিবনগর ইতিহাসের অংশ হয়েছে, সেই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। তারপরও মুজিবনগর দিবসের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন?

১৭ এপ্রিল যারা সরকার গঠন করেছিলেন তাদেরকে সুরক্ষিত জেলখানায় হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। নৃশংস ঐতিহাসিক জেলহত্যার দিনটি বাংলাদেশের জাতীয় দিবসে এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ক, খ, গ, এই ক্যাটাগরিতে যেসব দিবসকে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সেখানে অনেক ব্যক্তির নাম থাকলেও নাম নেই তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামদের।

১৭ এপ্রিল, ৩ নভেম্বরের মতো দিবসগুলোকে যথাযথ সম্মানের দাবিতে গত কয়েক বছর যাবত মানববন্ধন করছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।

মুজিবনগর তথা প্রথম সরকারের প্রতি অবহেলার আরও কিছু চিত্র দেখা যায়। উপজেলাটির ওয়েবসাইটে যা রয়েছে তা রীতিমতো ভিমরি খাওয়ার মতো। 'মুজিবনগর উপজেলার মৌলিক তথ্য' অংশে বলা হয়েছে উপজেলাটির 'নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা নেই'। কী বিষ্ময়কর কথা! উপজেলার নামকরণ জাতির পিতার নামে, তা 'জানা নেই'। নামকরণ কীভাবে হয়েছে সেটা জেলা, উপজেলা প্রশাসন জানে না? ওয়েবসাইট যারা তদারকি করেন তারা জানেন না?

সেই ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে 'অস্থায়ী সরকার' উল্লেখ করা হয়েছে। সঠিক ইতিহাস 'প্রথম সরকার'।

রাজনীতিতে বিরোধীদের দিকে ইতিহাস বিকৃতির আঙ্গুল সহজেই তোলা যায়। কিন্তু সরকারি দলিলে তথ্য বিকৃতি থাকলে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ইউনিটগুলোর এই দায় কে বহন করবে?

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে প্রথম মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার শত্রুমুক্ত করার জন্য। আর তাদের সেই উজ্জ্বলতম ঐতিহাসিক ক্ষণটিকে মুজিবনগরের ১১২ দশমিক ৬৮ বর্গকিলোমিটারের ছুটিতে আবদ্ধ রাখা কতটা সঠিক?

লেখক: সংবাদকর্মী

Comments

The Daily Star  | English

Time to build the country after overcoming dictatorship: Tarique

Highlights need to build skilled generations across all sectors

2h ago