পটুয়াখালী

বাউফলে ভূমিদস্যুদের হুমকিতে ভিটা ছাড়ার আতঙ্কে ৩০ হিন্দু পরিবার

পটুয়াখালী
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

পটুয়াখালীর বাউফলের ধুলিয়া ইউনিয়নের ঘুরচাকাঠী গ্রামে পৈত্রিক ভিটা-মাটি ছাড়া হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে ৩০টি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবার।

স্থানীয় একটি ভূমিদস্যু চক্র তাদেরকে এলাকা ছাড়া করে জমি দখলের চেষ্টা করছে। ফলে, উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে পরিবারগুলো।

আতঙ্কিত পরিবারগুলোর পক্ষে চয়ন কুমার লিটন গত বৃহস্পতিবার বাউফল থানায় এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরা জানান, ঘুরচাকাঠী গ্রামে দীর্ঘকাল ধরে অন্তত অর্ধশত হিন্দু পরিবার বসবাস করে আসছেন। তাদের জমি দখলে নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হারুন কারীর নেতৃত্বাধীন স্থানীয় একটি চক্র।

তারা জানান, ২০২১ সালে নরেন রক্ষিতকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় তিন একর জমির অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করিয়ে নেন হারুন কারী ও তার ভাই কাদের কারী। এরপর নরেন রক্ষিতের বাড়ি দখল করে নেন হারুন ও তার লোকজন। এরপর তাদের হুমকির মুখে প্রাণ ভয়ে ভারতে পালিয়ে যান নরেন রক্ষিত ও তার পরিবার।

এরপর থেকেই ওই এলাকার বাকি হিন্দু পরিবারগুলোর জমি দখলের চেষ্টা শুরু করে হারুন কারী ও তার লোকজন। হিন্দুদের বসতবাড়ি, ফসলি জমির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করতে শুরু করে তারা।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, স্বেচ্ছায় এলাকা ছাড়তে না চাইলে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়। চক্রটির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই থানার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।

চয়ন কুমার লিটন বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে হারুন কারী হিন্দুদের জমি দখল করার চেষ্টা করছেন। তিন বছর আগে তৎকালীন চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে একটি ভুয়া ওয়ারিশ সনদপত্র তৈরি করে নরেন রক্ষিতের কাছ থেকে জোর করে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নেন তিনি। এরপর নরেন রক্ষিতের জমি দখল করে তাদের দেশ ছাড়তেও বাধ্য করেন হারুন। এরপর থেকেই তারা আমাদের জমিও দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।'

ভুক্তভোগী শিউলী রাণী ওঝা বলেন, 'নদী ভাঙনে ভিটে-মাটি সব হারিয়েছি। এরপর ঘুরচাকাঠী গ্রামে জমি কিনে ঘরবাড়ি করে ২১ বছর ধরে বসবাস করছি। গত বছর হারুন কারী আমাদের বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কয়েকদিন আগে আবারও বাড়ি এসে হুমকি দিয়ে দেড় লাখ টাকা দাবি করেছেন। টাকা না দিলে আমাদের জমিতে মসজিদ বানানোর হুমকি দিয়েছেন হারুন।'

সুনিল রক্ষিত বলেন, 'হারুন কারী ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়ে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করে নিতে চায়। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের ওপর নির্যাতন করে।'

একই অভিযোগ সুভাষ রাঢ়ী, করুন বৃত ঘরামী, আরতী রানী, বিমল হাওলাদার, খুকু রানী, কল্পনা রানীসহ ৩০টি পরিবারের সবার।

স্থানীয়রা জানান, হারুন কারী এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। গ্রামের মানুষকে নানাভাবে জিম্মি করে জমি দখল করে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হারুন কারী দাবি করেন, 'আমি কোনো হিন্দুর সম্পত্তি জোর করে দখল করিনি। তাদেরকে ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদের ভয়ভীতিও দেখাইনি। কিছু সম্পত্তি আমি বৈধভাবে কিনে নিয়েছি। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।'

ধুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির বলেন, 'সাবেক চেয়ারম্যান একটি ওয়ারিশ সনদপত্র দিয়েছিলেন। যেখানে দেবেন্দ্র চন্দ্র রক্ষিতের একমাত্র ওয়ারিশ দাবি করা হয়েছে তার দ্বিতীয় পুত্র নরেন রক্ষিতকে। যদিও দেবেন্দ্র চন্দ্রের পাঁচ ছেলে। বিষয়টি আমি জানার পরে তদন্ত করে সঠিক ওয়ারিশ সনদপত্র দিয়েছি।'

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন বলেন, 'অভিযোগ পেয়ে ওই গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। হিন্দু পরিবারগুলোকে হুমকি দেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। এ ছাড়া, জমিজমা নিয়েও বিরোধ রয়েছে। জমির বিরোধের বিষয়টি আদালত দেখবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka cannot engage with non-state actors: foreign adviser

Md Touhid Hossain also emphasised that peace and stability in the region would remain elusive without a resolution to the Rohingya crisis

23m ago