রোকেয়ার নারীরা আজও পথ দেখায়
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের যাপিত সমাজে নারীদের নিত্যজীবনে ছিল বঞ্চনার আখ্যান। নিপীড়িত সমাজ পরিবর্তনে কেউ কেউ অল্পবিস্তর লিখেছেন। প্রথাগত সমাজ ভেঙে নারীদের আলোকিত উঠানে নিয়ে আসার কাজ করেছেন খুব কম সংখ্যক চিন্তক। সেই কম সংখ্যকদের মধ্যে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন অগ্রগামী। কেবল দৈশিক প্রেক্ষাপটে কিংবা স্থানিকতায় নয়, তিনি কালিক যাত্রায় স্থানিক কলেবর অতিক্রম করে বিশ্বপরিমণ্ডলে স্বকীয়তায় আসীন।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মতিচূর এর প্রবন্ধগুলোর অনুচ্ছেদে অনুচ্ছেদে নারীপ্রশ্নে ভুল ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা সমাজের কথা বলা হয়েছে। অনগ্রসরতার অচলায়তন ভেঙে অবরুদ্ধ নারী হয়ে উঠুক মুক্ত, সমাজ হোক নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক- এই প্রত্যয়ে তিনি প্রবন্ধগুলো রচনা করেছেন। সুলতানার স্বপ্ন রচনায় তিনি দেখিয়েছেন নারীদের সক্ষমতা। অবরোধবাসিনী'র সবগুলো রচনায় চিত্রিত হয়েছে অবরোধ ভাঙতে না পারা নারীদের করুণচিত্র।
পদ্মরাগ উপন্যাসে নারীদের নিয়ে তিনি যে কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছেন, সময়ের বিবেচনায় তা বিস্ময়কর। পদ্মরাগে একেকজন নারী ব্যক্তিক পরিসর অতিক্রম করে হয়ে ওঠেন পীড়িত নারীদের সাহসী প্রতিনিধি। যারা পুরুষের অনুকম্পাকে পায়ে ঠেলেছেন। মতিচূর, অবরোধবাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন এগুলোর মধ্যে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারীদের আত্মবিশ্বাসী এবং মর্যাদাবান করে গড়ে তোলার জন্য যে চেষ্টা করেছেন তারই পরিবর্ধিত রূপ যেন পদ্মরাগ উপন্যাস।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন পদ্মরাগ উপন্যাসে 'তারিণী-ভবন' প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই তারিণী-ভবন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সহায়হীন, বঞ্চিত, নিগৃহীত, নিপীড়িত, নির্যাতিত সমাজে ঠাঁই হারানো নারীদের ভরসার নাম 'তারিণী-ভবন'; যা সমাজের অচলায়তনের বিরুদ্ধে রীতিমত বিদ্রোহ। তারিণী-ভবনের প্রতিষ্ঠাতা দীন তারিণী। তার স্বামী তারিণীচরণ সেন অকালে প্রয়াত হলে তিনি দেবর-ভাশুরসহ আত্মীয়-স্বজনদের বাধা উপেক্ষা করে 'তারিণী-ভবন' স্থাপন করেন। ক্রমে ক্রমে এর কার্যক্রমের পরিধি বাড়তে থাকে। সেখানে বালিকা বিদ্যালয় খোলা হয়। একটি আঁতুর-আশ্রম চালু করা হয়। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তারিণী-ভবনে কারা স্থান পাবে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন-
যে বিধবার তিনকুলে কেহ নাই, সে কোথায় আশ্রয় পাইবে?- তারিণী-ভবনে। যে বালিকার কেহ নাই, কোথায় শিক্ষা লাভ করিবে?- তারিণী বিদ্যালয়ে। যে সধবা স্বামীর পাশবিক অত্যাচারে চূর্ণ-বিচূর্ণ জরাজীর্ণ হইয়া গৃহত্যাগ করিতে বাধ্য হয়, সে কোথায় গমন করিবে? - ঐ তারিণী কর্ম্মালয়ে। যে দরিদ্র দুরারোগ্য রোগে ভুগিতেছে তাহারও আশ্রয়-স্থল ঐ তারিণী-আঁতুরাশ্রম।
