শাহজালালে ঘন কুয়াশায় ফ্লাইট অবতরণ এখন আরও কঠিন

শাহজালালে ঘন কুয়াশায় ফ্লাইট অবতরণ এখন আরও কঠিন

ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটের শিডিউল বিঘ্নিত হচ্ছে। এরপরেও গত ১০ জানুয়ারি ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্লাইট অবতরণ করা হয়।

বিদ্যমান ক্যাটাগরি-১ আইএলএসকে ক্যাটাগরি-২ এ উন্নীত করার জন্য বর্তমানে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ রেখেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

ক্যাটাগরি-২ এ উন্নীত করা হলে গ্রাউন্ডের ভিজিবিলিটি ৫০০ মিটারের মতো কম থাকলেও পাইলট ফ্লাইট অবতরণ করতে পারবে। বিদ্যমান ক্যাটাগরি-১ এর ভিজিবিলিটি ৮০০ মিটার কিংবা তার বেশি।

বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতির কারণে ফ্লাইটের স্বাভাবিক সময়সূচি বজায় রাখতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। আইএলএস না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।

বিমানসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা বলছেন, শীতকালে সিস্টেম আপগ্রেড করা যৌক্তিক কাজ নয়।

বেবিচকের আকস্মিক এই সিদ্ধান্তের কারণে ঢাকা থেকে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের অন্যান্য বিমানবন্দরে অনেক ফ্লাইট ডাইভার্ট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা।

ফ্লাইট ডাইভার্ট করায় একদিকে যেমন যাত্রীদের ভোগান্তি, অন্যদিকে জ্বালানি খরচ, অবতরণ ও পার্কিং ফির কারণে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

পাইলটদের জন্য দেওয়া নোটামে বেবিচক জানিয়েছে, ১০ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত আইএলএস বন্ধ থাকবে।

বিমানের বেশ কয়েকজন পাইলটের মতে, বোয়িং-৭৮৭, বোয়িং-৭৭৭, এ৩৩০ ও এ৩৫০ এর মতো উড়োজাহাজগুলো শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য অন্তত এক হাজার ২০০ মিটার ভিজিবিলিটি প্রয়োজন।

তবে বিমানবন্দরটির নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয় নেভিগেশন পারফরমেন্স (আরএনপি) সিস্টেম এখনো ৮০০ মিটার ভিজিবিলিটি থাকলেই পাইলটদের অবতরণের অনুমতি দিচ্ছে।

তবে বিমানের বেশ কয়েকজন পাইলট ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, আরএনপি কোনো নির্ভুল পদ্ধতি নয়। ফলে এর জন্য আরও বেশি ভিজিবিলিটির প্রয়োজন হয়।

এয়ারলাইনস কর্মকর্তারা বলছেন, শীতকালে অবতরণের সময় পাইলটদের সমস্যা হওয়ায় ঢাকা বিমানবন্দরের আইএলএসকে ক্যাটাগরি-১ থেকে আপগ্রেড করতে হবে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কম ভিজিবিলিটির কারণে অনেক ফ্লাইট দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ডাইভার্ট করতে হয়।

কিন্তু এই সময় আপগ্রেড করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আরও জটিলতায় পড়েছেন উল্লেখ করে কয়েকজন পাইলট বলেন, আইএলএস আপগ্রেডের কাজ শীতের আগে বা পরে করা উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক পাইলট বলেন, 'এই সময়ে এটা করা ঠিক হয়নি।'

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেন, 'ফ্লাইট শিডিউল বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ফ্লাইটের গতিপথ পরিবর্তন করছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের সুবিধার জন্য এটা করছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অপারেটরের সঙ্গে পরামর্শ না করে, তাহলে তো সেটার প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই শিডিউলের ওপর পড়বে।'

গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল বলেন, এয়ারলাইনসগুলোকে বিষয়টি অন্তত ১০ দিন আগে জানানো হয়েছিল এবং তারা সেই অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, 'ডাইভার্টেড ফ্লাইটের সংখ্যা বদলায়নি। সিদ্ধান্তটি পাইলটরা নেন যে, ভিজিবিলিটি ৮০০ মিটার হলে তারা আরএনপি সহায়তা ব্যবহার করে অবতরণ করবেন নাকি ডাইভার্ট করবেন।'

শীতকালে কেন এই কাজ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম সময়সূচির ওপর ভিত্তি করে করা হয়। একটি আইএলএস সিস্টেম স্থাপনের পরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এটি সমন্বয় করতে হয় এবং আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থাকে সেটি অডিট করতে হয়। এই কাজের সবগুলোই একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কিত ও পূর্বনির্ধারিত।

Comments