রাজনীতিতে বাংলাদেশ দেউলিয়াপনার মধ্যে আছে: অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। ছবি: স্টার

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দেউলিয়াপনার মধ্যে আছে। স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিকভাবে নানান নেতিবাচক মন্তব্যের পরও বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু রাজনীতিতে পিছিয়ে গেছে, মানুষের মধ্যে বেড়েছে বৈষম্য।

আজ মঙ্গলবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় এই কথা বলেন তিনি। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই আলোচনা সভা আয়োজন করে। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক এ শিক্ষক এখন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের 'বঙ্গবন্ধু চেয়ার'। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ঘুরে ফিরে ১৯৭৬ সালে বিদেশি লেখক জাস্ট ফ্যাল্যান্ড ও জে আর পারকিনসন একটি বই (বাংলাদেশ টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট) প্রকাশ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, বাংলাদেশের কোনোদিন উন্নয়ন হবে না, যদি হয় ২০০ বছর লাগবে।'

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশ তো এগিয়ে যাচ্ছে, তবে বৈষম্য আছে। মানুষ পিছিয়েছে, রাজনীতি পিছিয়ে গেছে, অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, রাজনীতির বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। অর্থনীতি এগুলেও রাজনীতি পিছিয়ে গেছে। রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে এই যে ব্যবধান এটা বঙ্গবন্ধু চাননি। (বর্তমান) নেতৃত্বের কাছে আমার দাবি থাকবে, রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে এই যে ব্যবধান, এটা গুছানোর ব্যবস্থা করুন।' তিনি আরও বলেন, 'বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ কি তা হয়েছে? প্রশ্নটির উত্তর আমি দেব না, আপনারা আপনাদের কাছে উত্তর জানবেন।'

'বাংলাদেশকে বলা হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি হবে। সেই ঝুড়িতে এখন অনেক তলা লেগেছে, কিন্তু উন্নয়ন হয়নি' উল্লেখ করে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'সরকার বললেও আমি মানবো না, উন্নয়ন হয়নি, তবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের পূর্বশর্ত, সঠিক প্রবৃদ্ধি হতে গেলে সুষম বণ্টন হতে হয়। শতভাগ সুষম বণ্টন হয়তো পৃথিবীর কোথাও নেই, তবে সেই পথে যাওয়ার মতো পথ, পদ্ধতি থাকতে হবে, যেটা তাজউদ্দীন আহমদের বাজেটে ছিল, ড. এ আর. মল্লিকের (অর্থমন্ত্রী ১৯৭৪-১৯৫) বাজেটে ছিল, তারপর থেকে আর পাইনি, (এখন বাজেট) আমলাতান্ত্রিক হয়ে গেছে।'

অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনার বাজেটে আমরা বৈষম্য কমানোর দৃষ্টান্ত দেখতে চাই। এটা আপনার কাছে আমার প্রত্যাশা, কারণ আপনি মুক্তিযোদ্ধা।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাংলার মানুষের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার ফসল ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশে এসে বুঝতে পারলেন পাকিস্তান স্বাধীন হলেও নিজ দেশে পরবাসী হয়ে গেছেন। এরপর তিনি স্বাধীনতার পথ খুঁজতে লাগলেন। এক সময় ছয় দফা আন্দোলনের ডাক দেন, যা ছিল সেই সময়ের রাজনীতিতে আগুন লাগার মতো ঘটনা।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে চলেছি। এই অগ্রযাত্রাকে অর্থবহ করতে সামনের দিনে আমাদের আরও অনেক দায়িত্ব আছে।

তিনি বৈশ্বিক হ্যাপিনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থানকে উল্লেখ করে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, বলেন, আমাদের অবস্থানটি অস্থিরতার প্রমাণ দেয়। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেভাবে উপলব্ধিতে নিতে পারিনি। আগামী ২০০ বছর বেঁেচ থাকলে যে সম্পদ প্রয়োজন তার জন্য মানুষের অস্থির যে কর্মকাণ্ড চোখে পড়ছে তাতে অবাক হতে হয়। আজকের স্বাধীনতা দিবসে নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে, আমরা কী আমাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করছি? স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঠিকভাবে ধারণ করছি? যদি তা হতো তাহলে এত অস্থিরতা কেন?

সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের বক্তব্যের সূত্র ধরে 'আমলাতান্ত্রিক বাজেট' সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র এখন অনেক বেশি জনবান্ধব। জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়।'

তিনি বলেন, 'আমরা যখন কোনো আইন বা নীতিমালা করি তখন সেটা জনগণের কাছে নিয়ে যাই। মানুষ কী বলে, সমালোচনা করে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিই। এটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা।' তিনি আরও বলেন, 'জনপ্রশাসন এখন অনেক বেশি নিয়মতান্ত্রিক। সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় পদায়নের মাধ্যমে জনসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।'

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

7h ago