দানের টাকায় নির্বাচন করে ১৫ বছরে কোটিপতি জুনাইদ আহমেদ পলক

৩৩৩ নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারবেন ভোক্তারা
জুনাইদ আহমেদ পলক। ফাইল ফটো

নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের সংসদ সদস্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ২০০৮ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তিনি পাঁচ স্বজনের কাছ থেকে ধার করেছিলেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তাকে স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা দান করেছিলেন ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

নিজের বলতে সেবার পলকের স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদ ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার টাকা। অন্যদিকে তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার।

দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে হলফনামা অনুযায়ী পাঁচ বছরে পলকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে হয় ৬৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে হয়েছিল ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা আর তার স্ত্রীর ছিল ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় পলক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে এসে তার স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

চারটি সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পলক ও তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ কয়েক গুণ করে বেড়েছে।

পলক ২০০৮ সালে অস্থাবর সম্পদ (টাকা, সোনা ইত্যাদি) দেখিয়েছিলেন দুই লাখের কিছু বেশি। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বর্তমান এই প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে তখন অস্থাবর সম্পদ ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার। তার এখন আছে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আরও আছে ৩০ ভরি সোনা এবং কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রী।

পলক ২০০৮ সালে যখন প্রথমবার নির্বাচিত হন তখন তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পলক নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতকোত্তর ও আইনজীবী পেশার কথা উল্লেখ করেছেন। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। একটি মামলা নথিভুক্ত অবস্থায় রয়েছে।

তিনি ২০০৮ সালে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। স্থাপনার ভাড়া, আইন পেশা ও কৃষি থেকে তিনি এই আয় দেখিয়েছিলেন। এবার আয় দেখিয়েছেন ৩২ লাখ টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে বেশি আয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পাওয়া সম্মানী, ২১ লাখ টাকার মতো। ব্যাংক জমা/সঞ্চয়পত্র থেকে মুনাফা বাবদ তার আয় ৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। টক শো করে তিনি বছরে ২ লাখ ২ হাজার টাকা আয় করেন।

২০০৮ সালে জুনাইদ আহমেদ পলক ধারদেনা করে নির্বাচনের খরচ যুগিয়েছিলেন। ব্যাংকে ছিল নিজের ২০ হাজার ও স্ত্রীর ১০ হাজার টাকা। এখন প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর আয় বছরে প্রায় ১৯ লাখ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ৮৪ হাজার টাকা। স্ত্রীর আয় আসে কৃষি, স্থাপনা ভাড়া এবং সঞ্চয়পত্রের মতো বিনিয়োগ থেকে।

হলফনামা অনুযায়ী, পলকের হাতে নগদ আছে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা আছে ১০ হাজার মার্কিন ডলার, ব্যাংকে জমা আছে প্রায় ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ৩০ লাখ টাকার। ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে ৯৫ লাখ টাকার মতো। তিনি একটি শটগান ও একটি পিস্তলের মালিক।

পলক ২০০৮ সালে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। সেবছর তিনি ব্যয়ও দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। সেবছর কৃষি খাত থেকে ১০ হাজার এবং বাড়ি ভাড়া থেকে ৪৮ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছিলেন। তখন পলকের হাতে নগদ ৩০ হাজার টাকা আর ব্যাংকে ছিল ২০ হাজার টাকা।  আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছিল ১৮ হাজার টাকা, ৩৩ হাজার টাকার একটি কম্পিউটার আর ২০ হাজার টাকার একটা মোবাইল ফোন। ফার্নিচার বলতে খাট, শোকেস আর চেয়ার মিলে ৮০ হাজার টাকার সম্পত্তি। হস্তান্তরযোগ্য সম্পত্তির মধ্যে ২০ হাজার টাকার (এক বিঘা) কৃষি জমি আর ৯০ হাজার টাকার (১৮ শতাংশ) অকৃষি জমি।

২০১৩ সালের হলফনামায় পলক ৪১ তোলা সোনা, দুইটি কম্পিউটার, একটি ল্যাপটপ, দুইটি মোবাইল ফোন, একটি এসি, একটি ফ্রিজ উপহার হিসেবে পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। দান হিসেবে পেয়েছিলেন ৪ শতাংশ অকৃষি জমিও।

সেবার পলকের স্ত্রী কনিকারও উপহার ভাগ্য খারাপ ছিল না। তিনি উপহার পেয়েছিলেন ১০৩ তোলা সোনা, একটি কম্পিউটার, একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন, একটি এসি এবং একটি ফ্রিজ। সাথে পেয়েছিলেন খাট, ড্রেসিং টেবিল, ডায়নিং টেবিল, সোফা, চেয়ার, আলমারি এবং ওয়ারড্রব।

২০১৩ সালের হলফনামা অনুযায়ী পলকের ৪৪ লাখ ৫৪ লাখ টাকার একটি গাড়ি এবং তার স্ত্রী ঋণ করে কিনেছিলেন ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকার একটি গাড়ি।

সর্বশেষ হলফনামা অনুযায়ী, পলক ২ দশমিক ৪৩ একর অকৃষি জমির মালিক, রাজউকের ১০ কাঠা প্লট, সিংড়ায় চার শতাংশ জমির ওপর একটি দোতালা বাড়ি, চারটি দোকান এবং একটি গুদাম ঘরের মালিক।

Comments

The Daily Star  | English
Banking sector crisis

Why is the banking sector crisis so deep-rooted?

The regime-sponsored immorality to protect or pamper the financial gangsters not only eroded the future of the banking sector, but also made the wound too difficult to recover from.

5h ago