তারকাদের ঈদের সালামি

কেমন ছিল গুণী শিল্পীদের ঈদ সালামি? কী করতেন তারা সালামির টাকা দিয়ে? সেইসব কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

ঈদি কিংবা ঈদের সালামির প্রচলন শুরু হয়েছে অনেক বছর আগে। এই সময়ে এসে সালামি আরও বেড়েছে। সিনিয়র কয়েকজন অভিনেতা ও সংগীত তারকা কথা বলেছেন ঈদের সালামি নিয়ে। তারা অনেকটাই ফিরে গেছেন ছেলেবেলায়। কেমন ছিল গুণী শিল্পীদের ঈদ সালামি? কী করতেন তারা সালামির টাকা দিয়ে? সেইসব কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

আবুল হায়াত: ঈদের সালামির কথা আজও মনে আছে। ভুলিনি সেসব মধুর স্মৃতির কথা। বয়স বাড়ছে, অনেক কিছুই হয়ত মন থেকে মুছে গেছে, কিন্তু ঈদের সালামির কথা মনে গেঁথে আছে। ঈদের সময় সালামি পেতাম। বাবা-মা তো দিতেনই, আত্নীয়রাও দিতেন। ঈদের সময় বড়লোক আত্নীয় যারা বাসায় আসতেন, তারা দিতেন। বাবা মাটির ব্যাংক কিনে দিয়েছিলেন। সালামি জমিয়ে রাখতাম কখনো কখনো। আবার খবরচও করতাম। বাবা বলতেন, টাকা জমাও কাজে দেবে। তাই করতাম। মাটির ব্যাংক ভেঙে ফেললে বাবা আবার কিনে দিতেন। ঈদের সময় সালামি পেলে ভালো লাগত। প্রতিটি ঈদে এই কালচার চালু ছিল। এখন তো সালামি দিতে হয়। নাতি-নাতনি আছে তাদের দিতে হয়। দেওয়ার মধ্যেও আনন্দ আছে। মনে পড়ে, একবার সালামি জমিয়ে এয়ারগান কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্ত মাটির ব্যাংক ভেঙে দেখে ৩০ জমেছে। কিন্তু এয়ারগান কিনতে লাগবে সেই সময় ৪৫ টাকা। তারপর বাবা-মা বাকি টাকাটা দিলেন, আমি সালামির টাকা দিয়ে এয়ারগান কিনলাম।

ডলি জহুর: ঈদ এলেই সালামির কথা মনে পড়ে। আজকালকার ছেলে-মেয়েদের কাছে সালামিটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। আমাদের সময় তা ছিল না। কিন্তু, সালামি ছিল। আমরা পেতাম। বাবার কাছ থেকে বেশি পেতাম। সর্বোচ্চ দশ টাকা সালামি পেতাম সেইসময়ে। সেটা বাবার কাছ থেকে। অন্যদের কাছ থেকে এক টাকা পেতাম। আরও কমও পেতাম। সালামির টাকা জমিয়ে দোকান থেকে এটা-সেটা কিনে খেতাম। বান্ধবীরা মিলে এই কাজটি করতাম। এখন মনে পড়লে হাসি পায়। মাঝে মাঝে ভাবি-কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলি। চাইলেও আর ফিরে পাব না সেইসব দিন। এখন তো সালামি দিই। এটা দিতে পারাটাও আমার জন্য আনন্দের।

খুরশীদ আলম: আমার ছেলেবেলা কেটেছে পুরোনো ঢাকায়, নাজিরাবাজারে। ৫০ ও ৬০ এর দশকের কথা খুব মনে পড়ে। সেই সময় ঈদের সালামি পেতাম খুব অল্প। কখনো এক আনা, কখনো দুই আনা পেতাম। খুব বেশি হলে ৫০ পয়সা। তা-ও আবার পরিবারের সদস্য ছাড়াও অন্যরাও দিতেন। এতটাই আন্তরিক ছিলেন তখনকার মানুষ। ঈদের সালামি পাবার পর একসাথে সবাই নামাজ পড়তে যেতাম। বাসায় মজাদার রান্না হত। আরেকটি মজার বিষয় ছিল, ঈদের দিন মেলা হত। বর্তমানে আজিমপুর কবরস্থানের কাছাকাছি বড় মাঠ ছিল, ওখানে মেলা হত। ঈদের সালামি নিয়ে ওই মেলায় যেতাম। কুলফি আইসক্রিম পাওয়া যেত। সেটা খেতাম। সেসময় পাকিস্তানি ও ভারতীয় সিনেমা  প্রেক্ষাগৃহে চলত। বড়রা যেতে পারত, আমরা ছোটরা পারতাম না। আমাদের জন্য ছিল খেলাধূলা। ঈদের সালামির টাকায় মজাদার খাবার খেয়ে ফুটবল খেলতে যেতাম। আমাদের সময়ে মানুষের মাঝে আন্তরিকার অভাব ছিল না।

