টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ

পূর্বানুমাণ অনুযায়ী,  টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে জয় লাভ করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনে ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে।

গতকাল বিকেল ৩টায় ভোট পড়েছে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, কিন্তু বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর, নির্বাচন কমিশন জানায় যে চূড়ান্ত ভোট প্রায় ৪০ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এক ঘণ্টায় ভোট বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

২০১৮ সালের নির্বাচন, যাকে 'রাতের ভোট' হিসাবে অভিহিত করা হয়, সেখানে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল।

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে ভোট দেওয়ার হার ছিল ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

গতরাত ৩টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ১৬২ প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের ৫০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন।

অন্তত তিন জন প্রতিমন্ত্রী ও ১৪ জন বর্তমান সংসদ সদস্য নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে হেরেছেন।

জাতীয় পার্টি ১১টি, আওয়ামী লীগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি-ইনু) একটি করে আসন পেয়েছে।

এই জয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির বয়কটের হুমকির পর শেখ হাসিনা প্রশাসন বেশ কিছু কৌশল গ্রহণ করে। যার মধ্যে চাপ তৈরি করা এবং বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব ছিল।

পরবর্তীতে শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করেন এবং নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলের যেকোনো নেতা-কর্মীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানান।

চুক্তির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি আসন এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য ৬টি আসন ছেড়ে দেয়। এই ছয়টি আসনে জাসদের তিন জন, ওয়ার্কার্স পার্টিতে দুই জন এবং জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) একজন।

গতকাল ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে জাতীয় পার্টির ১১ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। সব মিলিয়ে দলের ৪৩ জন প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এছাড়া দুই শতাধিক প্রার্থী 'একতরফা ও পরিকল্পিত' অভিযোগে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

মূলত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের 'স্বতন্ত্র' প্রার্থীদের মধ্যে হওয়ায় এর ফলাফল আগে থেকেই অনুমিত ছিল যেকারণে নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের আগ্রহ ছিল কম।

সারা দেশে লক্ষণীয়ভাবে কম ভোটার উপস্থিতি ছিল এবং অনেক ভোটকেন্দ্রে সারা দিন ধরে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি।

ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটসহ ৩৭টি জেলার ৩৫০টিরও বেশি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন দ্য ডেইলি স্টারের ৭৬ জন সাংবাদিক। অনেক কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং পোলিং এজেন্টরা ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় অলস সময় কাটান।

রাজধানী ও অন্যান্য স্থানে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা ভোটারদের জন্য খাবার ও পরিবহনের ব্যবস্থা করেছিলেন, তবে ভোটার সংখ্যা আশানুরূপ আসেনি।

তবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমানে সমানে লড়াইয়ের কারণে বেশ কয়েকটি আসনে উল্লেখযোগ্য ভোট পড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, কিছু হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছেন।

বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। মুন্সীগঞ্জে একজন নিহত এবং দেশের কয়েকটি স্থানে আরও অনেকে আহত হয়েছেন। গাজীপুরে দায়িত্ব পালনকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের মৃত্যু হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের অনেক জায়গায় ভোটকেন্দ্র এলাকায় জড়ো হতে দেখা গেছে। আবার কাউকে বুথের ভেতরেও দেখা গেছে। ২৯৯টি আসনের ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সাতটিতে অনিয়মের কারণে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এখনও আসেনি। তবে কয়েকজন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ভোটগ্রহণের ব্যবস্থার প্রশংসা করে বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর বার বার আহ্বানের মধ্যে এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার জন্য কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে এবং একই কারণে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দেয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই নির্বাচন গণতন্ত্র ও দেশের জনগণের বিজয়।

তিনি বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা (বিএনপি) অপপ্রচার চালিয়ে আন্তর্জাতিক বন্ধুদের এবং বাংলাদেশের বন্ধুদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল।

গতকাল হরতাল পালনকারী বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে বলেছে, তারা আজ এ বিষয়ে জানাবে।

তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, তাদের ভোট বর্জন সফল প্রমাণিত হয়েছে।

ভোটগ্রহণ শেষে তিনি তার গুলশানের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'দেশবাসী তাদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। এমনকি আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও ভোট কেন্দ্রে যাননি।'

বিএনপি সরকার পতন এবং নির্বাচন তদারকির জন্য নির্দলীয়- নিরপেক্ষ প্রশাসনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল, তবে সরকার এই দাবিকে অসাংবিধানিক বলে প্রত্যাখ্যান করে।

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর পুলিশ বাধা দিলে বিএনপির সড়ক কর্মসূচি শেষ হয়।

এরপর সরকার দ্রুত বিরোধী দলীয় নেতা ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করে।

গতকাল যখন সারা দেশে নির্বাচন শুরু হয়, তখন মাত্র দুই মাসের মধ্যে বিএনপির ২৭ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয় এবং ১ হাজার ৭০০ জনকে রাজনৈতিক মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago