রাজনীতিতে টিকে থাকতে প্রভুদের পরামর্শে কাজ হবে না: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান দলটির নেতাকর্মীরা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশি প্রভুদের পরামর্শ মেনে চললে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।

তিনি বলেন, 'বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে নেমেছিল। তাদের কিছু (বিদেশি) প্রভু আছে। তারা বাংলাদেশের জনগণকে চেনে না। প্রভুদের পরামর্শে বাংলাদেশে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।'

জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে আজ মঙ্গলবার শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে গণভবনে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এই বিজয়ে শেখ হাসিনার টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা তার বড় বোন শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া উপহার দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি। তাই দলটির কোনো বিদেশি প্রভু নেই।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'আমাদের কোনো (বিদেশি) প্রভু নেই। বাংলাদেশের জনগণই আমাদের প্রভু ও শক্তি। জনগণের বিশ্বাস ও আস্থাই আমাদের শক্তি।'

তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত চক্রের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চমৎকার এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, '৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।'

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী নির্বাচনের মধ্যে সদ্য অনুষ্ঠিত এই ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক।

তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এ সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে সবকিছু ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে তারা ভোটের দ্বার উন্মোচন করেছেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, দল মনোনীত অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন, যদিও তারা মনে করেছিলেন তারা জয়ী হবেন।

দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদের ফায়দা লোটার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'জনগণের ম্যান্ডেটকে সম্মান দেখিয়ে, সবকিছু ভুলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করুন।'

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, এটি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ফলাফল।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসনে ১৩০ বছর বয়সী এক নারী নৌকায় ভোট দিয়েছেন।

বয়স্ক ওই নারীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি শেষবারের মতো শেখ হাসিনাকে ভোট দিতে চাই।'

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৮টির মধ্যে ২২২টি আসন পেয়েছে। আগামীকাল সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তাদের নেতাকর্মীরা এখন হতাশ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র বারবার চেষ্টা করেছে।

'তবে তারা ব্যর্থ হয়েছে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এবারও তাদের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার জন্য জনগণকে পুড়িয়ে হত্যা করছে এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করছে।

তিনি আরও বলেন, যাদের মনুষ্যত্ব আছে তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে না।

তিনি বলেন, নির্বাচনে কতিপয় রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করা কোনো ব্যাপার নয়, জনগণের অংশগ্রহণই গুরত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যদি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় না চায়, আমরা তাদের ম্যান্ডেট মেনে চলব।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসায় জনগণ দেড় মাসের মধ্যে বিএনপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।

তারা ২০০৬ সালে ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করার পর কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিল এবং দেশবাসী তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোনো অন্যায়কে কখনোই মেনে নেয় না।

প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

4h ago