সোহেল রানা: আব্বা সরকারি চাকরি করতেন। দেশের নানা জায়গায় বদলি হয়ে যেতেন। আমাদের ঈদও দেশের নানা জেলায় কেটেছে। সেই সময় ঈদের দিন মানেই আব্বার কাছ থেকে সালামি পেতাম। বেশ ভালোই সালামি পেতাম। তখনকার দিনে ঈদের সময় পাওয়া নতুন জামাকাপড়ও পেতাম। সেটাও একপ্রকার সালামি মনে হত। সালামির টাকার প্রতি কারো দাবি ছিল না। ওটা আমার ছিল। যা খুশি তাই করা যেত সেটা দিয়ে। একটা স্বাধীনতা ছিল। তবে, সেই টাকা জমিয়ে না রেখে খরচ করতাম। বেশিরভাগ সময় বন্ধুদের নিয়ে খেয়ে ফেলতাম। এটার মধ্যে আনন্দটা বেশি কাজ করত। এই সময়ে এসে সেই আনন্দ আর পাই না। এখন দায়িত্বটা বেশি। তারপরও পেছনে ফিরে তাকালে ছেলেবেলার ঈদের সময়টাকে বেশি মনে পড়ে। সালামির কথাও মনে পড়ে।

রফিকুল আলম: ঈদের সালামি হিসেবে রূপার টাকা পেতাম। রূপার টাকা পাবার কথা আজও ভুলিনি। আব্বা-আম্মা দিতেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে-চাচারাও ঈদের সালামি দিতেন। তা ছাড়া কয়েকজন চাচাত ভাই ছিলেন, তারা বেশ সিনিয়র ছিলেন। তারাও প্রতিটি ঈদে সালামি দিতেন। ঈদের দিন সালামি পাওয়া ছিল মহা আনন্দের। বছরের দুটো ঈদেই এটা পেতাম। সালামির টাকা কখনো জমিয়ে রাখতাম না। এটা দিয়ে মিষ্টির দোকানে যেতাম এবং পেটভরে মিষ্টি খেতাম। এই বয়সে এসে সালামি দিতে হয়। সালামি দেওয়াটাও আমার কাছে আনন্দের। মনে শান্তি পাই দিতে পেরে।

ফজলুর রহমান বাবু: ঈদের সালামির বিষয়টি আমার পরিবারে অল্প ছিল। বাবা মা ছাড়া কেউ দিতেন না। তখন তো মানুষের অতটা দেবার অবস্থা ছিল না। সেজন্য বাবা-মা ছাড়া কারও কাছে ঈদের সালামি আশাও করতাম না। বড়জোর এক টাকা পেতাম বাবার কাছ থেকে। সেই এক টাকা যে কতটা বিশাল টাকা মনে হত! এখন কোটি টাকা দিয়েও তা পূরণ করা সম্ভব না। তখন সত্যিকারের আনন্দ ছিল। মানুষের ভেতরে সত্যিকারের মানুষটা ছিল। ঈদ এলে নতুন জামার অপেক্ষা যেমন করতাম, সালামির জন্যও প্রহর গুনতাম। জানতাম সালামি বেশি পাব না। তারপরও তো পেতাম যা পেতাম তা ছিল অনেক মূল্যবান। সালামির টাকা দিয়ে বন্বুরা মিলে কত কী কিনে খেতাম। মাঝে মাঝে ভাবি, কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিন। এখন তো সালামি দিতে হয়। এখন সালামি দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। সন্তানদের ছাড়াও বাড়ির ছোট ছোট সবাইকে এটা দিতে হয়। ছোটরাও খুশি হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshi students terrified over attack on foreigners in Kyrgyzstan

Mobs attacked medical students, including Bangladeshis and Indians, in Kyrgyzstani capital Bishkek on Friday and now they are staying indoors fearing further attacks

3h ago