বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হার ৪ বছরে সর্বনিম্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হার ৪ বছরে সর্বনিম্ন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর গড় ভর্তি হারের চেয়ে নিচে ছিল। এক দশক ধরে সামান্য বৃদ্ধির পর ২০২২ এ এসে তা আবারো কমে যায়, যা গেল চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার ২০২১ সালের ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বৈশ্বিক গড় ছিল ৪২ শতাংশ। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে—বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে, সেখানে গড় হার ৩৭ শতাংশ।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, 'বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়বহুল এবং এটি দিন দিন আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।'

তিনি বলেন, ভর্তি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে ব্যয় বৃদ্ধি।

ইউনেস্কো গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে পরিবারগুলো শিক্ষার মোট ব্যয়ের প্রায় ৭১ শতাংশ যোগান দেয়।

এত বিপুল ব্যয় সত্ত্বেও স্নাতকের পর কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত, বলেন আজাদ চৌধুরী।

'আমরা একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় খুলছি কিন্তু স্নাতকদের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে এগুলো চালু হচ্ছে না। একাডেমি-ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে যোগসূত্রের অভাব রয়েছে।

লেবার ফোর্স জরিপ ২০২২ অনুসারে, পাঁচ বছরে স্নাতক বেকারত্ব দ্বিগুণ হয়েছে।

২০১৬-১৭ সালের জরিপে মোট ৩ লাখ ৯০ হাজার গ্র্যাজুয়েট বেকার পাওয়া গেছে। জরিপের সর্বশেষ সংস্করণে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৯ হাজারে।

বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০১৬-১৭ সালের ১১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এ কে আজাদ বলেন, 'সুড়ঙ্গের শেষে কোনো আলো দেখতে না পেলে শিক্ষার্থীরা কেন উচ্চশিক্ষার জন্য আসবে? অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজগুলোতে উচ্চশিক্ষার মানের মারাত্মক অভাব রয়েছে।'

ইউজিসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান এম এ মান্নান বলেন, করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী গৃহশিক্ষকের কাজ করে তাদের পড়াশোনার খরচ মেটাতেন। কিন্তু মহামারির সময় তারা সেই আয়ের উৎস হারান এবং পরবর্তীতে ঝরে পড়েন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখন মানসম্মত শিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন, বলেন এম এ মান্নান।

গত ১৫ বছরে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ।

ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৫৮টি দেশে অন্তত ৪৯ হাজার ১৫১ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন। ২০১৩ সালে ছিল ২৪ হাজার ১১২ জন এবং ২০০৮ সালে ১৬ হাজার ৬০৯ জন।

অনেক শিক্ষাবিদ বলছেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মানে অনেক দেশ থেকে পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশ কেন অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে জানতে চাইলে এম এ মান্নান বলেন, 'কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে দেশের শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি কারণ সঠিক শিক্ষা ও পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়নি।'

আরেকটি হতাশাজনক বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থী ভর্তি পুরুষদের থেকে পিছিয়ে। অথচ বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়।

২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী ভর্তির হার ছিল ১২ দশমিক ১১ শতাংশ, যেখানে পুরুষের হার ছিল ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সাত বছর পর, পুরুষদের ক্ষেত্রে ২০ দশমিক ০৭ শতাংশের বিপরীতে নারী শিক্ষার্থী ভর্তির হার ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।

ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, 'উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল এবং যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাকে পাঠানো হবে তা নিয়ে পছন্দের প্রশ্ন ওঠে, তখন পরিবারে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা অগ্রাধিকার পায়।'

এছাড়া অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের জন্য হলের মতো সুযোগ-সুবিধা নেই।

ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলমগীর এক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় আসার আগেই শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে এবং তাই ছেলেদের তুলনায় কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।

তিনি বলেন, ২০২২ সালে কম ভর্তির জন্য মহামারি থেকে সৃষ্ট আর্থিক দুরাবস্থাই দায়ী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগত মানের সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে তারা একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Parties agree on chief justice appointment, limiting emergency powers

Manifesto provision allows top-two judge choice; cabinet to approve emergency declaration

1h ago