শিক্ষকের কাছ থেকে ‘জব্দ করা’ মাদক গেল কোথায়

হেরোইনের বিষয়ে ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি তো আগেই বলেছিলাম হেরোইন আছে কি না, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।
বাগাতিপাড়া মডেল থানা। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মারধরের পর মাদক উদ্ধার দেখিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে দুই কনস্টেবলসহ চারজনের বিরুদ্ধে।

গত রোববারের ওই ঘটনায় মাদক উদ্ধারের সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

বাগাতিপাড়া থানার পুলিশ জানিয়েছিল, ওই শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি কাগজে হেরোইন পাওয়া গেছে।  কিন্তু, থানায় জমা দেওয়া হয়েছে একটি কাগজ।

থানার ওসি নান্নু খান বলছেন, ধস্তাধস্তিতে এক পুরিয়া মাদক হারিয়ে গেছে বলে দুই কনস্টেবল জানিয়েছে।

এ অবস্থায় হেরোইন উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত রোববার বিকেলে বাগাতিপাড়ার রহিমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক বাদল উদ্দিন স্কুলছুটির পর যখন বাসায় ফিরছিলেন।

পথে ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকায় তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন কনস্টেবল সজিব হোসেন ও কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান এবং পুলিশের সোর্স বিদ্যুৎ।

তারা ওই শিক্ষককে মারধর করে, হাতকড়া পরিয়ে দুটি কাগজ দেখিয়ে বলে তার কাছে 'দুই পুরিয়া হেরোইন' পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় ওই দুই কনস্টেবলকে সোমবার প্রত্যাহার করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদল উদ্দিন ইতোমধ্যে দুজনের নামে মামলা করলেও, ওসির পরামর্শে আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়েছে দুই কনস্টেবলের নাম।

এদিকে ওই শিক্ষকের কাছে হেরোইন ছিল কি না, গত রোববার রাত ১১টার দিকে বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নান্নু খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'কনস্টেবলদের বক্তব্য হলো দুই পুরিয়া হেরোইন পাওয়া গেছে। পরে ওখানকার আনিছুর রহমান মাস্টারের রিকোয়েস্টে তারা তাকে ছেড়ে দিয়ে এসেছে। আর হেরোইনটা নিয়ে এসেছে।'

কাগজে হেরোইন ছিল কি না, জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'হেরোইন ছিল কি না, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়। তবে হেরোইন সাদৃশ্য বস্তু কাগজের মধ্যে পাওয়া গেছে। পরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না হেরোইন কিনা।'

উদ্ধার হওয়া হেরোইন কোথায় জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'সেটা ওই কনস্টেবলের কাছেই আছে। ওটা নিয়ে নেব।'

পরে রাত ১২টার দিকে ওসি ফোন করে বলেন, 'ওদের (কনস্টেবল) কাছ থেকে এক পুরিয়া নিয়েছি।'

এরপর মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে উদ্ধারকৃত হেরোইনের বিষয়ে ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি তো আগেই বলেছিলাম হেরোইন আছে কি না, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।

 'হেরোইন ছিল, নাকি ফাঁকা কাগজ ছিল' জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'সবার সামনে খুলেছিলাম, কোনো পদার্থ দেখিনি।'

তাহলে কীসের পরীক্ষা হবে জানতে চাইলে ওসি বলেন, 'যেহেতু উল্লেখ আছে দুই পুরিয়া হেরোইন পাওয়া গেছে এবং আমার কাছে এক পুরিয়া জমা দিয়েছে। তাতে হেরোইন বা হেরোইন সাদৃশ্য কিছু ছিল না। সবার সামনে খুলেছি।'

সেদিন কী হয়েছিল, জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশের দুই কনস্টেবল আমার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে তল্লাশি করার সময় পকেট থেকে দুটি কাগজ বের করে বলেছে দুই পুরিয়া হেরোইন পাওয়া গেছে। তারা আমার কাছে কোনো মাদক পায়নি। বরং তারা (পুলিশ সদস্যরা) হেরোইন দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।'

রোববার রাত ১১টার দিকে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'তল্লাশি চালানোর সময় শিক্ষকের কাছে মাদক ছিল। সহকর্মী কনস্টেবল সজিব হোসেন আমাকে জানায় শিক্ষকের পকেট থেকে দুইটা কাগজ পেয়েছে। আমাকে বলেছে দুই পুরিয়া হেরোইন পাওয়া গেছে। আসলে হেরোইন ছিল কি না, আমি জানি না। পরে ওই দুই পুরিয়া হেরোইন থানায় জমা দেয় সজিব।'

অপর পুলিশ কনস্টেবল সজিব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নাটোর জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নগেন্দ্রনাথ রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে তাহলে নাগরিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের এসব বিষয়ে আরও তৎপর হওয়া উচিত। পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা, তা না হলে পুলিশের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যাবে। হেরোইন আছে নাকি নেই তা পরীক্ষানিরীক্ষা সাপেক্ষে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।'

Comments

The Daily Star  | English

15pc VAT on Metro Rail: Quader requests PM to reconsider NBR’s decision

Dhaka is one of the most unliveable cities in the world, which does not go hand-in-hand with the progress made by the country, says the road transport and bridges minister

32m ago