শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় ৫ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য শিক্ষার্থীর আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার স্বপ্ন থাকে। অনেকে সেই স্বপ্ন ছুঁতে পারেন, অনেকে পারেন না।

বিখ্যাত এসব বিশ্ববিদ্যালয় যে শুধু পড়াশোনা ও গবেষণার দিক থেকেই অনন্য তা নয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যকলায়ও বেশ সমৃদ্ধ। অনেক ক্যাম্পাসে বিখ্যাত অনেক সিনেমারও শুটিং হয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যটনের জন্যও বিখ্যাত। শিক্ষার্থী না হলেও আপনি যদি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, লাইব্রেরি এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ঘুরে দেখতে পারেন, তাতে জানার জগৎ অনেকটাই বিস্তৃত হবে।  

নিচের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনার ভ্রমণ তালিকায় যুক্ত করতে পারেন-

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১০৯৬ সালে চালু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমান ইংরেজি ভাষাভাষী বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা, গবেষণা এবং সমাজে অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতির কারণে এটি অনেকের জন্য একটি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় হলেও, এর ক্যাম্পাসটিও দেখার মতো।

হ্যারি পটার সিনেমা সিরিজের কিছু অংশের শুটিং হয়েছে এখানে। বিখ্যাত হগওয়ার্টস ডাইনিং হলের অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ডের এই ক্রাইস্ট চার্চ থেকে।

যদিও হ্যারি পটারে দেখানো ডাইনিং হল আর আসল ক্রাইস্ট চার্চের মধ্যে হুবহু মিল নেই, তবে ভালো করে খেয়াল করলে দুটির মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।

ক্রাইস্ট চার্চ হলের যে বিখ্যাত সিঁড়ি, সেটিও হ্যারি পটারে দেখানো হয়েছিল। এই সিঁড়িটিই হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে হগওয়ার্টসের নতুন ছাত্ররা প্রথমবারের মতো প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের দেখা পায়। অক্সফোর্ডের ডিভাইনিটি স্কুলেও হ্যারি পটারের চিত্রায়ন হয়েছিল।

যারা হ্যারি পটারের ভক্ত না, তাদের জন্যও অক্সফোর্ডে দেখার মতো অনেক কিছু আছে। অক্সফোর্ডের স্থাপত্যকলা মুগ্ধ করার মতো। ১৭৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত রেডক্লিফ চেম্বার বিশ্বের অন্যতম সুন্দর লাইব্রেরিগুলোর মধ্যে একটি।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন স্থান ঘুরে দেখানোর জন্য ট্যুর গাইড পাওয়া যায়। দেড় ঘণ্টার জন্য একজন গাইড নিলে বাংলাদেশি টাকায় খরচ পড়বে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাকার মতো।

ট্রিনিটি কলেজ, ডাবলিন

ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ালে নিজেকে সাহিত্যিক ঐতিহ্যের অংশ বলে মনে হবে। ব্রাম স্টোকার, স্যামুয়েল বেকেট, জোনাথন সুইফট এবং অস্কার ওয়াইল্ড এই কলেজেই পড়াশোনা করেছেন।

ট্রিনিটি কলেজ, ডাবলিন
ট্রিনিটি কলেজ, ডাবলিন। ছবি: সংগৃহীত

১৫৯২ সালে রানী প্রথম এলিজাবেথ ডাবলিনের কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ট্রিনিটি কলেজের পরীক্ষা হল, যাকে স্যার উইলিয়াম চেম্বার্স থিয়েটারও বলা হয়, একটি ঐতিহাসিক স্থান যেখানে আপনি অষ্টাদশ শতকের মনোমুগ্ধকর ইন্টেরিওর উপভোগ করতে পারবেন।

এই ক্যাম্পাসের প্রাচীন কাঠামো, ১৭৯৮ সালে নির্মিত চ্যাপেল, ১৬৯০ সালে নির্মিত লাল ইটের রুবিক্স কাঠামো আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

নিও-গোথিক মিউজিয়াম বিল্ডিংয়ে অবস্থিত প্রাণীবিজ্ঞান জাদুঘর শিশুদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা। এই জাদুঘরে বিপন্ন নানা প্রাণী দেখা যাবে।

ট্রিনিটি কলেজের আরও যে দুটি স্থানে না গেলেই নয়, সেগুলো হচ্ছে আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স ভবনের ডগলাস হাইড গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট এবং ১৯৬৭ সালে পল কোরালেকের নকশা করা বার্কলে লাইব্রেরি।

কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কর্মচারী এবং ট্রিনিটির পেশাদার ট্যুর গাইডরাই শুধু পর্যটকদের গাইড সেবা দিতে পারেন। তবে আপনি নিজে নিজেই পার্লামেন্ট স্কয়ার, লাইব্রেরি স্কয়ার, ফেলোস' স্কয়ার এবং নিউ স্কয়ারে ঘুরে বেড়াতে পারেন।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি), লস অ্যাঞ্জেলেস

