পানি সংকটের মধ্যেই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব চট্টগ্রাম ওয়াসার

চট্টগ্রাম ওয়াসা। ছবি: সংগৃহীত

উৎপাদন খরচ ও বিদ্যমান পানির মূল্যের মধ্যে সমন্বয়ের নামে পানির দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে চট্টগ্রাম পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (চট্টগ্রাম ওয়াসা)।

নগরীর পতেঙ্গা, ইপিজেড, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষ যখন পানির তীব্র সংকটে নাকাল, তখন রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি লোকসান কমানোর নামে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলে ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন।

নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ওয়াসা আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম বিদ্যমান ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৯ টাকা করতে চাচ্ছে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক সংযোগে ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

গত ১৪ মার্চ ওয়াসার বোর্ড সভায় সংস্থাটির বাণিজ্যিক বিভাগ এই প্রস্তাব উপস্থাপন করে। পরে নতুন দাম যাচাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বোর্ড।

পানি সংকট নিরসন না করে কেন দাম বাড়াতে চাচ্ছেন, জানতে চাইলে ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কাজী শহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে আমরা আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিটে পানিতে ১১ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের বাঁচতে হবে, তাই আমরা পানির শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।'

উল্লেখ্য, হালদা নদীতে লবণ পানি প্রবেশের কারণে ওয়াসার উৎপাদন কমে গেছে। এতে বন্দরনগরীর দক্ষিণাংশে রেশনিং করে পানি সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে সরকারি সংস্থাটি।

সিইপিজেড এলাকার আকমল আলী রোডের বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে তারা সপ্তাহে মাত্র দু-তিন দিন পানি পাচ্ছেন। 

ওই এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিয়মিত ওয়াসার পানি না পাওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।'

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ওয়াসা সাধারণত প্রতিবছর জানুয়ারিতে পানির শুল্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঁচ শতাংশ বাড়ায়।

এদিকে সংস্থাটির কয়েকজন বোর্ড সদস্য পানির দাম বাড়ানোর বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

বোর্ডের সদস্য জাফর সাদেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষ প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই তাদের (ওয়াসা) বলেছি, পানির দাম বাড়ানোর এখন সঠিক সময় নয়।'

তিনি বলেন, 'সিস্টেম লস কমিয়ে ভর্তুকি কমানোর জন্য আমরা ওয়াসার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছি।'

বাংলাদেশের কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এসএম নাজার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রাম ওয়াসা উৎপাদনের খরচের মিথ্যা একটি হিসেব দেন যেটির কোনো ভিত্তি নেই। অথচ, ভুতুড়ে বিল ও  সিস্টেম লস বন্ধ করার জন্য আমরা বারবার এই সংস্থাকে পরামর্শ দিয়েছি, যার মাধ্যমে তাদের লোকসান কমানো সম্ভব।'

'কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা সবসময় পানির দাম বাড়িয়ে নগরবাসীর পকেট কেটে লোকসান মোকাবিলা করার চেষ্টা করে,' যোগ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম ওয়াসার দাবি, তারা প্রতিদিন প্রায় ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করে। তাদের ৮২ হাজার ৬৪২টি আবাসিক ও ৬ হাজার ১২৯টি বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

UN chief Guterres meets Prof Yunus in Davos

UAE invites Yunus to attend World Governments Summit in Dubai

38m ago