পদ্মরাগ এর নারীরা স্বাবলম্বী, কর্মনিষ্ঠ, নিছক আবেগ বর্জিত, বুদ্ধিদীপ্ত। তারা পরাশ্রয়ী চিন্তার খোলস মুক্ত। এখানকার নারীদের অতীতের সাথে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্মমতা থাকলেও তারা সেসব ভুলে নতুন জীবনের অভিযাত্রী। মানিক বন্দ্যোধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসের 'ময়নাদ্বীপ' এর সাথে পদ্মরাগ উপন্যাসের 'তারিণী-ভবন' এর সাজুয্য লক্ষ করা যায়। পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র হোসেন মিয়া ময়নাদ্বীপে মানুষদের নিয়ে নতুন বসতি গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে মসজিদ-মন্দির, উচ্চ-নিম্ন কিছু নেই। সমতাভিত্তিক সমাজের প্রতীক হয়ে উঠেছিল 'ময়নাদ্বীপ'। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ধর্ম-বর্ণ বিত্ত নির্বিশেষে নারীদের ঠিকানা হিসেবে গড়ে তুলেছেন 'তারিণী-ভবন'।
রোকেয়া-দর্শনের পরিব্যাপ্ত রূপ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে 'তারিণী-ভবনে'। অনেক প্রখ্যাতজনদের নারীবিষয়ক অবস্থানের চেয়ে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর অবস্থান সুস্পষ্ট এবং দৃঢ়তর। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসে প্রথাগত সমাজ ভেঙে রোহিনীর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করেননি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গৃহদাহ উপন্যাসে অচলা চরিত্রটি কিছুটা সাহসী হিসেবে রূপায়িত হলেও শেষাবধি সমাজপ্রথার কাছে পরাজয় বরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চোখের বালি উপন্যাসের বিনোদিনী সমাজের নিয়মের কাছে সমর্পিত হয়েছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে কুবের-কপিলার মধ্যে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সমাজের রীতিবিরুদ্ধ কাজ করেছেন। স্ত্রী মালার ছোট বোন কপিলাকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়ে একসাথে রাত্রিযাপনের চিত্রও পাওয়া যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে নারীকে কিছুটা মুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর মতো নারীকে অত্যন্ত মর্যাদাবান হিসেবে চিত্রায়ন করার দৃষ্টান্ত তার পূর্বে আর কোথাও তেমনটা দেখা যায়না। তার চিত্রিত নারী কেবল পরনির্ভরতা অতিক্রম করেনি, তারা চিন্তা-চেতনায় পুরুষদের মুখাপেক্ষী না হওয়ার প্রত্যয়ে বলিষ্ঠ।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের পদ্মরাগ উপন্যাসে সিদ্দিকা প্রধান চরিত্র। তারিণী-ভবনে আরও অনেকের মতো তিনিও আশ্রিত হন। এখানে রাফিয়া, সৌদামিনী, সকিনা, ঊষা সকলের জীবন ছিল করুণ। তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পাষাণ-পরিণতি লাভ করেছিলেন। প্রত্যেকেই পুরুষের আচরণে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন। এরা কেউ আর নতুন করে পুরুষকে একমাত্র জীবনের অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেননি। প্রথম পরিচয়ে সিদ্দিকাকে তারিণী-ভবনের প্রতিষ্ঠাতা নাম দিয়েছিলেন 'পদ্মরাগ'।
