জাতীয় পার্টির ভরাডুবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গতকাল ভরাডুবি হয়েছে জাতীয় পার্টির। দলীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ১১টি আসনে জয়লাভ করেছে দলটি।

এটি ১৯৯১ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের পতনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর সবচেয়ে খারাপ ফলাফল।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২২১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩৫টিতে জয় পেয়েছিল জাপা।

১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে দলটি যথাক্রমে ৩২ এবং ১৪টি আসন পেয়েছিল। জাপা ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অধীনে অংশ নেয় এবং ২৭টি আসনে জয় পায়।

২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে জাপার ৩৪ জন প্রার্থী বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অধীনে নির্বাচনে দলটি ২২টি আসনে জয় পায়।

গতকালের ১১ জন বিজয়ী হলেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), জিএম কাদের (রংপুর-৩), এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১), শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ (বগুড়া-২), আশরাফুজ্জামান (সাতক্ষীরা-২), রুহুল আমিন হাওলাদার (সাতক্ষীরা-২)। পটুয়াখালী-১, গোলাম কিবরিয়া টিপু (বরিশাল-৩), মুজিবুল হক চুন্নু (কিশোরগঞ্জ-৩), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩) ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫)।

জাপার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানান।

জাপা এবার ২৬৫টি আসনে প্রার্থী দেয়। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৩০ জন দলীয় প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচারণায় খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না।

আওয়ামী লীগ ও জাপার জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকের পর ক্ষমতাসীন দল ২৬টি আসন জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয়। ১১ জন বিজয়ী সেই ভাগ করা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের গতকাল বলেছেন, 'সবসময় আমাদের আশঙ্কা ছিল যে, নির্বাচনে নিয়ে এসে আমাদের কোরবানি করা হবে। কোরবানি করে নির্ভেজাল, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হবে। এসব আশঙ্কা সত্যি হয় কিনা বিকেল হলেই বোঝা যাবে।'

রংপুর-৩ আসনের ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের পর সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'যেহেতু আমরা নির্বাচনী লড়াইয়ে যোগ দিয়েছি, এখনই বয়কটের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনের ফলাফল দেখে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে।'

ঢাকা-১৮ আসনে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফ কাদের হেরে গিয়েছেন। নির্বাচনে পরাজিত দলের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন গাইবান্ধা-১ আসনে শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমাম।

গতকাল জাতীয় পার্টির ১১ জন প্রার্থী তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জাল ভোট, ভোটকেন্দ্র দখলসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, গত ১০ দিনে জাতীয় পার্টির ৩১ জন প্রার্থী একতরফা ও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না অভিযোগ করে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউল রাজি স্বপন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা তার নির্বাচনী এলাকার প্রায় সব ভোটকেন্দ্র দখল করে নিয়েছে।

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন আমার পোলিং এজেন্টদের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমি অনেকগুলো ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি এবং এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।'

'দুপুর ২টার দিকে ভোট কারচুপির প্রতিবাদে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিই,' বলেন তিনি।

মোহাম্মদ আলীসহ জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন প্রার্থী রেজাউলের অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

গতকাল নির্বাচন থেকে যারা সরে দাঁড়ান তারা হলেন-- রেজাউল রাজী স্বপন চৌধুরী (ঠাকুরগাঁও-১), মো. দেলোয়ার (লালমনিরহাট-২), জহুরুল হক (যশোর-৪), মোহাম্মদ আলী (টাঙ্গাইল-১), এনায়েত হোসেন (ময়মনসিংহ-২) , মীর শামসুল আলম লিপটন (জামালপুর-৩), এএনএম রফিকুল ইসলাম সেলিম (নরসিংদী-২), আলমগীর সিকদার লোটন (নারায়ণগঞ্জ-২), ইয়াহহিয়া চৌধুরী (সিলেট-২), সাজ্জাদ রশিদ (চাঁদপুর-৪) ও নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টু (কক্সবাজার-৪)।

Comments

The Daily Star  | English

Poll irregularities: Sedition among 3 new charges added against three ex-CECs

BNP filed a case against 24 individuals, including three former chief election commissioners, 10 election commissioners, and top government and police officials, for their alleged role in irregularities during national polls in 2014, 2018, and 2024

42m ago