বেলুচিস্তানে ইরানের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ২

এর আগে সোমবার ইরাক ও সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এ ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের সহিংসতা ও সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের এক গ্রামে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই শিশু নিহত হয়েছে। এই ঘটনাকে 'বিনা উসকানিতে আকাশসীমা লঙ্ঘন' হিসেবে অভিহিত করে চরম প্রতিক্রিয়া দেখানোর হুশিয়ারি জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইরান জানিয়েছে তারা 'নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা' চালিয়ে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমের বেলুচিস্তান প্রদেশের কোহ-ই-সাব্জ এলাকায় সশস্ত্র সংগঠন জাইশ আল-আদিলের (ইরানে জাইশ আল-ধুলম নামে পরিচিত) দুইটি সশস্ত্র স্থাপনা ধ্বংস করেছে। ইরানের সরকারপন্থি সংবাদ মাধ্যম তাসনিম এই তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে সোমবার ইরাক ও সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এ ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের সহিংসতা ও সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন। এই ঘটনাগুলোকে গাজায় চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ার উদাহরণ হিসেবেও অনেকে দেখছেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার এই হামলার ঘটনায় 'দুই নিষ্পাপ শিশু নিহত হয়েছে'।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'এই ঘটনার পরিণাম গুরুতর হতে পারে।'

বিবৃতিতে ইরানের এই বিমানহামলাকে 'বিনা উসকানিতে পাকিস্তানী আকাশসীমা লঙ্ঘনের' ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় বলেছে, 'সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হল, পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে বেশ কিছু যোগাযোগ চ্যানেল থাকা সত্ত্বেও এই অবৈধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে'।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

এই হামলার পর পাকিস্তান ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে 'কড়া প্রতিবাদ' জানিয়েছে এবং ক্ষোভ জানাতে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করেছে।

মঙ্গলবার জাইশ আল-আদিল জানিয়েছে, ইরানের সামরিক বাহিনী রেভোল্যুশনারি গার্ডস ছয়টি সশস্ত্র ড্রোন ও বেশ কয়েকটি রকেটের মাধ্যমে দুইটি বাড়ি ধ্বংস করেছে, যেখানে তাদের যোদ্ধাদের স্ত্রী ও সন্তানরা বসবাস করত।

বেলুচিস্তান প্রদেশের কর্তৃপক্ষ সিএনএনকে জানিয়েছে, এই হামলায় দুইটি মেয়ে নিহত হয়েছে এবং অন্তত চার ব্যক্তি আহত হয়েছে। নিহত মেয়ে দুইটির বয়স আট ও ১২। পাঞ্জগুর জেলা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোহ-ই-সাব্জ গ্রামে এই হামলা চালায় ইরান।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই হামলাটি চালানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন জেলার উপকমিশনার মুমতাজ খেতরান।

খেতরান আরও জানান, এই হামলায় বাড়ির কাছাকাছি অবস্থিত একটি মসজিদও ক্ষতির শিকার হয়।

ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে এক সময় জাইশ আল-আদিলের সাবেক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা হাশিমের বাড়ি ছিল। ২০১৮ সালে ইরানী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে তিনি নিহত হন।

এক দিন আগেই ইরাকের উত্তরাঞ্চলের এরবিলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সেখানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ঘাঁটি ছিল বলে দাবি করে দেশটি। এ ছাড়া, সিরিয়ায় 'ইরানবিরোধী জঙ্গি সংগঠনের' অপর হামলা চালায় দেশটি।

ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সেনাবাহিনীর কমান্ডাররা নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইরাকে হামলা চালানো হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কেরমানে জোড়া বোমা হামলায় কমপক্ষে ১০৩ জন নিহত হন। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সাবেক প্রধান কাশেম সোলাইমানির সমাধিস্থলের কাছে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ইরান দাবি করেছে, এই বোমা হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা সিরিয়ায় অবস্থান করছিলেন। এ কারণে সেখানে হামলা চালানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এক বিবৃতিতে জানান, এই হামলাগুলো 'নিখুঁত ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর ওপর' চালানো হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো।

যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও সিরিয়ার হামলাকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' বলে অভিহিত করেছে এবং এর প্রতি নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে 'নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলে সেটা আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা উচিত, হামলার মাধ্যমে নয়'।

ইরাক জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে এই হামলার বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছে। ইরাকী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন জানান, অর্ধ-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান প্রদেশের এরবিলে মোসাদের কোনো শাখা বা মোসাদ-সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যালয় নেই।

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

12h ago