আজ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল দেখতে যাচ্ছেন ভুটানের রাজা ওয়াংচুক

কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল
কুড়িগ্রামে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের সফর উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

নুর ইসলামের বয়স প্রায় ৭০ বছর। তিনি প্রান্তিক কৃষক। শৈশব থেকে দরিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে আছেন। তার দুই ছেলে মোহর আলী (৪৫) ও সাদেক আলীকেও (৪৩) দরিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে।

সংসার চালাতে তাদেরকে কাজের খোঁজে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় যেতে হয়। এলাকায় কর্মসংস্থানের খুব একটা সুযোগ নেই। তারা এখন দরিদ্রতাকে বিদায় জানানোর স্বপ্ন দেখছেন। কেননা, কুড়িগ্রামে গড়ে উঠছে 'ভুটানি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল'।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীপাড়ে মাধবরাম গ্রামের নুর ইসলাম ও তার ছেলেদের মতোই কুড়িগ্রামবাসী স্বপ্ন দেখছেন—এ জেলা থেকে দারিদ্র দূর করতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

নুর ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামরাগুলা আলসিয়া নোয়াই। হামরাগুলা কাজের মানুষ। পরশ্রিম কইরবার পাই। কিন্তু হামার এত্তি তেমন কর্মসংস্থান না থাকায় হামাকগুলাক আলসিয়া হয়া থাকা নাগে। এ জইননে হামাকগুলাক দরিদ্রতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি বাঁচা নাগে। এ্যাটেকোনা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ি তুললে হামারগুলার কাজ করি খাওয়ার সুযোগ হইবে। হামারগুলার কামের জাগা তৈরি হইবে।'

উত্তরের সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলায় ধরলাপাড়ে কুড়িগ্রাম-সোনাহাট স্থলবন্দর মহাসড়কের মাধবরাম গ্রামে গড়ে উঠতে যাচ্ছে 'ভুটানি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল'।

আজ বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম সফরে আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে জিটুজি-ভিত্তিক প্রস্তাবিত ভুটানি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করবেন তিনি।

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান থেকে ধরলার দূরত্ব প্রায় ৫০০ মিটার, কুড়িগ্রাম শহর এক কিলোমিটার, রেলওয়ে স্টেশন তিন কিলোমিটার, সোনাহাট স্থলবন্দর (ভারতের আসামের সঙ্গে যুক্ত) ৪৪ কিলোমিটার, চিলমারী নৌ-বন্দর ৩৪ কিলোমিটার রংপুর নগরী ৫২ কিলোমিটার ও লালমনিরহাট বিমানবন্দর ৩১ কিলোমিটার।

কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল
কুড়িগ্রামে ভুটানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথের ভালো যোগাযোগ আছে। তবে লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি এখন চালু নেই।

স্থানীয়রা ডেইলি স্টারকে জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে তাই তারা আনন্দিত। এখানে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাণিজ্যকেন্দ্র হওয়ার মধ্য দিয়ে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। এতে ঘুচবে কুড়িগ্রামের দরিদ্রতার অভিশাপ।

কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল আজিজ মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শিল্পায়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। আগামী এক যুগে কুড়িগ্রাম হয়ে উঠবে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা।'

'কুড়িগ্রাম-ভুটান বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি ভারতের সেভেন সিস্টার্স-খ্যাত অঞ্চলগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হবে,' বলে আশা করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদ-নদী ও চরাঞ্চল অধ্যুষিত এই জেলায় কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসহ শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কুড়িগ্রামে ভুটানি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। জেলার সার্বিক চিত্র বদলে যাবে।'

'রেল, নৌ ও সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি আকাশপথের যোগাযোগও সহজ করতে হবে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এজন্য লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু করা দরকার।'

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. একেএম জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুড়িগ্রাম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নিবিড়ভাবে কাজ করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপে যুক্ত হতে পারবে।'

এই অর্থনৈতিক অঞ্চল এ জেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনবে বলে আশা করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও জমির প্রয়োজন হলে ওই স্থানে জমি অধিগ্রহণের সুযোগ আছে। ভুটান ও বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে খুব দ্রুতই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে।'

'এটি চালু হওয়ার পর কুড়িগ্রামের মানুষকে কাজের খোঁজে আর জেলার বাইরে যেতে হবে না,' বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

8h ago