‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ আমাদের কী শিক্ষা দেয়
১০০ বছর আগে আজকের ঢাকা ছিল ছোট্ট একটি শহর। ১৯২১ সালে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে নগরীতেও ক্ষীণ ধারায় একটি বিদ্বৎসমাজ গড়ে উঠতে শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর পরেই, ১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরীতে গড়ে ওঠা সংগঠন 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ' সেই ছোট্ট বিদ্বৎসমাজেরই একটি সক্রিয় অংশ। প্রচলভাঙা জিজ্ঞাসু জীবন বোধে উদ্দীপ্ত কয়েকজন মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ হয় এই সংগঠনে। তখনকার ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (ঢাকা কলেজ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সে সময়ের কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সংগঠনটি।
সকলেরই জানা, এই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষক কাজী আবদুল ওদুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মোতাহার হোসেন ও সৈয়দ আবুল হুসেন। অন্তত আরও দুজনের নাম উল্লেখ্য এই সংগঠনের সূত্রে–একজন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল ফজল, অন্যজন কবি আবদুল কাদির, যিনি তখন ঢাকা কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। সব মিলিয়ে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ছাব্বিশ সাতাশ জনের বেশি নয়! 'শিখা' পত্রিকা এই সংগঠনের মুখপত্র। পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সাল পর্যন্ত। প্রকাশিত সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। সংগঠনটির কার্যক্রম চলে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত। পত্রিকার শ্লোগানটি তো চিরপ্রণিধানযোগ্য– 'জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব'।
মাত্র অল্প কয়েকজন মানুষের মন ভাবনায় প্রত্যয়শীল হয়েছিল যে, সমাজের উন্নতির জন্য তাদের জ্ঞানার্থী ও মুক্ত মন যা করণীয় বলে বিবেচনা করবে সৎভাবে তা তারা করে চলবেন। মাত্র এক দশক পরে সামাজিক প্রতিকূলতার মুখে স্তব্ধ হয়ে পড়লেও সংগঠনটির মননশীলতা-চর্চার প্রভাব বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের মনোজগতে এখন-অবধি-প্রসারী। ১৯৭১ সাল নাগাদ বাঙালি জাতীয়তাবাদী যে দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বাস্তব করে তুলতে পেরেছে তার দার্শনিক আকাঙ্ক্ষার উৎস এই ছোট্ট গোষ্ঠীর মননশীল আন্দোলনকেই বিবেচনা করা বোধ হয় অতিরঞ্জন নয়।
বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে তৎকালীন বাংলা অঞ্চলের সামগ্রিক সাংস্কৃতিকতা ছিল এক দিকে স্থানিক, অন্য দিকে ধর্ম প্রভাবিত। তা সত্ত্বেও এ কথা বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ততদিনে একটা ক্ষীণ ধারায় হলেও মধ্যবিত্ত নগরসমাজ গড়ে উঠেছে। ফলে কলকাতা কেন্দ্রিক জীবনপ্রবাহে বৈশ্বিকতার যে বোধ গড়ে উঠেছিল তার অনুরূপ বোধ সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ঢাকা কেন্দ্রিক জীবন প্রবাহে প্রায় শুরুই হয়নি। সেই সময় মুসলিম সাহিত্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পূর্ব বাংলার মুসলিম মানসে ধর্মপ্রভাবিত স্থানিক মনকে স্থানিক সাংস্কৃতিক ও সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করতে উদ্দীপ্ত করেছে। যদিও অসাম্প্রদায়িক মনোভঙ্গির ভাবগত বোধের কোনো কোনো উপলব্ধি দার্শনিক দিক থেকে দ্বান্দ্বিকতা মুক্ত নয়–তা সত্ত্বেও এই সংগঠন চর্চিত দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষকে নতুন জীবনবোধে চঞ্চল করে তুলেছিল। সে কারণে মাত্র দশ বছরের সক্রিয়তাকে আপাতদৃষ্টিতে সামান্য সামর্থ্যবান মনে হলেও সামগ্রিক ভাবে তার সামর্থ্যকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।
