তরুণকে তুলে এনে মারধর করে টাকা আদায়, এসআই বরখাস্ত
ধর্ষণ মামলার আসামির বন্ধুকে তুলে এনে দুই লাখ টাকা নেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরান হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং সেকেন্ড অফিসারের জ্ঞাতসারেই পুলিশের এক সোর্সের মাধ্যমে সেই টাকার লেনদেন হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদর দপ্তরের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল ওয়ারিশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসআই ইমরানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।'
সিএমপি সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের অভিযোগ এনে কর্ণফুলীর আরাফাত নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন এক তরুণী। পরে মামলার আসামিকে ধরতে কর্ণফুলীর ঈসানগরে অভিযান চালান এসআই ইমরান ও কোতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই গৌতম। ৭ ফেব্রুয়ারি আসামি আরাফাতকে ধরতে গিয়ে তার বন্ধু সাইফ আল নাইমকে আটক করে নিয়ে যান এসআই ইমরান।
নাইম চট্টগ্রামের ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে।
নাইমের বাবা বাহার আহমেদ অভিযোগে জানান, তার ছেলেকে থানায় এনে দ্বিতীয় তলার কক্ষে আটকে রেখে মারধর করেন এসআই ইমরান। সেখানে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় এবং ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত আছে বলে মোবাইলে স্বীকারোক্তি ধারণ করা হয়। সেদিন রাত ৯টার দিকে বাহারকে মোবাইলে ধারণ করা সেই ভিডিও দেখান এসআই ইমরান এবং মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। একপর্যায়ে তাকে সালেক নামে পুলিশের এক সোর্সের সঙ্গে থানার বাইরে কথা বলতে বলেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সোর্স সালেক বাহারকে পাঁচ লাখ টাকায় ছেলেকে ছাড়িয়ে নিতে বলে অবশেষে দুই লাখ টাকায় দফারফা করে দেয়। পরে রাত একটার দিকে থানার মধ্যেই সোর্স সালেকের মাধ্যমে টাকা তুলে দেওয়া হয় এসআই ইমরানের হাতে। এরপর মারধর, টাকা-পয়সার লেনদেন কিংবা ভয়ভীতি দেখানো হয়নি বলে বাবা ও ছেলের একটি ভিডিও ধারণ করে রাখা হয় এবং মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারিতে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বাহার। পরে ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার (এসি) অতনু চক্রবর্তীকে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে এসি অতনু চক্রবর্তী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তের বিষয়। আমি যা পেয়েছি তা জমা দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে চাইছি না।'
অভিযোগ বিষয়ে জানতে এসআই গৌতমকে ফোন করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ওসি স্যার একটু অসুস্থ হয়ে গেছেন, আমি হাসপাতালে আছি, এ বিষয়টি নিয়ে কথা না বলি আর।'
নাঈমের বাবা বাহার আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ছেলেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। সে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছিল না। তাকে থানায় হাতকড়া পরিয়ে মারধর করা হয়েছে। আমি অভিযোগ দিয়েছিলাম। তারা কিছুদিন আগে আমার টাকা ফেরত দিয়েছে।'
'বর্তমানে আমি পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত। এর বেশি কিছু বলতে চাই না', যোগ করেন তিনি।
Comments