প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল: হাইকোর্ট
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে একটি রায়ের পূর্ণাঙ্গ পাঠে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ পাঠে বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।
হাইকোর্ট বলেন, 'আবেদনকারী (ফখরুল) ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বা তার কোনো ভূমিকা ছিল কি না, তা সুষ্ঠু তদন্তের পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তবে এ পর্যায়ে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলে তা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অনুকূল হবে না।'
গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১০ জানুয়ারি ফখরুলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। ওই আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
আদেশের দিনই হাইকোর্ট মির্জা ফখরুলের যথাযথ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
রায়ের পূর্ণাঙ্গ পাঠে হাইকোর্ট বলেন, নিম্ন আদালত হামলার ঘটনার সিডি দেখেছে এবং মামলার সঙ্গে অভিযুক্ত আবেদনকারীর (ফখরুল) সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে।
রায়ে বলা হয়, 'মামলাটি তদন্তাধীন থাকলেও, তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব না ফেলেই আমরা বলতে পারি, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা এবং ওই বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের অভিযোগ খুবই গুরুতর। প্রকৃতপক্ষে, মাননীয় প্রধান বিচারপতি প্রজাতন্ত্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। তাই এ ধরনের হামলার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহের সমতুল্য হতে পারে।'
হাইকোর্টের বিচারকরা রায়ের পূর্ণ পাঠে বলেন, 'আমরা এই ধ্বংসাত্মক ঘটনার জুডিশিয়াল নোটিশ নিচ্ছি যে, অভিযুক্ত আবেদনকারী দীর্ঘদিন ধরে জনগণের ভোটাধিকারের দাবি করে আন্দোলন করছেন। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা গত কয়েক মাসে দেখেছি যে তথাকথিত ভোটাধিকারের জন্য যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে প্রাণহানি, অগ্নিসংযোগ, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, সরকারি-বেসরকারি ও পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে। তথাকথিত আন্দোলনকারীদের দ্বারা এক কথায় ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।'
'আমরা এই অপবিত্র ও ধ্বংসাত্মক ঘটনার বিচার বিভাগীয় নোটিশ নিচ্ছি, যা কার্যত দেশজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে। প্রকৃতপক্ষে, দেশ ও জনগণের ওপর জাহান্নামের কষ্ট নেমে এসেছে,' রায়ে বলা হয়।
গত ৩ ডিসেম্বর ফখরুল তার আইনজীবীদের মাধ্যমে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়ে বলেন, তিনি কোনোভাবেই প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি এবং হার্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন বলে উল্লেখ করেন।
গত ২৯ অক্টোবর রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় মির্জা ফখরুলকে কারাগারে নেওয়া হয়।
যোগাযোগ করা হলে ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরবর্তী আইনি ব্যবস্থার বিষয়ে তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।'
তিনি বলেন, 'মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১১টি মামলার আসামি এবং নয়টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। বাকি দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় তার জামিন আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন এবং আরেকটি মামলায় জামিন আবেদন নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন করার পরে, আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।'
Comments