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও ইউএসসি হলিউড সিনেমার দৃশ্যায়নের জন্যও একটি বিখ্যাত জায়গা। হলিউড থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান। ফরেস্ট গাম্প, দ্য গ্রাজুয়েট, প্রিন্সেস ডায়েরি ২, দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কসহ ৭০টিরও বেশি হলিউড সিমেনায় ইউএসসির লাল ইটের ভবন দেখা গেছে। এ ছাড়া বহু টিভি সিরিজের দৃশ্যায়নও হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া
ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া। ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া লিগ্যালি ব্লন্ড সিনেমায় এলি উডসের সম্ভাব্য হার্ভার্ড যাত্রার দৃশ্যায়ন হয়েছে ইউএসসি ক্যাম্পাসে। ফরেস্ট গাম্প সিনেমায় ফরেস্টের স্নাতক দৃশ্যের দৃশ্যায়ন হয়েছে ইউএসসির বোভার্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভবনের সামনে।

বহু কালজয়ী সিনেমার দৃশ্যায়নের সাক্ষী এই ক্যাম্পাসটি। তাই সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এই ক্যাম্পাস ভ্রমণ একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হবে।

পর্যটকদের সহায়তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত ট্যুর গাইড আছে এবং তার জন্য আগে থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তবে ইউনিভার্সিটি পার্কে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যানকুভার

বিশ্বের অন্যতম সেরা ও প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া। শহর থেকে মাত্র ২৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি অসাধারণ আতিথেয়তার জন্যও বিখ্যাত। ক্যাম্পাসে সবসময়ই কিছু না কিছু চলতেই থাকে, তাই হুট করে এখানে আসলেও উপভোগের কোনো ঘাটতি হবে না।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া। ছবি: সংগৃহীত

শিল্প, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিনোদন, বাগান, সৈকত এই ক্যাম্পাসে সবাই নিজের চাহিদামতো অনুষঙ্গ খুঁজে পাবেন এবং নানা রকম আকর্ষণ থাকায় এটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রও।

'এক্স-মেন অরিজিনস: উলভারিন' সিনেমায় যে ভবনকে গেরিলা সামরিক ঘাঁটি হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেটি এই ক্যাম্পাসেরই ১২ তলা বুকানন টাওয়ার। এই ভবনটি ক্যাম্পাসের ১৮৭৩ ইস্ট মল রোডে অবস্থিত। ক্যাম্পাসটি ঘুরে দেখতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৪৫১ সালে, যা এটিকে যুক্তরাজ্যের চতুর্থ এবং স্কটল্যান্ডের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে। নিজে নিজে অথবা একজন গাইডসহ ক্যাম্পাসটি ঘুরে দেখা যাবে। এই ক্যাম্পাসে ঘুরলে বিশ্ববিদ্যালয়টির দীর্ঘ আবিষ্কারের ইতিহাস এবং মর্যাদা সম্পর্কে জানতে পারবেন। অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ এবং টেলিভিশন জগতের পথিকৃৎ জন লোগি বেয়ার্ড এখানেই পড়াশোনা করেছিলেন।

ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড
ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক, শিক্ষর্থী ও কর্মচারী-কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন, ইউনিভার্সিটি চ্যাপেলে তাদের নাম খোদাই করা আছে। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপেল স্কটল্যান্ডের বিরল কয়েকটি স্থানের একটি, যেখানে ক্যাথোলিক এবং প্রটেস্ট্যান্টদের বিয়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

স্যার জন জেমস বার্নেট প্রাচীন গোথিক শৈলী অনুসারে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির নকশা করেছিলেন এবং এর চমৎকার রঙিন গ্লাসের জানালার নকশা করেছেন ডগলাস স্ট্রাচান। ১৬৯০ সালে লায়ন ও ইউনিকর্ন সিড়ির নকশা করেন উইলিয়াম রিডল। ১৮৭০ সালে ক্যাম্পাসটি শহরের 'হাই স্ট্রিট' থেকে গিলমোরহিলের বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় এই সিঁড়িটির প্রতিটি পাথর ঘোড়া ও গাড়ির মাধ্যমে সরিয়ে আনা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেসব পাথর দিয়ে হাতে তৈরি নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়।

আরও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে কেলভিন হাউজ (তাপমাত্রা পরিমাপক স্কেল কেলভিন স্কেলের জনক লর্ড কেলভিনের নামে নামকরণকৃত), দ্য গিলবার্ট স্কট ভবন, দ্য হান্টারিয়ান মিউজিয়াম, দ্য হান্টারিয়ান আর্ট গ্যালারি, দ্য মেমোরিয়াল গেটস। এ সবগুলো স্থানই ঐতিহাসিক। 

অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English

1,500 dead, nearly 20,000 injured in July uprising: Yunus

He announced plans to demand the extradition of deposed dictator Sheikh Hasina from India

1h ago