কেন্দ্রের বাইরে দেখবে ইসি, ভেতরের দায়িত্ব পোলিং এজেন্টদের: সিইসি

কেন্দ্রে বাইরে দেখবে ইসি, ভেতরের দায়িত্ব পোলিং এজেন্টদের: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

কেন্দ্রের বাইরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষ জনবল ভোটের সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখবে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, পোলিং এজেন্ট দিয়ে কেন্দ্রের ভেতরের অন্যায় বা কারচুপি ঠেকাতে হবে।

আজ রোববার দুপুরে ময়মনসিংহ শহরের টাউনহল এলাকায় অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে তিনি এ কথা বলেন।

ভোট গ্রহণের দিন প্রার্থীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'কিছু কিছু আচরণবিধি; কে কার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলল, এটা-ওটা—অভিযোগ করেন কিন্তু এটা আপনাদের বিপর্যস্ত করবে না। ভোটের দিন যদি (প্রার্থী) আমি কারচুপি করে ফেলতে পারি তাহলে কিন্তু ভোট অবাধ নিরপেক্ষ হবে না।

'কাজেই পোলিং এজেন্ট দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কোনো রকমের অন্যায় বা কারচুপি হয়নি। এটা তারাই নিশ্চিত করবেন। এটা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ভারসাম্য সৃষ্টি করা। এর একমাত্র উপায় হচ্ছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীরা তাদের বিশ্বস্ত এবং দক্ষ পোলিং এজেন্ট দেবেন। পোলিং এজেন্টরা তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে,' বলেন তিনি।

নির্বাচনী পরিবেশ ব্যাহত করার অভিযোগ তুলে প্রার্থীরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'আমরা অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা কিন্তু তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর মধ্যে প্রচুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অফিসার ইনচার্জ অব পুলিশ স্টেশন বদলি হয়েছেন। আমরা ঢালাওভাবে বেশ কিছু করেছি, এখন অভিযোগের ভিত্তিতে করছি। অর্থাৎ ভোট নিয়ে যেন প্রশ্ন না থাকে।

'ওসি, এসপি, ডিআইজি, আইজি; যিনি যে কেন্দ্রে যান না কেন, খেলাটা হবে কিন্তু প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের দিন। ভেতরে কিন্তু আইজি সাহেবও ঢুকতে পারবেন না, ডিআইজি সাহেবও ঢুকতে পারবেন না, ডিভিশনাল কমিশনারও ঢুকতে পারবেন না। কেবলমাত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি আছে, তিনি ঢুকতে পারবেন, দেখতে পারবেন। কাজেই কোন ওসিকে বদলি করলাম, কোন ওসিকে বসালাম, এগুলো অনেক সময় একটা বিশ্বাস; ওই ওসি সাহেব হলে আমার জন্য ভালো হয়, ওই ওসি সাহেব আমার জন্য খুব ভালো হবে না—আমরা এটা গবেষণা করে দেখেছি, ভেতরে যদি প্রিসাইজিং অফিসার তার কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে, তাহলে ওসি সাহেব, ইউএনও সাহেব, ডিসি সাহেব, এসপি সাহেব ভেতরে গিয়ে কিছুই করতে পারবেন না,' বলেন তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'আর যদি কিছু করে থাকেন, এসপি সাহেব হোক, ডিসি সাহেব হোক, উনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিন্তু উনারা এটা পারবেনই না। কোনোভাবেই এটা সম্ভব নয়।'

তিনি বলেন, 'বলছেন কী ইলেকশন করব! ভোট এখানে দিলে ওখানে চলে যাবে, ওখানে দিলে এখানে চলে যাবে—এগুলো অবান্তর কতগুলো প্রচারণা। এই প্রচারণাগুলোতে বিশ্বাস করবেন না। ওটা সম্ভব হয় না। যদি সম্ভব হয়, আপনারা কেউ নির্বাচন কমিশনে এক সময় চলে এসে...আমি নিজেও এটা তদন্ত করব, কীভাবে এটা সম্ভব হলো।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিতে বলেছি, ওখানে যদি রাষ্ট্রপতি আসেন, প্রধানমন্ত্রী আসেন তাও কিন্তু উনি অ্যালাউ করবেন না। কারণ ওখানে যেতে পারবেন শুধুমাত্র ভোটার। অনুমোদিত সাংবাদিকরা যেতে পারবেন। পর্যবেক্ষকরা যেতে পারবেন। পোলিং এজেন্ট আর প্রার্থীর এজেন্ট বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবেন।

'ভেতরের ভারসাম্য রক্ষা করবে পোলিং এজেন্টরা। আমরা বলেছি, পোলিং এজেন্টদের ভেতরে থাকতেই হবে। যদি এটাকে (নির্বাচন) বিশ্বাসযোগ্য করতে হয়। (প্রার্থী) আপনি পোলিং এজেন্ট রাখলেন না, নির্বাচন শেষ হয়ে গেল, এর পরে বললেন আমাকে বের করে দিয়েছিল; যদি আপনাকে ৯টার  সময় বের করে দেওয়া হয়, সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কাছে নালিশটা করতে হবে—"আমি পোলিং এজেন্ট, আমাদের বের করে দেওয়া হয়েছে"। বের করা যদি প্রিসাইডিং অফিসার প্রতিরোধ করতে না পারে তাহলে ওই নির্বাচন কেন্দ্র ভোট হয়তো আমরা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেবো এবং প্রিসাইডিং অফিসারকে জবাবদিহি করতে হবে,' যোগ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

তিনি আরও বলেন, 'বাইরের নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ১৫-১৬ জন লোক থাকবে। আমাদের আনসার ও ভিডিপি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সশস্ত্র অবস্থায় থাকবেন। বিভিন্ন বাহিনীর লোক থাকাও ভারসাম্য। যদি শুধু পুলিশের লোক থাকত, তাহলে সব পুলিশের লোককে প্রার্থী হয়তো হাত করার চেষ্টা করতে পারতেন। করবেন না কিন্তু যদি পাঁচটা বাহিনীর লোক থাকে, সবাইকে হাত করা যায় না।

'নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরের যে ভারসাম্য, সেটা আমার বিশ্বাস পুরোপুরি সংরক্ষিত হবে। ভেতরেও হবে। আমরা রিটার্নিং অফিসারদের বলেছি, যদি ওরা ভেতরে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রিটার্নিং অফিসারকে দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। লাগবে না, কারণ প্রিসাইডিং অফিসারকে সঙ্গে সঙ্গে ভোট বন্ধ করে দিতে হবে বা রিটার্নিং অফিসার খরব পেলে উনি ভোট বন্ধ করবেন। ওই ভোট আরেকবার নেব, আরেকবার নেব, আরেকবার নেব। প্রয়োজনে ১০ বার নেওয়া হবে,' বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি তৃপ্ত কি অতৃপ্ত সে মূল্যায়ন পরে করেন। আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে চাই। আমি তৃপ্ত, না অতৃপ্ত সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করতে দেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

7h ago