বইমেলা বিশেষ-৭

চুপচাপ নদীর সর্বনাশ সহ্য করাও একপ্রকার অপরাধ : তুহিন ওয়াদুদ 

প্রতিদিনই নতুন নতুন বই আসছে অমর একুশে বইমেলায়। মেলার এই সময়ে নৈঋতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে শিক্ষক ও গবেষক তুহিন ওয়াদুদের 'নদী সুরক্ষায় দায়িত্বশীলতা'। নতুন বই, নদী গবেষণা ও বইমেলা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন তুহিন ওয়াদুদ।

মাঠপর্যায়ে নদী নিয়ে কাজ করেন। লিখেছেন দীর্ঘদিন। মেলায় এসেছে নতুন বই। নদীর প্রতি মমতা কিভাবে জন্মালো?

তুহিন ওয়াদুদ : নদীর প্রতি ভালোবাসা সবারই আছে। আগে আমারও নদীপ্রেম এমনি ছিল। নদী সুরক্ষায় ভালোবেসে দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছি ১৫ বছর আগে। নদীগুলোর প্রতি একরকম দায়িত্ববোধ থেকে "রিভারাইন পিপল" নামে আমরা একটি সংগঠন করি। তারপর থেকে নদীবিষয়ক লেখাপড়া। বাস্তবে নদীগুলোর অবস্থা বোঝার চেষ্টা করি। স্বল্পতম সময়ে বুঝতে পারি- নদীর সাথে আমাদের ভূখণ্ডের সম্পর্ক নিবিড়, অবিচ্ছেদ্য। নদীগুলোই আমাদের প্রাণ। জলদুগ্ধ দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ও প্রকৃতি বেঁচে আছে। আমাদের ভূমিও নদীন নির্ভর। অথচ সেই নদীগুলোর একটিও ভালো নেই। নদীর প্রতি দায়িত্বশীল সমাজ তৈরি হয়নি। মানুষকে নদী সুরক্ষায় দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা জরুরি। এই চিন্তা থেকে নদীর কাজে আমি নিবেদিত হয়েছি।

বইয়ে দায়িত্বশীলতার কথা বলেছেন। এই বিষয়ে রাষ্ট্রের না সামাজিক দায় আগে? 

তুহিন ওয়াদুদ : নদীর প্রতি দেশের সমস্ত নাগরিকদের দায়িত্ব আছে। নদী সুরক্ষায় সংবিধানে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। আইন- বিধিবিধান সব নদীর পক্ষে। যারা চাকরিসূত্রে নদী সুরক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার কথা তারা যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন তাহলে দেশের একটি নদীর তিলপরিমাণ ক্ষতি হতো না। ফলে এই ব্যর্থতা সংশ্লিষ্ট  সরকারি কর্মকর্তার হলেও তা রাষ্ট্রের কাঁধে ন্যাস্ত হয়।

কিন্তু রাষ্ট্রের না কি সমাজের দায় আগে একথা ক্রমানুসারে বলা যায় না। একই সাথে এই দায় আমাদের সবার৷ তবে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নেই। জনগণের টাকায় যার বেতন হয় তিনি যদি জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করতে না পারেন তাহলে সেটা অপরাধ।  কিন্তু একজন সাধারণ নাগরিকদের এই জবাবদিহিতা নেই। তাই বলে চুপচাপ নদীর সর্বনাশ সহ্য করাও একপ্রকার অপরাধ৷ এটি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উদাসীনতা কিংবা অজ্ঞতা হিসেবে চিহ্নিত হবে। 

নদী খেকুদের অধিকাংশ রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকে। কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন? 

তুহিন ওয়াদুদ : বিস্তর অভিজ্ঞতা হয়েছে।  অবৈধ দখলদাররা ভীষণ পৈশাচিক।  সাধারণ মানুষের পর্যায়ে এদের অনেকেই থাকেন না। এরা মনে করেন আমরা যারা নদী সুরক্ষায় কথা বলি তারা কিছু না বললে সরকার তাদের কিছুই বলবে না। ফলে শত্রুতার তির আমাদের দিকে। এক্ষেত্রে অবৈধ দখলদারদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকে না। তাদের এক দর্শন- নদী খেকো হয়ে ওঠা। সবদলের নেতাকর্মীরা মিলে জোটগঠন করে। 'বহুদলীয় নদীখেকো জোট' কাজ করছে সারাদেশে।

কখনো কখনো শারীরিকভাবেও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আমাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরেও ফেলছে। এককথায় জীবন এবং সামাজিক মর্যাদা দুটোর ওপরই নদীখেকোরা কালো থাবা বসাতে সদাপ্রস্তুত। তবে সাধারণ মানুষ যেভাবে ভালোবাসেন এর কোনো তুলনা হয় না। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল মানুষের মূল্যায়ন কম। আপনাকে আপনার সহকর্মীরা কিভাবে দেখে?

তুহিন ওয়াদুদ : বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সৃজনশীল কাজ নিয়ে শুরুতে অনেকেই ভিন্ন কথা বলতেন। ইদানিং কমেছে। আমি তো কেবল নদী নিয়ে কাজ করি না। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন কর্মচারীকে সাথে নিয়ে চারশতাধিক প্রজাতির প্রায় ৩৭ হাজার গাছ লাগিয়েছি। অনেক দুর্লভ গাছও আছে।  শুরুতে এসব নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। প্রকৃতির ছবি তোলা আমার বড় শখ। বিশেষত পাখির ছবি। অনেক দুর্লভ পাখির ছবি আমি তুলেছি। সামাজিক সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন লিখছি৷ এসব কাজের শুরুতে অনেকেই সমালোচনা করলেও সেই সমালোচকগণ এখন ভালো মূল্যায়ন করেন। তারপরও আড়ালে হয়তো সমালোচনা জারি আছে।  এই সমালোচনাটুকু আমাকে সতর্ক করে,  দায়িত্বশীলতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে এসব সমালোচক আমার পরম বন্ধু। 

আপনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু মূল একাডেমি চর্চা গবেষণার কি কাজ করছেন?

তুহিন ওয়াদুদ: পুরস্কার কাজের স্বীকৃতি আনন্দ যেমন দেয় তেমনি কাজের প্রতি আরও দায়বদ্ধ করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাজ করার পর নদী কিংবা প্রকৃতি সুরক্ষার কাজ করতে হয়। সাধারণত ছুটির দিন সরেজমিন কাজ করি। বর্তমানে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এর দায়িত্ব পালন করছি। বিভাগের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে নিয়ে বিভাগের সেশনজট শূন্যে এনেছি।  নিয়মিত জার্নাল প্রকাশ, সেমিনার আয়োজনসহ সবরকম কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও সাহিত্যে বাংলাদেশের নদনদীর প্রভাব" শীর্ষক ইউজিসি প্রদত্ত পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ এর কাজ শেষ করলাম। "ছিটমহলবাসীর জীবন ও মুক্তির আন্দোলন" নিয়ে আরেকটি গবেষণাও হয়েছে। আগামীতে আরও গবেষণা করার ইচ্ছে আছে ।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka slams desecration of nat’l flag in Kolkata

The government yesterday strongly condemned the desecration of Bangladesh’s national flag and the burning of Chief Adviser Prof Muhammad Yunus’s effigy in Kolkata as “deplorable acts”.

1h ago