যারা ৭ মার্চকে প্রেরণা মনে করে না, তারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায় না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র অগ্নিসংযোগ ও জঙ্গিবাদের মাধ্যমে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে দেশকে ধ্বংস করতে নেমেছে। 

এজন্য তিনি দেশবাসীকে সতর্ক থাকার ও আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, 'তারা (বিএনপি-জামায়াত) নির্বাচন বর্জনের পর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংস করতে এবং জনদুর্ভোগ বাড়াতে চায়।'

দেশকে ধ্বংস করার যে কোনো কিছুর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে তারা (বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট) ৩০টি আসন পেয়েছিল। আর তার পরেই তাদের আরও খারাপ অবস্থা। এখন নির্বাচন না করে নির্বাচন বানচাল করতে এবং দেশকে ধ্বংস করতে নেমেছে। সে বিষয়ে মানুষকে সজাগ থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যারা জয় বাংলা স্লোগানে বিশ্বাস করে না, ৭ মার্চের ভাষণকে প্রেরণা বলে মনে করে না, তার অর্থ তারা স্বাধীন বাংলাদেশই চায় না, বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন তথা তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তারা চায় না। কাজেই তাদেরকে মানুষ কেন ভোট দেবে?'

তিনি বলেন, 'আজ আমরা সরকারে আছি। জনগণ বারবার আমাদের ভোট দিয়েছে, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে, আর দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। আর যে দলটির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন, যে দল দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বিজয় এনে দিয়েছে, সেই দলই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যে দল ক্ষমতায় আসলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, দেশের উন্নতি হয়। যে যত কথাই বলুক এই বাস্তবতা সবাইকে স্বীকার করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আসলে যার দাঁত তার ব্যথা, যে কষ্ট করে সে বোঝে, মানুষের জন্য তার কী করতে হবে। আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। কিন্তু এরপরের ২৯ বছরে দেশ কিন্তু এক কদমও আগে বাড়েনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ সামনের দিকে এগিয়ে গেছে এবং ইনশাল্লাহ একদিন জাতির পিতা স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।'

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, দলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বেনজীর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও মো. হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তৃতা দেন।

আবৃত্তিকার শিমূল মুস্তাফা নির্মলেন্দু গুণের 'স্বাধীনতা এই শব্দটি কী করে আমাদের হলো' কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান।

দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আওয়াল শামীম আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। 'পোয়েট অব পলিটিক্স' বঙ্গবন্ধু এই ভাষণের মাধ্যমে সুকৌশলে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার নাকের ডগা দিয়ে তৎকালীন পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। কিন্তু তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করারও উপায় ছিল না। যা পরবর্তীতে প্রকাশিত পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও পাওয়া যায়। 

একটি পরাধীন জাতিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে প্রতিরোধের ডাক দেওয়া এই ভাষণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক দিক-নির্দেশনা। বাঙালির মুক্তির সশস্ত্র সংগ্রামে অফুরান প্রেরণার উৎস ছিল এই ভাষণ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে মানুষকে উদ্বুদ্ধকারী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় দিবসগুলো সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে সম্যক ধারণা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ অভিভাবকের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্ম দিবস, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এই দিবসগুলো সম্পর্কে যেন আমাদের যুব সমাজ প্রত্যেকেই জানে এবং জানতে পারে। কেননা সবারই এসব জানা উচিত।

সরকার প্রধান বলেন, কাজেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয়। ওই শিক্ষা না নিলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। আমরা ক্ষমতায় আছি, সুবিধা দিচ্ছি, সেই সুবিধা শুধু ভোগ করবেন তা নয়, সঙ্গে এ পর্যন্ত আসতে যে সংগ্রামের ইতিহাস, আত্মত্যাগের ইতিহাস সেগুলোও মানুষকে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। আর সেটা শুধু নিজেরাই জানলে হবে না সেটা সবাইকে জানাতে হবে। তাহলে আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে আগামী প্রজন্ম সম্যক জ্ঞান পাবে।'

তিনি বলেন, 'এটাই আমার আবেদন থাকবে সবার কাছে, মানুষ যেন ইতিহাস ভুলে না যায়। কারণ, ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় আগামীতে পথ চলার, সাফল্যের পথ দেখায়। কারণ, স্বাধীনতাসহ জাতির পিতার প্রতিটি আন্দোলনই ছিল সাফল্যে ভরপুর। যারা চেয়েছিল ধ্বংস করতে ২১ বছর এবং এরপর আরও ৮ বছর মোট ২৯ বছর, তারা ব্যর্থ, তারা পারেনি। তারা সেই ইতিহাস মুছতে পারেনি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পৃথিবীতে যত ভাষণই আছে তা হয় লিখিত বা ওই একবারই সে ভাষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণ কোনো লিখিত ছিল না। জাতির পিতার মানুষকে নিয়ে চিন্তা-চেতনার কথা, মানুষের শোষণ-বঞ্চনার কথা, তাদের আত্মত্যাগ এবং একটি জনযুদ্ধের জন্য মানুষকে প্রস্তুত করার দিক নির্দেশনা ছিল এই ভাষণ।'

তিনি বলেন, '৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই ভাষণ বারবার বাজিয়েছে। ৭ মার্চ বাজিয়েছে, ২৬ মার্চ বাড়িয়েছে, ১৫ আগস্ট বাজিয়েছে। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে জেল খেটেছে। এমনকি অনেকে জীবনটা পর্যন্ত দিয়ে গেছে। কিন্তু থেমে যায়নি। যতই তারা নিষিদ্ধ করতে চেষ্টা করুক এটাকে তারা নিষিদ্ধ করতে পারেনি। মানুষের হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল। আমি জানি না কেউ হিসেব করতে পারবে কি না, কতদিন কত ঘণ্টা এই ভাষণ বাজানো হয়েছে, আর কত মানুষ শুনেছে। এটা পৃথিবীতে একটা দৃষ্টান্ত।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বের যত সামরিক অসামরিক নেতৃত্ব মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাষণ দিয়েছেন, তার মধ্যে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। কাজেই সেই ভাষণের মধ্য দিয়েই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এবং আজ সেই দিবসটি পালন করছি। আর সে কারণেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, তা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। যে কাজটা তিনি করতে গিয়েও করতে পারেননি, তাকে সপরিবারে হত্যা করে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'কাজেই এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।'

তিনি তার ভাষণে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, ঐতিহাসিক ৬ দফা প্রণয়ন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে জাতির পিতা যেন প্যারোল না নেন, তা সহ সে সময়কার গণআন্দোলন সংগঠনে জাতির পিতার ছায়াসঙ্গী বঙ্গমাতার ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, 'বাংলাদেশের সে সব কঠিন সময়ে তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বাংলার স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Admin getting even heavier at the top

After the interim government took over, the number of officials in the upper echelon of the civil administration has become over three times the posts.

7h ago