ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব: চমেকে শিশু ওয়ার্ডে শয্যার ৩ গুণ বেশি রোগী

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডের একটি শয্যায় ছটফট করছিল আড়াই মাস বয়সী তাসনিম রাব্বি। তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। শিশুটির মা নাসিমা আক্তার নেবুলাইজেশনের মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট কমানোর চেষ্টা করছিলেন।

নাসিমা জানান, তার ছেলে এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা নাসিমা বলেন, অসুস্থতা বাড়তে থাকায় ছেলেকে নিয়ে তারা প্রথমে কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক চমেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে এই ওয়ার্ডে এখন রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। ৯০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার ২৭০ রোগী ভর্তি ছিল।

সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রায় একই জটিলতা নিয়ে এই ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয় সাত মাসের তাহসিনকে। শ্বাসকষ্ট কমাতে শিশুটিকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। শিশুটির মা ইয়াসমিন আক্তার জানান, অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিলেই তাহসিনের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা ইয়াসমিন জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাহসিনকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে, দুটি শিশুই ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ায় ভুগছিল। শীতের মৌসুমে নবজাতক ও ছোট শিশুদের মধ্যে এই রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র ঠান্ডা থাকায় নবজাতক ও শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কুলাইটিস ও ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলো এখন রোগীতে উপচে পড়েছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে আসা শিশুদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন।

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাসমিয়া মেহবুব বলেন, ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া মোট রোগীর প্রায় ৫০ শতাংশই নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কুলাইটিস এবং ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে।

এই ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা শীতকালে বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

একই চিত্র বন্দরনগরীর চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের।

হাসপাতালটির শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহিম হাসান রেজা বলেন, 'আমাদের শিশু ওয়ার্ডে ২৫০টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা শয্যার সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় অনেক শিশুকে অন্যান্য ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। কেবিনেও বাড়তি শয্যার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের বেশিরভাগই শ্বাসকষ্ট এবং ডায়রিয়ায় ভুগছে। শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ার সংক্রমণের জন্য দায়ী রোটা ভাইরাস শীত মৌসুমে সক্রিয় হয়ে ওঠে।'

শিশুদের শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শিশুরা পানিশূন্যতায় ভুগলে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুদের উষ্ণ জায়গায় রাখতে হবে যাতে ঠান্ডা না লাগে।

Comments

The Daily Star  | English
US election outcome’s likely impact on the Russia-Ukraine war

US election outcome’s likely impact on the Russia-Ukraine war

The endgame of the Ukraine war remains uncertain with US policy likely to be influenced by the outcome of the US election.

4h ago