রোজায় সুস্থ থাকতে কেমন হবে ইফতার, সেহরি ও রাতের খাবার

রোজায় সুস্থ থাকতে কেমন হবে ইফতার, সেহেরি ও রাতের খাবার
ছবি: সংগৃহীত

রোজায় সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভাস একান্ত প্রয়োজন। ঋতু বদলের এ সময়ে শরীর অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সারাদিন রোজা রেখে খাদ্যাভাস ও জীবনযাপন পদ্ধতি সঠিক না হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

রোজায় সুস্থ থাকতে করণীয় বিষয় সম্পর্কে জানিয়েছেন ল্যাবএইড আইকনিকের সিনিয়র পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাশেম

ফাহমিদা হাশেম বলেন, রোজা পালনের মাধ্যমে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। রোজা থাকলে শরীরের কোষগুলো বিশ্রামে থাকে। এই সময়ে শরীর ডিটক্সিফাইড হয়, ইমিউনিটি সেল নতুন করে তৈরি হয়। কিছু কিছু গ্রোথ হরমোন আছে যেগুলোর নিঃসরণ এ সময় বেড়ে যায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের কারণে শরীর উপকারিতাগুলো পায় না। উল্টো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও কমে যায় এবং শরীর সহজেই অসুস্থ হয়ে যায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।

রোজার সময়ে আমরা তিনবার খাবার গ্রহণ করে থাকি। ইফতার, রাতের খাবার ও সেহরি। এগুলো কেমন হবে চলুন জানি-

ইফতার

  • ইফতারের খাবার তিনভাগে ভাগ করে গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। প্রথম ভাগে শুধু ১-২ গ্লাস পানি, খেজুর, যেকোনো একটি ফল খেতে পারেন। ইফতারের শুরুতেই চিনি, লবণযুক্ত পানীয় খাওয়া উচিত নয়।
  • দ্বিতীয় ধাপে মাগরিবের নামাজ পড়ার পর পানীয় গ্রহণ করতে হবে। সব পানীয় স্বাস্থ্যকর হবে যদি চিনি ব্যবহার না করেন। পানীয় হতে পারে ফলের রস, লেবুপানি, বেলের শরবত, টকদই দিয়ে তৈরি লাচ্ছি, ডাবের পানি ইত্যাদি।
  • পানীয়র সঙ্গে খেতে হবে ইফতারের প্রধান খাবার। ইফতারের প্রধান খাবারে প্রতিদিন একই ধরনের জিনিস না রেখে একেক দিন একেক ধরনের খাবার রাখার চেষ্টা করতে হবে। যেকোনো একটা কার্বহাইড্রেটযুক্ত খাবার রাখতে হবে। নুডলস, রুটি-পরোটা, দই-চিড়া, সবজি খিচুড়ি, ছোলা-মুড়ি ইত্যাদি খাবার একদিনে ইফতারে না রেখে প্রত্যেকদিন যেকোনো একটা রাখতে হবে।

  • প্রোটিনের কোনো একটি খাবার রাখতে হবে। ডালের তৈরি পেঁয়াজু, বেসন দিয়ে তৈরি করা খাবার, মাছ-মাংস বা ডিম দিয়ে তৈরি ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে যেকোনো একটা রাখতে হবে ইফতারে।
  • তৃতীর ধাপে প্রধান খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর বাসায় যদি মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি হয় সেটা খাবেন। মিষ্টিজাতীয় খাবার হতে পারে দুধ দিয়ে তৈরি পায়েস, সেমাই, ফিরনি, ফালুদা, কাস্টার্ড। বাচ্চাদেরকে দিতে পারেন কিশমিশ, ড্রাইফ্রুট যোগ করা আইসক্রিম।
  • সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে একসঙ্গে অনেক কিছু খাওয়ার ফলে হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়। যেমন পেট ফেঁপে থাকা, অ্যাসিডিটি, গলা জ্বলা ইত্যাদি। এভাবে তিন ধাপে খাবার গ্রহণ করতে পারলে এই সমস্যা কমে যাবে।

রাতের খাবার

যেহেতু ইফতারে ভারী খাবার খাওয়া হয়, রাতে হালকা খাবার খেতে হবে। রাতের বেলার খাবার হতে পারে স্যুপ, এক গ্লাস দুধের সঙ্গে কলা, খেজুর, বাদামসহ শেক, সালাদ (শসা, গাজর, বিটরুট ক্যাপসিকাম, সেদ্ধ ভুট্টা, মটরশুঁটি ইত্যাদি সবজি একসঙ্গে মিশিয়ে পেঁয়াজ ও একটু অলিভ ওয়েল বা সরিষার তেল যোগ করে তৈরি করা), এক গ্লাস দুধ, সেদ্ধ ডিম ইত্যাদি।

যদি ইফতারে একদম অল্প এবং হালকা খাবার খাওয়া হয় তাহলে রাতে ভারী খাবার খেতে পারেন। রুটি, এক কাপ ভাতের সঙ্গে সবজি, মাছ বা অল্প পরিমাণ মাংস। তবে ভাতের পরিমাণ বেশি না রাখাই ভালো। সবজির মধ্যে যেগুলোতে পানির পরিমাণ বেশি যেমন লাউ, পেঁপে, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া ইত্যাদি অনেক লম্বা সময় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। আর রেডমিট ১০-১৫ দিন পর একদিন খাওয়া ভালো।

সেহরি

সেহরিতেও খাবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখতে হবে। ভাত খেলে সঙ্গে কম মশলাযুক্ত সবজি, মাছ বা মাংস, ডাল খেতে পারেন। প্রতিদিন ভাত না রেখে একদিন দই চিড়া বা ওটসও বাখতে পারেন। আবার অনেকেই আছেন সেহরিতে ভারী খাবার খেতে পছন্দ করেন না। তারা এক গ্লাস দুধ, একটি ডিম সেদ্ধ, একটি কলা বা এক গ্লাস দুধ, একটি খেজুর  ও কলা খেতে পারেন। এই খাবারটিও সারাদিনে যথেষ্ট শক্তির জোগান দেবে। সেহরির সময় শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে বা অন্তত আধা ঘণ্টা আগে উঠে খেতে হবে। সেহরির খাবার রাতের শেষ ভাগেই খেতে হবে, যাতে এই খাবার সারাদিন শরীরে শক্তি দেয়।

এভাবে খাদ্যগ্রহণ করার পাশাপাশি আরও কিছু কাজ করতে হবে-

  • ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় এক গ্লাস করে পানি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে অন্তত ১০-১২ গ্লাস পানি খেতে হবে।
  • রমজান মাসে চা-কফি বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার যত কম রাখবেন তত ভালো। এগুলো খেলে সারাদিনে পানির পিপাসা বেশি লাগবে, শরীর ঘামবে, ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স বেশি হবে। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত নিয়মিত চা-কফির বদলে হারবাল চা খেতে পারেন।
  • পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয়।
  • আপনি যদি একজন সুস্থ ব্যক্তি হোন, কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকে, তাহলে তিনদিন পর একদিন নিজের পছন্দের (অর্থাৎ ভাজাপোড়া খাবার, দোকানের খাবার ইত্যাদি) ইফতারে খেতে পারবেন। আর যদি কারো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে, তাদের যদি খুব ইচ্ছা হয় তাহলে ১৫ দিন পরেএকদিন অল্প পরিমাণে পছন্দের ইফাতার করতে পারবেন।

এই বিষয়গুলো মেনে চলতে পারলে আশা করা যায় সুস্থ থেকে রমজানে রোজা পালন করতে পারবেন।

 

Comments