মুসলিম সাহিত্য সমাজ যখন গঠিত হয় সে সময় ঢাকা নগরীতে জনবসতি সংখ্যায় ছিল, মাত্র ১ লক্ষ ৬৯ হাজার*; সংগত কারণেই মধ্যবিত্ত ও নগর সাংস্কৃতিক রুচির মানুষ হবার কথা এর তুলনায় খুবই কম। কারণ কৃষি সমাজের বাইরে তখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যার চাকরিজীবী বা সরাসরি উৎপাদন প্রক্রিয়া বিযুক্ত ব্যবসায়ী মধ্যবিত্ত আধুনিক রুচির নাগরিক-সমাজ তৎকালীন পূর্ববাংলার রাজধানীতে গড়ে ওঠার অবকাশ পায়নি। ফলে সে সময় মুসলিম প্রধান ঢাকা নগরীর জনপরিসরে উচ্চাঙ্গ সংগীতের জলসা, চিন্তামূলক সাহিত্য-সভার মতো অনুষ্ঠানাদির আয়োজন ছিল বিরল ঘটনা। কিন্তু ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সেই নগরীতে ছোট্ট সেই নাগরিক-সমাজে ঐ ধরনের সাংস্কৃতিকতা স্পষ্টতর রূপ লাভ করতে থাকে। মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রতিষ্ঠা তারই অন্যতম চিহ্ন।
নানা প্রতিকূলতায় অল্প সময়ে সংগঠনের দম ফুরিয়ে এলেও এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সৎ চিন্তা ও কর্ম প্রয়াস ঢাকার ছোট্ট নাগরিক সমাজে যে ভাবতরঙ্গের সূচনা করেছিল তার অন্তর্গত প্রভাবেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব। কারণ বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের কাম্য ছিল জ্ঞানের মুক্ততা কিংবা বুদ্ধির অনাড়ষ্টতা–যা মানুষকে সম্প্রদায় নির্বিশেষ সত্তা বলে দেখতে সামর্থ্যবান করে তোলে! চল্লিশের দশকের শেষে যে-সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিকে মনে করা হয়েছিল মুক্তির একমাত্র সূত্র এর সীমাবদ্ধতাকেও মাত্র পঁচিশ বছরের মধ্যে অতিক্রম করতে সক্ষম হয় মনের মুক্ততা ও বুদ্ধির নিগড়মুক্তি প্রাণিত সেই দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রভাবে। ঐ সময় নতুন যে দৃষ্টিভঙ্গি অর্জিত হয় তারই নাম বাঙালি জাতীয়তাবাদ। অতীত-অনুসন্ধান থেকে পাওয়া যে-বিবেচনা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ক্রমশ প্রবল করে তুলেছে তার প্রভাব সমকালীন বিশ্বের অভিঘাতে যে একদিন নাজুক হয়ে পড়তে পারে সে রকম উপলব্ধির উৎসও এই বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। এই জাতীয়তাবাদকে যদি এর সীমিত দৃষ্টিভঙ্গি অতিক্রমী বৈশ্বিকতায় হাল নাগাদ করা না যায় তাহলে আড়ষ্ট হয়ে পড়বে এই বোধও! এই অবস্থাকে অতিক্রম করতেই মুসলিম সাহিত্য সমাজের দর্শনগত প্রেরণা থেকে জ্বালানি নেয়া যেতে পারে।
গত শতাব্দীর তিরিশের দশকে যে সামাজিক প্রতিকূলতা সংগঠনটির সামর্থ্যকে হ্রাস করেছিল তা বাংলাদেশের সমাজ থেকে এখনো অবসিত হয়নি। আবার এমন অনেক শক্তি ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠেছে যে চারদিকে আমরা অনেক ধরনের অগ্রগতিও দেখতে পাচ্ছি যার উৎস এই দর্শনগত প্রেরণা। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের মূল দর্শন এতকাল যেমন পথ দেখিয়েছে নতুন নতুন সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতেও তা পথ দেখানোয় প্রাসঙ্গিক থাকবে বলে মনে হয়। এই রচনার প্রতিপাদ্য তারই একটি ইশারা মাত্র। এই রচনার পরবর্তী পর্যায়ে ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে সে সম্ভাবনাকে খোঁজার চেষ্টা করা হবে।
২
স্মরণীয়, গত তিরিশ চল্লিশ বছর ধরে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ অভিবাসী হয়েছে। তাদের একটা অংশ পেশাগত কাজে সাময়িক সময়ের জন্য অভিবাসনে গেলেও আরেকটা বড় অংশ অন্যান্য দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হচ্ছে। যে ভিনদেশের বাসিন্দাই তারা হোক না কেন সেখানে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে নিজ দেশের সংস্কৃতি-সামগ্র্যকে। যে দেশে অভিবাসী হচ্ছে সে দেশের রাষ্ট্রাচার, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিকতায় তাদের অংশগ্রহণের ফলে ফলে অভিবাসী বাঙালি সমাজের বহন করে নিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিকতাও হচ্ছে নতুন পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে সমন্বিত ভাবে চর্চিত। নতুন নতুন রাষ্ট্রের যেখানে শিল্পবিপ্লবোত্তর বুর্জোয়া জীবনবোধ অনেকটা সম্পন্ন রূপ লাভ করেছে সেখানে বাস করতে এসে ও এর রাষ্ট্রাচারে অংশ নিতে গিয়ে নিজেদের জনসমাজের যুগযুগান্তর ধরে বাহিত চৈতন্যের সঙ্গে ঘটছে নতুন সে জীবন বোধের অভিযোজন। অভিবাসী জনসমাজের এই অভিযোজনই নতুন করে মুসলিম সাহিত্য সমাজের তাৎপর্য সৃষ্টি করেছে। নিউ ইয়র্কের মতো মহানগরীতে বসবাসরত বাংলাদেশি জনসমাজের বোধিতে কী তাৎপর্যের মুখে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তা অন্বেষণের প্রশ্নই এই রচনার উদ্দেশ্য ও উপসংহার!
পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৯ সালের জরিপ অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি আমেরিকানের বসবাস ২ লক্ষ ৮ হাজার। শুধু নিউ ইয়র্ক স্টেটেই বাস করে ৯৩০০০ বাংলাদেশি-আমেরিকান। অতালিকাভুক্তদের এই হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে। এর কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও সব মিলিয়ে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের মোটসংখ্যা যে উপর্যুক্ত সংখ্যার চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশি হবে তাতে সন্দেহ নেই। শুধুমাত্র নিউ ইয়র্ক মহানগরীর বাংলাদেশি-আমেরিকানদের জনসংখ্যাকে ভিত্তি করে এখানে তাদের জীবনপ্রবাহে নিজেদের সংস্কৃতিসামগ্র্যকে ধরলেও এর অভিঘাত এই জনসমাজের অভ্যন্তরে কম গভীর হওয়ার কথা নয়।
একশো বছর আগে ঢাকা নগরীতে মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার যে অভিমুখের কথা ভাবা হয়েছিল তাতে ছিল তারও প্রায় শতবর্ষ আগের কলকাতা কেন্দ্রিক আধুনিক তথা বৈশ্বিক জীবনাগ্রহের ধরনে ঢাকা কেন্দ্রিক জীবনবোধের উজ্জীবন। কলকাতা নগরীতে যে জীবনজিজ্ঞাসা জেগেছিল তা অবিকল পাশ্চাত্য সমাজের অনুরূপ না হলেও একেও সীমিত অর্থে রেনেসাঁসই বলা যায়। বিশ শতকের প্রথম দিকে ঢাকায়ও কলকাতার ধরনেই মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজ গড়ে উঠছিল। ঢাকার মানুষদের মনে হয়েছিল কলকাতার বোধের সঙ্গে তাদেরও অন্নদাশঙ্কর রায়ের ভাষায় পা মিলিয়ে নেয়া দরকার। কারণ জীবন সম্পর্কে তাদের মধ্যেও কলতার অনুরূপ বৈশ্বিক জীবনধারা থেকে পাওয়া নতুন জিজ্ঞাসা জেগে উঠতে শুরু করেছিল ততদিনে।
মুসলিম সাহিত্য সমাজের আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে কবি মোহিতলাল মজুমদারও তা লক্ষ্য করে উজ্জীবিত বোধ করেছিলেন। মুসলিম সাহিত্য সমাজের সাহিত্য সভায় পঠিত রচনাগুলোতেও ছিল মুসলিম সমাজের মননে জাগরিত নতুন সেই সব বোধের প্রকাশ। সেই সময়ের নিজেদের মধ্যেকার জিজ্ঞাসা ও তর্ক-বিতর্কই তাদের মনে জাগিয়েছিল আধুনিক রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির বোধ। কেবল তা-ই নয়, এই নতুন পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের জীবনকে নানা মাত্রায় বিবেচনা করার বিচিত্র অভিমুখ পরবর্তী চল্লিশ পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে পেয়েছিল এক ধরনের পরিণতি।
বাংলাদেশের তুলনায় নিউ ইয়র্কে নাগরিকদের পক্ষে অধিকার প্রাপ্তির বস্তুগত ও অবস্তুগত পরিমাণ উভয়ই বেশি। অথচ সেই সব অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশি-আমেরিকানরা উৎসদেশ থেকে বহন করে নিয়ে আসা নিজেদের মধ্যেকার সুকুমার চেতনাকে যথেষ্ট পরিশীলন করার সুযোগ নিতে পারে না। নাগরিক হয়েও বহু বছরের চর্চিত বুর্জোয়া রাষ্ট্রাচারের কাছে প্রাপ্য অধিকারকে আমেরিকান-বাংলাদেশি জনসমাজ যেন অবচেতনে বিদেশি সুবিধা মনে করে। ফলে উৎসদেশ থেকে বহন করে আনা সংস্কৃতিকে ভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে নবায়ন করার উদ্যম হারিয়ে ফেলে। প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে না পারায় নিজেদের অজান্তেই নিজেদের সংস্কৃতিই চর্চাগত সীমাবদ্ধতায় ক্রমশ উৎকর্ষে জড়তাক্লিষ্ট হয়ে পড়তে থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তীর্ণ হতে মুসলিম সাহিত্য সমাজের অভিজ্ঞতা অভিবাসী বাংলাদেশি জনসমাজকে পথের ইশারা দেখাতে পারে।
৩.
