সুইজারল্যান্ডে প্রাণীদের সুরক্ষায় ব্যাক্তিগত পর্যায়ে আতশবাজি নিষিদ্ধের দাবি

রয়টার্স ফাইল ছবি

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সুইজারল্যান্ডেও বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও নববর্ষকে ঘিরে আতশবাজির উৎসব করা হয়। তবে দেশটিতে আতশবাজি বিরুদ্ধে এখন জনমত তৈরি হচ্ছে। দেশটির সচেতন নাগরিকরা বলছেন, আতশবাজির সংস্কৃতি শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ এবং বন্যপ্রাণিদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এটি একটি উপদ্রব। এই উপদ্রব বন্ধ হওয়া উচিত।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, সুইজারল্যান্ডের ৬৮ জন মানুষ আতশবাজীর অপব্যাবহারের বিরুদ্ধে। তারা চাইছেন ক্ষতিকর এই সংস্কৃতি বন্ধ হউক।

সুইজারল্যান্ডের আতশবাজির অপব্যবহারের বিপক্ষে সবগুলো রাজনৈতিক শিবিরে জনমত তৈরি হচ্ছে। কট্টর জাতিয়তাবাদী রাজনৈতিক দল, ফলক্স পার্টির (এসভিপি) ভোটাররাও এই উদ্যোগকে সমর্থন করছেন। সবুজ দলগুলো তথা পরিবেশবাদীরা অনেক আগে থেকে এই দাবিতে সোচ্চার আছেন।

তবে আতশবাজির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সুইজারল্যান্ডের জনগণই। ছোট-বড় অনেক ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য এদেশে গণভোট আয়োজন করতে দেখা যায়। শেয়ালের উপদ্রব কমাতে কোন বনে কয়টি শেয়াল মারা উচিত সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় জনমত যাচাই করে। ফলে আতশবাজির অপব্যবহার বন্ধে যেকোনো পদক্ষেপ নির্ভর করছে জনগণের মতামতের ওপর।

সুইজারল্যান্ডের ৩২ শতাংশ খামারির অভিযোগ, উচ্চ শব্দের আতশবাজি পোষা প্রাণী এবং খামারের পশুদের আতঙ্কিত করে, তাদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। এতে করে পশুপাখিদের মধ্যে অস্থিরতা বা স্ট্রেস তৈরি হয় এবং তাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। এমনকি পশুপাখি অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্ট্রেসের কারণে গরু স্বাভাবিকের তুলনায় কম দুধ দেয়।

তবে ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে আতশবাজির পক্ষেও রয়েছে সুইসদের একাংশ। আতশবাজির বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাতে তারা হতাশ। প্রায় ২৪ শতাংশ মানুষ এখনো চাইছেন, শত শত বছর ধরে চলে আসা এই সংস্কৃতি সামনেও চলুক। আতশবাজি শিল্পের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা জড়িয়ে আছে। কারণ সুইস মেইড আতশবাজি গুণেমানে এবং নিরাপত্তায় বেশ উন্নত।

আতশবাজির যথেচ্ছ ব্যবহার সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণউপদ্রবে পরিণত হয়েছে। এরমধ্যে জুরিখ অন্যতম একটি শহর। সময়ে অসময়ে, যেকোনো অনুষ্ঠান, এমনকি জন্মদিন উদযাপনেও এখানে হারমামেশা আতশবাজি ব্যবহার করা হয়। হাতের কাছে প্রায় সব বিপণি বিতানেই আতশবাজি পাওয়া যায়। স্বাধীনতার মাসের নামে আগস্টে এবং নববর্ষের নামে পুরো ডিসেম্বর মাসেই আতশবাজি নিয়ে আনন্দ করতে দেখা যায় কিছু মানুষকে। এই সংস্কৃতির অবসান চাইছেন উদ্যোগীরা।

২০১৭ সাল থেকে জুরিখ লেকের জাহাজ এবং লঞ্চগুলো অতি জরুরি বিপদ সংকেতের বাইরে হর্ন বাজাতে পারেন না। হর্ন বাঁজানো ৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য ছিল। জাহাজগুলো ঘাটে ভিড়বার সময় এবং ছেড়ে যাবার সময় হর্ন বাজিয়ে জানান দিত। এটাই ছিল নিয়ম। জুরিখ লেকের ধারে বসবাসকারী লোকজন শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে মামলা করেন। অনেক দিন ধরে চলা যুক্তিতর্ক শেষে আদালত হর্ন বাজানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।

রাতে ঘুমানোর জন্য নিঃশব্দের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইজারল্যান্ডে রাত ১টার পরে কোনো গণপরিবহন চালু থাকে না। এই সময়ে মেইন স্টেশনগুলোর ভেতরে কেউ অবস্থানও করতে পারেন না। স্টেশন থাকে নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে। এক সময় শেষ ট্রেন বা বাসে এসে স্টেশনেই রাত কাটাতে পারতেন অনেক যাত্রী। ছিল রেষ্ট রুমের ব্যবস্থাও। এই সুযোগটা অনেকদিন ধরেই আর নেই। স্টেশনে রাতভর কোলাহল করার কোনো সুযোগ নেই।

সুইজারল্যান্ডে মধ্যরাতের পর বিমান উঠানামা করতে পারে না। বিমানবন্দরের ভেতরের মার্কেটগুলোও এ সময়ে বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরেই এ নিয়ম চলছে। এখন শতশত বছরের পুরোনো আতশবাজির ঐতিহ্যেরও লাগাম টানা হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Public admin reforms: Cluster system may be proposed for ministries

The Public Administration Reform Commission is likely to recommend reducing the number of ministries and divisions to 30 from 55 to improve coordination and slash the government’s operational cost.

6h ago