সিদ্দিকার জীবনে যে করুণ চিত্র তা পুরুষশাসিত সমাজের ফল। বিয়ের জন্য তার আক্দ হয়েছিল তার ভাবির ভাই লতিফ আলমাসের সাথে। তিনবছর পরে ব্যারিস্টার আলমাসের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের আগে লতিফের পক্ষ থেকে তার চাচার দাবি ছিল উত্তরাাধিকার সূত্রে সিদ্দিকার প্রাপ্য সম্পত্তি লিখে দিতে হবে। এই শর্তে সম্মত না হওয়ায় লতিফকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়া হয়। সংসারের জটিল পরিস্থিতির এক পর্যায়ে সিদ্দিকা বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হন। অকূল সাগরে সাঁতার দেওয়ার মতোই ছিল তার বাড়ি থেকে বেরিয় যাওয়া। কোথায় যাবেন, কী করবেন কিছুই ঠিক করা ছিলনা। পুরুষের ছদ্মবেশ নিয়ে বেরিয়েছিলেন। পথিমধ্যে তারিণী-ভবনের কয়েকজন নারীর সাথে দেখা হয়। নিজে যেহেতু পুরুষ সেজেছিলেন তাই নিজের বোনের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করেন। মূলত সেই বোন সে নিজেই। কলকাতার তারিণীভবন'র ঠিকানা পেয়ে সিদ্দিকা ছদ্মবেশে রেলের কামরায় ত্যাগ করে সেই ঠিকানা মোতাবকে গিয়ে আশ্রয় নেন। তারিণী-ভবনে স্বাধীনভাবে থাকার অবাধ সুযোগ আছে। দীর্ঘকাল তাই নিজের পরিচয় না দিয়ে থাকতেও কোনো সমস্যা হয়নি।
একদিন লতিফ আলমাস দুর্বৃত্ত দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পথের পাশে পড়ে ছিল। 'তারিণীভবন' এর নারীরা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাকে তারিণীভবন-এ নিয়ে আসেন। সাধারণত পুরুষদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়না। কিন্তু উপায়ান্তর না থাকায় সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। লতিফ আক্দ করার আগে-পরে কখনোই সিদ্দিকাকে দেখেননি। ফলে 'তারিণীভবন'-এ তাদের পরিচয় রোগী- সেবিকা হিসেবে। অনেক ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে লতিফ এবং সিদ্দিকার পূর্ববর্তী পরিচয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সিদ্দিকাকে নির্মাণ করেছেন নিজস্ব দর্শনের পরমতম প্রকাশরূপে। সিদ্দিকাকে বিয়ে না করে হামিদা নামের একজনকে বিয়ে করলেও দেখা যায় সিদ্দিকাকে পাওয়ার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়েছেন। কিন্তু সিদ্দিকা সেই ব্যাকুলতাকে উপেক্ষা করেছেন।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সিদ্দিকাকে কী পরিমাণ অনড় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রূপে গড়ে তুলেছেন তার অনেক দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। যখন 'তারিণীভবন' এর প্রাণ তারিণী নিজেও অন্যদের সাথে এক হয়ে লতিফের সাথে সংসার করার জন্য সিদ্দিকাকে সম্মত করার চেষ্টা করেছেন, তখনও সিদ্দিকা টলেননি। বরং তিনি বলেছেন- 'আমরা কি মাটির পুতুল যে পুরুষ যখন ইচ্ছা প্রত্যাখ্যান করিবেন, আবার যখন ইচ্ছা গ্রহণ করিবেন?' উপর্যুপরি সকলে সংসারে মনোনিবেশ করার কথা বললে সিদ্দিকা আরও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন।
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন পাষাণ রূপে সিদ্দিকাকে গড়ে তোলেন নি। প্রেমেও গড়েছেন। লতিফের প্রতি তার আবেগ তারিণী-ভবনে অনেকের কাছে প্রকাশিত হয়। লতিফও বুঝতে পারেন। স্বল্প বাক্যালাপে অনুভূতির গভীরতা পরিমাপ করা যায়। উপন্যাস পাঠকালে কাহিনির অগ্রগতির সাথে পাঠকের এ ধারণাই হতে থাকবে যে সিদ্দিকা লতিফকে বরণ করবে। আক্দ করা বিয়েতে ফিরবে। পরস্পরের আলাপচারিতা, আবহ, প্রথা সবকিছুতে সেই সত্যই যেন উদ্ভাসিত। কিন্তু সমস্ত আশাবাদকে তিনি পিছনে ফেলেছেন। লতিফ যখন শেষবারের মতো তার 'গৃহীনি' হওয়ার অনুরোধ করেন তখন সিদ্দিকা সাফ জানিয়ে দেন- 'তুমি তোমার পথ দেখ, আমি আমার পথ দেখি।' কোমলে-কঠিনে মিলে সিদ্দিকাকে আমরা রোকেয়ার কাঙ্খিত নারী রূপে দেখতে পাই।