অভিবাসী বাংলাদেশি জনসমাজের সাংস্কৃতিক বাস্তবতা এই যে, অনিচ্ছা কিংবা উদাসীনতা থাকলেও অভিবাসী জীবনে রাষ্ট্রসংস্কৃতির নানা স্বাতন্ত্র্য ও জীবনযাপনের বিচিত্র বাস্তবতা তাদের জীবনবোধকে অনেকটা অসচেতনতার মধ্যে রেখেই প্রভাবিত করে চলে। এই প্রভাব তখনই দৃশ্যমান হবে যখন সচেতন সাংগঠনিকতা নিজেদের সচেতন অনুশীলনকে নিজেরা শনাক্ত করতে পারবে। নতুন বাস্তবতায় সচেতন অনুশীলনের বিষয়কেই মুসলিম সাহিত্য সমাজের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
সংস্কৃতি সব সময়ই নানা বাস্তব প্রতিক্রিয়ায় বদলে বদলে চলে। বাংলাদেশের কৃষিসংস্কৃতি এখনো প্রধান প্রভাবক থাকলেও শিল্পায়ন, নগরায়ণ, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও পরিবর্তন এবং অর্থনীতির বিস্ফার বাংলাদেশেরও সামগ্রিক সংস্কৃতিকে বদলে দিচ্ছে। এই বদলের প্রক্রিয়ায় অভিবাসী সমাজও ভূমিকা রাখতে পারে ভিনদেশে বসবাসসূত্রে তাদের নিজেদের পা মিলিয়ে নেয়ার অভিজ্ঞতা দিয়ে। এই পা মিলিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় মুসলিম সাহিত্য সমাজের মনন-অভিজ্ঞতা ও জীবনদৃষ্টি থেকে শিক্ষা নিতে পারে!
অভিবাসিত দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সংখ্যার দিকে লক্ষ্য করে এই ধরনের ভাবনাকে এখন আর অলীক মনে করা ঠিক হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় আয়তনের দেশেও বাংলাদেশি জনসমাজ যে সংখ্যাবিচারে এখন আর উপেক্ষণীয় নয় তা পূর্বোক্ত পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।
অর্থাৎ যে সংখ্যক বাংলাদেশের মানুষের অভিবাসী জনসমাজ এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে তাতে এই বিবেচনায় জোর দেয়া যায় যে, অভিবাসীদের সচেতন মননের প্রভাব বাংলাদেশের সামগ্রিক সংস্কৃতিতেও একসময় যথেষ্ট ক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে। মুসলিম সাহিত্য সমাজের গুটিকয় মানুষ যেমন ঢাকা নগরীর তৎকালীন বাস্তবতায় নতুন জীবনবোধে উজ্জীবিত হয়েছিল তেমনি অভিবাসী বাংলাদেশি জনসমাজও তাদের নতুন বাস্তব পরিস্থিতিতে অহৃত জীবন বোধের প্রভাব বাংলাদেশে রাখতে পারে নিজেদের মধ্যেকার উৎকর্ষ-আকাঙ্ক্ষী সৎ চর্চার মধ্য দিয়ে। কারণ অভিবাসিত দেশের রাষ্ট্রসংস্কৃতিতে পাওয়া নাগরিক অধিকার উৎকর্ষ-আকাঙ্ক্ষী সৎ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের বহন করে আনা সংস্কৃতিকেও হাল নাগাদ করে নিতে পারে। এই চর্চা যখন অভিবাসী জনসমাজে উজ্জ্বলতর হবে তখন তা পরোক্ষে অন্তর্ভূত হবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিকতায়ই।
এই বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণেই এই রচনার একদিকে উদ্দেশ্য ও অন্যদিকে মুসলিম সাহিত্য সমাজের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষার স্মরণ!
Comments