স্বাধীনতার ৫৩ বছর

রাষ্ট্রীয় তালিকায় নেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

mirrpur-war_memorials_and_mausoleums
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। ছবি: পলাশ খান/স্টার

জাতীয় দিবস হিসেবে এখনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দিনটি। ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে যে কয়টি দিন পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতায় কলঙ্কিত হিসেবে বিশেষ স্থান দখল করেছে, তার মধ্যে ১৪ ডিসেম্বর অন্যতম।

যদিও দিনটি উপলক্ষে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বাণী দেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

দেশের স্বাধীনতার ৫৩তম বছর চলছে। এত বছর পরও জাতীয় দিবসের তালিকায় ১৪ ডিসেম্বর না থাকায় সরকারেরই অনেকে অবাক হয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রকাশিত রাষ্ট্রীয় তালিকায় এখন ৯১টি জাতীয় দিবসের কথা উল্লেখ আছে। দিবসের গুরুত্ব অনুযায়ী ক, খ ও গ ক্যাটাগরির মর্যাদা ঘোষণা করে সরকার। চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় দিবসের সর্বশেষ তালিকা করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ১১টি জাতীয় দিবস আছে। কিন্তু তালিকায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নেই।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা জাতি যখন আনুষ্ঠানিক বিজয়ের প্রহর গুনছিল, ঠিক তার দুই দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। তখন থেকেই এ দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় দিবসের তালিকায় এ দিনটি কেন ওঠানো হলো না, সেই প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্ট কারো কাছেই পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসটি কীভাবে কারও নজরে এলো না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসটি রাষ্ট্রীয় তালিকাভুক্ত নয়, এমন তথ্য জেনে প্রথমে বিশ্বাস করেননি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ দিনটি উপলক্ষে বাণী দেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন, কী বলছেন আপনি?'

এসব অনুষ্ঠান হলেও দিনটি রাষ্ট্রীয় তালিকায় নেই জানালে কোনো মন্তব্য না করেই ফোন কেটে দেন মন্ত্রী।

বিষয়টি নিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ দিন জাতীয়ভাবে অনেক অনুষ্ঠান হয়, এটি তালিকায় নেই কীভাবে বিশ্বাস করব? যারা দিবসগুলোর ব্যবস্থাপনা করে, তারা কি মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা? এ দিবসটি রাষ্ট্রীয় তালিকায় যুক্ত না করার কারণ কী? মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কী? এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। এসবের অবশ্যই জবাবদিহি থাকা উচিত।'

ক্ষোভ প্রকাশ করে এ গবেষক আরও বলেন, 'প্রশাসনে এখনো পাকিস্তানিমনারা বসে আছে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ দিনটির বিষয়ে কেউ মনে করিয়ে দেবে, এরপর রাষ্ট্রীয় তালিকাভুক্ত হবে। তাহলে প্রশাসন কী কাজ করে?'

দিবসটি রাষ্ট্রীয় তালিকায় না থাকার বিষয়টি জানেন না মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব ইশরাত চৌধুরীও। ১৪ ডিসেম্বর অবশ্যই জাতীয় দিবসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দিবসটি উপলক্ষে আমাদের মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান এ দিনে বাণী দেন। তারপরও কেন সেটি জাতীয় দিবসের তালিকায় নেই, সেটা অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব।'

রাষ্ট্রীয় তালিকায় না থাকলেও প্রতি বছর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দিবসটি পালনে উদ্যোগ নেওয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন আছে।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এত আয়োজন থাকলেও রাষ্ট্রীয় দিবসের তালিকায় ১৪ ডিসেম্বর না থাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এত বছরেও বুদ্ধিজীবী দিবস কেন রাষ্ট্রীয় দিবসের তালিকায় উঠেনি—এমন প্রশ্ন তোলা হলে এর দায় আমার নিজের ওপরেও বর্তায়। তাই নিজেই লজ্জাবোধ করছি। তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বশীল মন্ত্রী, সচিবরা থাকেন। তারা কি চাকরির বাইরে আর কিছু দেখেন না?'

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান আহাদ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি বছর দিনটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই পালন করা হয়। কিন্তু জাতীয় দিবস হিসেবে আজও অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তা খেয়াল করিনি। আপনারা লেখালেখি করলে নিশ্চয়ই সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগ নেবে। আমি নিজেও সংশ্লিষ্টদেরকে এ বিষয়ে বলব। অবশ্যই বুদ্ধিজীবী দিবস রাষ্ট্রীয় দিবসের তালিকায় স্থান পাওয়া উচিত।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

5h ago