মহাসড়কে যানজট ও বাড়তি ভাড়ায় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ
সাভারে মহাসড়কগুলোতে আজ সোমবার ঘরমুখো মানুষের চাপ আরও বেড়েছে। কোথাও কোথাও দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড ও বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে উত্তরবঙ্গমুখী হাজার হাজার মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যানবাহনের জন্য।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। বিকেল ৫টার পর সাভারের উলাইল এলাকা থেকে রেডিও কলোনি এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার মহাসড়কের সার্ভিসলেনে যানজটের সৃষ্টি হয়।
অপরদিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
আজ বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর জিরানী বাজার বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে এসব স্থান। বিশেষ করে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে ঢল নেমেছে ঘরে ফেরা মানুষের। একদিনেই বেশিরভাগ পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় সড়ক-মহাসড়কে যাত্রী ও পরিবহনের চাপ বেড়ে বলে মনে করছে পুলিশ।
সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে লালমনিরহাটগামী বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, 'বাসের টিকিট পাইনি। লোকাল বাসে ভেঙে-ভেঙে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছি। বাস ঢাকা থেকেই বোঝাই হয়ে আসছে।'
গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা পোশাক শ্রমিক রোজিনা আক্তার বলেন, 'একসঙ্গে এত যাত্রী কোথা থেকে আসল বুঝলাম না। যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গাড়ি পাড় হতেই পারছে না। কীভাবে বাড়িতে যাব বুঝতেই পারছি না।'
আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকায় যানজটে দাড়িয়ে থাকা টাঙ্গাইলগামী বাসের চালক রহমত মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত মানুষ আজ থেকে বাড়িতে যাওয়া শুরু করেছে। এ কারণে সড়কে যাত্রী ও যানবাহন বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগলে বাইপাইল থেকে আধা কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডেও যানজট পোহাতে হয়েছে।'
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ বেশিরভাগ পোশাক কারখানা ছুটি হয়েছে। যে কারণে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। যানজটের সৃষ্টি হয়নি। কোথাও কোথাও যানবাহন ধীরগতিতে চলছে।'
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, 'পোশাক কারখানা একসঙ্গে অনেক ছুটি হওয়ায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এখানে আমাদের প্রায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ কাজ করছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন।'
ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ
শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ার বেশিরভাগ পোশাক কারখানা ঈদুল ফিতরের ছুটি ঘোষণা করায় যাত্রীর চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে মহাসড়ক ও বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে। এই সুযোগে উত্তরের সব জেলার ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
রংপুরগামী যাত্রী জয়নাল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে অভিযোগ করে বলেন, 'দুপুরে পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ার পর বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে এসেছি। বাসস্ট্যান্ডে এসে লোকাল বাসের ভাড়া জানতে চাইলে ভাড়া চাচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার। পুলিশ যে ভাড়া তালিকা টানিয়েছে, সে হিসেবে ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি। সবশেষে ১ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া মিটিয়ে গাড়িতে উঠেছি।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসের চালক ও সহকারীরা ভাড়া বেশি নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
তারা বলেন, 'আমরা আজ আর কালই কয়েকটা টাকা আয় করব। দুই দিন ঈদ বোনাস নিচ্ছি যাত্রীদের কাছে। আমরা তো বছর জুড়ে যাত্রীদেরই সেবা করি। ঈদ বোনাস তো আমাদের প্রাপ্য। আমরা যা নিচ্ছি তাতে যাত্রীদের কোনো অভিযোগ নেই।'
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, 'যেখানে যা অভিযোগ আসছে আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ছাড়া সড়কে আমাদের ভ্রামম্যাণ আদালত রেখেছি।'
Comments