বইমেলা বিশেষ-১০

আমাদের সবার উচিত লেখকদের সম্মান করা : মজিবর রহমান খোকা

আমাদের দেশে পেশাদারি লেখক হাতেগোনা। বাকিরা অন্যান্য কাজের ফাকে লেখালেখি করেন। সেই সম্মানটুকু তাকে দেয়া উচিত।
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রকাশক, লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান খোকা। যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধশেষে একটি মননশীল সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান- বিদ্যাপ্রকাশ। এ পর্যন্ত প্রকাশ করেছেন প্রায় দেড় হাজার বই। পেশাদারিত্ব, বইমেলা ও সংশ্লিষ্ট  প্রসঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারকে নিজের  কথা জানিয়েছেন মজিবর রহমান খোকা। 

কেবলমাত্র বইমেলা কেন্দ্রিক বই প্রকাশকে কিভাবে দেখেন, দীর্ঘ প্রকাশনার জন্য কি ভালো?

মজিবর রহমান খোকা : বইমেলাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বই প্রকাশিত হয়। আমরাও এর ব্যতিক্রমী নয়। আমি যখন প্রকাশনায় আসি তখন সারা বছরই বই বের হতো এবং পাঠক একুশে বইমেলায় সেই বইগুলো নিত। কিন্তু পরবর্তী কয়েক বছরে দেখা গেল জনপ্রিয় লেখকরা শুধু ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে বই লেখেন, প্রকাশককে বই দেন। এই জনপ্রিয়তার স্রোতে পাঠক ফেব্রুয়ারিতে বই কেনার জন্য অপেক্ষা করে। দেখা গেল আমরা সারাবছর বই বের করলেও পাঠক মেলায় জিজ্ঞেস করত নতুন কি বই বের হয়েছে। তাদের সামনে যখন গত বছরের জুন বা জুলাইতে বের হওয়া বই তুলে দিতাম পাঠক বলতো এটাতো গতবছরের বই। 

পাঠকদের বোঝাতে হতো গতবছর বের হলেও আপনি এটা পড়েননি। এভাবে পাঠক ধীরে ধীরে মেলা কেন্দ্রীক হয়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বরের বই হলেও এটা আগের বই হয়ে যাচ্ছে। লেখকরাও মেলা আসার দুয়েকমাস আগে পণ্ডুলিপি দেন তখন সবগুলো বই, একসাথে করতে গেলে প্রকাশকদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়। যদি আমার ব্যপারে বলি, এ বছর আমার প্রকাশনা থেকে ৪২টি বই বের হয়েছে। এই পান্ডুলিপি লেখকরা অক্টোবর থেকে দেয়া শুরু করেছে। তাহলে একটি বই করতে কি পরিমাণ সময় যায় এটা ভাবার বিষয়। এতে প্রকাশকের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়। আমি মনে করি লেখকের সারা বছর বই লেখা প্রয়োজন এবং প্রকাশকরাও সেভাবে প্রকাশ করা উচিত। এতে পাঠকদের বই কেনা ও পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে। 

লেখকদের অভিযোগ অধিকাংশ প্রকাশকের বিরুদ্ধে রয়েলেটি না দেওয়ার বিষয়। আপনি পারেন, অন্যেরা পারেন না কেন?

মজিবর রহমান খোকা : খুবই দুঃখজনক। লেখককে যথাযথ সম্মানী দেয়া একজন প্রকাশকের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ১৫% সম্মানী খুবই নগন্য মনে করি। আমাদের দেশে পেশাদারি লেখক হাতেগোনা। বাকিরা অন্যান্য কাজের ফাকে লেখালেখি করেন। সেই সম্মানটুকু তাকে দেয়া উচিত। আমরা একটা সমিতি করেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত ছিল যে লেখকের সম্মানি প্রদান করা। লেখকের সাথে চুক্তি করে তার যতকপি বই বিক্রি হয় তিনমাস বা ছয়মাস পর যেন তার সম্মানি দেয়া হয়। সব প্রকাশক এই নিয়ম পালন করেন না। এই কারণে আমাদের সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে এবং রয়ে গেছে। আমি চল্লিশ বছর যাবত প্রকাশনায় আছি এ অভিযোগটি এখনো শুনছি। আমাদের সবার উচিত লেখকদের সম্মান করা।

আগামী মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে না শোনা যাচ্ছে। ভিন্ন কোথাও হলে সেটা কেমন হবে?

মজিবর রহমান খোকা: বইমেলাকে বাংলা একাডেমির এই গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করতে চাইনা বা সোহরাওয়ার্দিতে যে মেলা হচ্ছে এটার যে প্রাকৃতিক প্রভাব তা আমাদের বোঝা দরকার। আমরা শুধু বাণিজ্যের জন্য প্রকৃতি ধ্বংস করে দিবো, আমাদের যে অক্সিজেনের জায়গা তা নষ্ট করে ফেলবো এটা হতে পারে না। প্রথম থেকেই এর বিরুদ্ধে ছিলাম। 

আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ আছে অথবা যেখানে শুধু খোলা মাঠ আছে সেখানে হতে পারে। ঢাকার অদূরেও হতে পারে। তবে মেলা করার আগে কর্তৃপক্ষকে চিন্তা করতে হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিআরটিসি বাস বা এমন কোন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে পাঠকরা সহজে যাতায়াত করতে পারে। এবং সেখানে যাতে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকে। যেটা এখন বাংলা একাডেমি বা মেলার আশপাশে হচ্ছে না। যে পরিবেশ বিগত পঞ্চাশ বছরেও পায়নি। দর্শক, পাঠকরা ঘোরাঘুরি করতে পারবে। বসার জায়গা পাবে। যেখানে বয়োজোষ্ঠরা হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে পারবে। মেলা সরিয়ে নেয়ার আগে বিষয়গুলো ভাবতে হবে।
 

Comments

The Daily Star  | English
Impact of esports on Bangladeshi society

From fringe hobby to national pride

For years, gaming in Bangladesh was seen as a waste of time -- often dismissed as a frivolous activity or a distraction from more “serious” pursuits. Traditional societal norms placed little value on gaming, perceiving it as an endeavour devoid of any real-world benefits.

18h ago