নগরীর সমস্যা নিয়ে পোস্টার: এবার কবি শামীম আশরাফের নামে সাইবার আইনে মামলা

শামীম আশরাফ। ছবি: সংগৃহীত

নগরীর নানা সমস্যা নিয়ে পোস্টার তৈরির অভিযোগে ৫৪ ধারায় আটক হওয়ার পর জামিনে মুক্ত কবি ও গ্রাফিক ডিজাইনার শামীম আশরাফের নামে এবার সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলা সাইবার ট্রাইব্যুনাল জজ আদালতে মামলাটি করেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার নন্দী।

আদালতের পেশকার আব্দুল মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আদালত কাঞ্চন কুমার নন্দীর আবেদন আমলে নিয়েছেন। সাইবার আদালতের বিচারক বজলুর রহমান (জেলা ও দায়রা জজ) পিবিআইকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেছেন বলেও জানান আব্দুল মালেক।

মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, শামীম আশরাফ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক পোস্টার ডিজাইন করেছেন এবং সেসব পোস্টার নগরের বিভিন্ন এলাকায় সাঁটিয়েছেন বলে সিটি করপোরেশন নিশ্চিত হয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ ৫৪ ধারায় শামীমকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার ব্যবহৃত কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইসে অপপ্রচারমূলক পোস্টারের ডিজাইন পাওয়া গেছে।

এই মামলার বাদী সাইবার নিরাপত্তা আইনের ১৭, ১৯, ২৫, ২৬, ২৭, ২৯ ও ৩২ ধারায় শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মামলার বাদী কাঞ্চন কুমার নন্দী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে এসব পোস্টার করা হয়েছে এবং পোস্টারে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে।'

পোস্টার ডিজাইনের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র একরামুল হক টিটুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ১৮ ফেব্রয়ারি রাতে ময়মনসিংহ শহরের আমপট্টি এলাকায় শামীমের প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে কোতোয়ালি পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে।

এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিন, 'মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র একরামুল হক টিটুকে নিয়ে পোস্টার তৈরি করায় এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে শামীমকে আটক করা হয়েছে।'

তিনি জানান, অভিযানে কিছু জব্দ করা হয়নি। পুলিশ অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পরবর্তীতে আদালতের আদেশে শামীমকে কারাগারে পাঠানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি শামীমকে গ্রেপ্তারের আটকের আগে তার প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিন, 'একাধিক পোস্টার তৈরি করে মেয়রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছিল। পোস্টারটি শামীম তৈরি করেছিলেন জানতে পেরে গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তাকে শুধু জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে কেন তিনি এমন কাজ করলেন।'

তিনি সেদিন দাবি করেন, 'শামীম এসব পোস্টার ডিজাইন করার কথা স্বীকার করেছেন। নগরবাসীর যেকোনো সমস্যা, অনিয়ম ও ভোগান্তির বিষয়ে সমালোচনা করার অধিকার যে কারো আছে। কিন্তু তিনি কারো নাম উল্লেখ না করে ওই পোস্টার করেছেন, যা সম্পূর্ণ অন্যায়।'

তিনি আরও বলেছিন, 'আমাদের কথাবার্তার সময় মেয়র একরামুল হক টিটুর বড় ভাই আমিনুল হক শামীমও সেখানে এসে শামীম আশরাফের সঙ্গে কথা বলে চলে যান।'

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, শামীমের পোস্টারে নগরীর সমস্যা, বিশেষ করে তীব্র যানজট ও জলাবদ্ধতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ও তার অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে আজ সকালে নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় মানববন্ধন করেন সংস্কৃতিকর্মীরা।

আজ দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালতে শামীমের জামিন আবেদন করা হলে শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মেয়র একরামুল হক টিটু বলেন, 'সম্প্রতি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে এবং প্রিন্টিং প্রেসের ঠিকানা উল্লেখ না করে সিটি করপোরেশন ও মেয়রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে পোস্টার প্রকাশের বিষয়ে তদন্ত করতে বলেছে। পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে শামীমকে আটক করে। পোস্টারগুলো নাগরিকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে।'

'নগরবাসী ব্যালটের মাধ্যমে এসব অপপ্রচারের জবাব দেবেন' বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র।

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

59m ago