কুমিল্লাকে হারিয়ে বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন বরিশাল

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মোস্তাফিজুর রহমানের বলটা কাট করে সীমানার দিকে ঠেলে দিলেন ডেভিড মিলার, বল বাউন্ডারির দিকে দেখে ডাগআউট থেকে দৌঁড়ে ছুটে এলেন ফরচুন বরিশালের খেলোয়াড়রা। মাঝমাঠে চলল উৎসব। সব আলো নিভে গিয়ে আতশবাজিতে ভরে গেল শেরে বাংলার মাঠ। প্লে অফের আগে বাদ পড়ার শঙ্কা উড়িয়ে ফাইনালে উঠেও বাজিমাত করল বরিশাল। প্রথমবারের মতন বিপিএলের শিরোপা জিতল দক্ষিণাঞ্চলের দল।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার বিপিএলের ফাইনাল হলো অনেকটা একপেশে। রেকর্ড চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতন চ্যাম্পিয়ন হলো বরিশাল।

মূলত বল হাতেই কাজটা সেরে ফেলে বরিশাল। ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো উইকেটে কুমিল্লার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে আটকে রাখে স্রেফ  ১৫৩ রানে। ওই রান ৬ বল আগেই তুলে নেয় তামিম ইকবালের দল। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ২৬ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে ভালো শুরু আনেন তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবসর নেওয়া ব্যাটার বিপিএলে করেন সর্বোচ্চ রান।

২০২২ সালে এই কুমিল্লার কাছেই ফাইনালে হারতে হয়েছিল বরিশালকে। সেবার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে এবার তামিমের নেতৃত্বে শিরোপা ঘরে তুলল তারা।

টুর্নামেন্টের আগে ফরচুন বরিশালের সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই ছিলেন সন্দিহান। শুরুতে ধুঁকছিলোও তারা। তবে মাঝপথে ছন্দ পেয়ে অভিজ্ঞতা ভরপুর দলটি ধরে রাখে মোমেন্টাম। বিশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার মেয়ার্স যোগ দেওয়ার পর পুরোপুরি ভিন্ন মাত্রা পেয়ে যান তামিমরা। প্রতিপক্ষ কুমিল্লা নামেভারে শক্তিশালী ছিলো এবারও। চারবার ফাইনালে উঠে জিতলেও এবার হতাশ হলো বিপিএলের সফলতম দলটি।

রান তাড়ায় উড়ন্ত সূচনা পেয়ে ম্যাচ প্রথমেই সহজ করে ফেলেন তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তামিমের সামনে শুরুতে বল করতে দেখা যায় বাঁহাতি স্পিনার তানবীর ইসলামকে। তার প্রথম ওভার থেকেই আসে ১২ রান। তরুণ রহানুতদৌল্লা বর্ষণের দ্বিতীয় ওভার থেকে ১৫ তুলে বরিশাল।

তৃতীয় ওভারেও তানবীরকে ডাকেন লিটন। বাঁহাতি তামিম ম্যাচআপ পেয়ে মারেন দুই ছক্কা। ভিন্ন অ্যাপ্রোচে নামা বরিশাল অধিনায়ক পাওয়ার প্লের পরও দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন। ৮ম ওভারে মঈন আলিকে চার-ছক্কা মেরে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে হন বোল্ড। ৭৬ রানে গিয়ে পড়ে প্রথম উইকেট। ততক্ষণে মোমেন্টাম পুরোপুরি বরিশালের দিকে।

আরেক ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ থিতু হয়ে বিদায় নিলেও সমস্যা হয়নি বরিশালের। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৪২ বলে ৫৯ রানের জুটিতে কাজ এগিয়ে নেন মেয়ার্স। বোলিংয়ে এক উইকেট নেওয়ার পর এদিনও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেন তিনি। খেলেন ৩০ বলে ৪৬ রানের ইনিংস।

মুশফিক এক পাশ আগলে খেলা শেষ করার চিন্তায় থাকলেও শেষ দিকে আউট হন ১৮ বলে ১৩ রান করে। তবে তাতে কোন বিপদ বাড়েনি। প্লে অফের আগের দুই ম্যাচের মতন ফাইনালের মঞ্চেও টস ভাগ্য পক্ষে আসে বরিশালের। টস হেরে খেলতে নেমে বাজে শুরু করে কুমিল্লা। প্রথম ওভারে জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সুনিল নারাইন। কাইল মেয়ার্সকে উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেন ৫ রান করে।

তিনে নেমে তাওহিদ হৃদয় পান চনমনে শুরু। তবে তা এবার টানতে পারেননি। তিন চারে ১০ বলে ১৫ করে জেমস ফুলারের বলে  থার্ডম্যানে মাহমুদউল্লাহর হাতে দেন ক্যাচ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মিলার কাবু করেন লিটন দাসকেও। কুমিল্লা অধিনায়ক আপার কাট করতে গিয়ে ধরা দেন থার্ডম্যানেই।

৪৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া কুমিল্লা এরপর আর ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারেনি। ইনিংস জুড়েই চলে তাদের ভোগান্তি।

পুরো টুর্নামেন্টে নিষ্প্রভ ক্যারিবিয়ান জনসন চার্লস শুরুতে দুই ছক্কা মেরে বড় কিছুর আভাস দিলেও জ্বলে উঠতে পারেননি। ওবেদ ম্যাককয়কে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে সহজ ক্যাচে থামেন ১৭ বলে ১৫ করে।

কুমিল্লা এদিন পাঁচে নামিয়েছিল মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে। এই ব্যাটার ১৭তম ওভার পর্যন্ত টিকে থাকলেও খেলেছেন মন্থর গতিতে। তার সঙ্গে জুটি গড়তে না পেরে রান আউটে কাটা পড়েন মঈন আলি। ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডারও এবার বিপিএলে এসে হতাশ করেছেন কুমিল্লাকে।

পুরো আসরে শেষ দিকে দ্রুত রান উঠিয়ে চাহিদা মেটানো ব্যাট করা জাকের আলি অনিক এদিন ধুঁকেছেন। মাত্র ৮৬.৯৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন তিনি। তার ২৩ বলে ২০ রানের ইনিংস স্লগ ওভারে কুমিল্লাকে আড়ষ্ট করে রাখে।

আন্দ্রে রাসেল নেমে অবশ্যই ঝড় তুলেন। ফুলারের ২১ রান উঠান তিন ছক্কায়। কিন্তু শেষ ওভার একদম কাজে লাগাতে পারেননি ক্যারিবিয়ান তারকা। সাইফুদ্দিন তিনটি ওয়াইড ও একটি নো বল দিলেও হজম করেননি কোন বাউন্ডারি। ওই ওভার থেকে আসে স্রেফ ৭ রান। ইনিংস বিরতিতেই টের পাওয়া যায় কমপক্ষে ২০ রানের ঘাটতি থেকে গেছে কুমিল্লার।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

1h ago