নতুন ট্রেন পেয়েও আক্ষেপ থেকে গেল লালমনিরহাটবাসীর

নতুন উদ্বোধন হওয়া বুড়িমারী এক্সপ্রেস। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বুড়িমারী-ঢাকা রুটে চালু হলো আন্তনগর 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস'। মঙ্গলবার দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্টেশনে ট্রেনটি উদ্বোধন করা হয়।

বুড়িমারী এক্সপ্রেসে ১৭টি কোচের মধ্যে ১৪টি কোচ যাত্রীদের জন্য। বাকি তিনটি কোচের একটি পাওয়ার কার, একটি লাগেজ ভ্যান ও অপরটি ডাইনিং কোচ। তবে এই কোচগুলো নতুন নয়। পুরোনো কোচ ধুয়েমুছে রং করে নতুন ট্রেনে সংযোজন করা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ট্রেনটির উৎপত্তিস্থল বুড়িমারী স্টেশন হওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ট্রেনটির উৎপত্তিস্থল হবে ৮১ কিলোমিটার দূরের লালমনিরহাট স্টেশন। শাটল ট্রেনের মাধ্যমে বুড়িমারী স্টেশনের যাত্রীদের আনানেওয়া করা হবে। এ নিয়ে লালমনিরহাটবাসীর কিছুটা আক্ষেপ থেকেই গেল।

বুড়িমারী স্টেশন থেকে ঢাকার দূরত্ব ৫২৯টি কিলোমিটার। এটাই বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেলরুট। লালমনিরহাট থেকে ঢাকার মধ্যে লালমনি এক্সপ্রেস নামে আরেকটি আন্তনগর মিটারগেজ ট্রেন চালু রয়েছে।

লালমনিরহাট রেলওয়ে কন্ট্রোলরুম সূত্র জানায়, ট্রেনটিতে যাত্রীদের আসন রয়েছে ৬৫৩টি। এর মধ্যে এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ১২০টি, এসি বাথ ১৮টি ও শোভন চেয়ার ৫৬২টি। ট্রেনটি বুড়িমারী, পাটগ্রাম, বড়খাতা, হাতীবান্ধা, তুষভান্ডার, লালমনিরহাট, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, সান্তাহার ও নাটোর স্টেশনে থামবে। কাউনিয়ার জন্য ৩০টি, গাইবান্ধার জন্য ৫০টি, বোনারপাড়ার জন্য ৩০টি, বগুড়ার জন্য ৪০টি, সান্তাহারের জন্য ২০টি ও নাটোরের জন্য ২০টি আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৫৩টি আসন বরাদ্দ থাকবে লালমনিরহাট, তুষভান্ডার, হাতীবান্ধা, বড়খাতা, পাটগ্রাম ও বুড়িমারী স্টেশনের জন্য।

ট্রেনটি বুড়িমারী স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে সকাল ৭টায়। ঢাকা থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে আবার বুড়িমারী পৌঁছাবে রাত ৮ টায়।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, নতুন ট্রেনে নতুন কোচ দেওয়া হয়নি, এটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ট্রেনটির উৎপত্তিস্থল বুড়িমারী হবে না এটা মানা যায় না।

নতুন কোচের দাবিতে প্রয়োজনে তারা আন্দোলন করবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'ট্রেনটির উৎপত্তিস্থল বুড়িমারী স্টেশন না হলে ভারত ভ্রমণে যাওয়া যাত্রীরা তাদের মালামাল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়বেন। এতে তারা ট্রেনে ভ্রমণের আগ্রহ হারাতে পারেন। ট্রেনটি বুড়িমারী ও ঢাকার মধ্যে চলাচল করলে যাত্রীদের হয়রানি কমবে এবং স্থলবন্দরের অর্থনৈতিক উন্নতিও হবে।'

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস' এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে ভারত ভ্রমণে যাওয়া যাত্রীরা দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবেন। আপাতত ট্রেনটির উৎপত্তিস্থল লালমনিরহাট করা হলেও পরবর্তীতে তা বুড়িমারী স্টেশন করা হবে। ততদিন পর্যন্ত বুড়িমারী স্টেশন থেকে শাটল ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। বুড়িমারী স্টেশনে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সমস্যা সমাধান করে সেখানে দ্রুত ওয়াশপিট নির্মাণ করা হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী এ ট্রেনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাই ট্রেনটি চালু করা হলো। এই মুহূর্তে নতুন কোচ না থাকায় পাকশী ডিভিশন থেকে পুরাতন কোচ রঙ করে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনে সংযোজন করা হয়েছে। পরে পুরাতন কোচগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।'

ট্রেনের উৎপত্তিস্থলের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, 'ট্রেনটির উৎপত্তিস্থল নিয়ে আমরা তিন মাসের সময় নিয়েছি। এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বুড়িমারী-ঢাকা রুট দেশে দীর্ঘতম রেলওয়ে রুট। এই রুটে ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে দুটি রেকের প্রয়োজন হবে। এই মুহূর্তে তা আমাদের সাধ্যের বাইরে রয়েছে। এই রুটে কীভাবে দুটি রেক সংযোজন করা যায় সে বিষয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'

লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম উপজেলা) মোতাহার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ট্রেনটি সরাসরি বুড়িমারী-ঢাকা রুটে চলাচল করবে এটা ছিল এই অঞ্চলের মানুষের দাবি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ট্রেন দিয়ে উপকার করেছেন। ট্রেনটি বুড়িমারী-ঢাকা রুটে সরাসরি চলাচল করলে আমরা বেশি উপকৃত হব।

Comments

The Daily Star  | English
army denies hiding bodies after jet crash

‘Army intervened in Gopalganj to save lives, not in support of any party’

Brig Gen Nazim-ud-Daula, director of Military Operations Directorate at the Army Headquarters, says

32m ago