উপন্যাসে 'নারী-ক্লেশ-নিরারণী-সমিতি' নামে সংগঠনটিও নারীমুক্তির জন্যই গঠন করা। উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র সৌদামিনী। তিনি নারী-নির্যাতনের প্রতিকার আছে কিনা সিদ্দিকার এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন- 'সে প্রতিকার এই তারিণী-ভবনের 'নারী-ক্লেশ-নিবারণী-সমিতি'। এস, যত পরিত্যক্তা, কাঙ্গালিনী উপেক্ষিতা, অসহায়া, লাঞ্ছিতা- সকলেই তারপর সমাজের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ ঘোষণা। আর তারিণী-ভবন আমাদের কেল্লা।' রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তো কেবল বাণী রচনা করেননি। বাণী চর্চার জন্য প্রতিষ্ঠান করেছেন। প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকা নারীদের জন্য সংগঠন করেছেন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আসলে চেয়েছেন তার লেখার ভেতর দিয়ে একজন মানুষ শুধু যেন উজ্জীবিত না হন, উজ্জীবিত প্রাণ যেন কর্মী হন এবং তার নির্দেশনাও পেয়ে যান।
পদ্মরাগ উপন্যাসে আশ্রিত প্রতিটি নারী চরিত্রই সংক্ষুব্ধ-প্রতিবাদী-প্রতিরোধী। অবরোধ প্রথার বিরুদ্ধে তাদের সাহসী অবস্থান। উপন্যাসে আরেক নিগৃহীত নারী সকিনা। তিনি বলেছেন- 'মানব-জীবন খোদাতালার অতি মূল্যবান দান,- তাহা শুধু "রাঁধা-উননে ফুঁ পাড়া আর কাঁদার" জন্য অপব্যয় করিবার জিনিষ নহে! সমাজের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ ঘোষণা করিতেই হইবে।' রাফিয়া এসব প্রসঙ্গে বলেছেন- 'চাহি না শান্তি! চাহি না, মৃত্যুর মত নিষ্ক্রিয় ক্লীব শান্তি!! আর এই 'অবরোধ'- প্রথার মস্তক চূর্ণ করিতে হইবে এইটাই যত অনিষ্টের মূল! লাঠি ঝাঁটা হজম করিয়া 'অবরোধ' প্রথার সম্মানরক্ষা,- আর নহে!'
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে উপন্যাসটি রচনায় প্রয়াসী হয়েছেন। এ উপন্যাসের লক্ষ্য নারীদের মনোবল বৃদ্ধি করা। পুরুষকে ঘৃণা না করেও পুরুষের নিগ্রহের সমুচিত জবাব দেওয়া, সমাজমনস্তত্ত্বে কুঠারাঘাত করা। হাজার বছর ধরে চলে আসা নারীদের বঞ্চনার ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রোধ করা। সেকারণে তিনি তার উপন্যাসে এমন সব নারীদের চিত্রায়ন করেছেন যারা অর্গল ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন। কার্যত উপন্যাসটি সময় ভাঙার গান, সমাজবিনির্মাণের কাব্য। উপন্যাসের উৎসর্গপত্রে যে কথা বলেছেন লেখক নিজেই, পঠন শেষে তারই সত্যতা উদ্ভাসিত হয়েছে। তিনি উৎসর্গ-পত্রে লিখেছেন- 'আমার এ কাব্যে সামাজিক নিয়ম রক্ষা হয় নাই- আমি কেবল বিশ্বপ্রেমিকের চিত্র আঁকিয়াছি।' বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে উন্নীত তার চিন্তালোক। সমাজমনস্তত্ত্ব চিহ্নিতপূর্বক নারীদের মুক্তির জন্য রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নিজেরই অপরাপর চেষ্টার সাথে যুক্ত করেছেন পদ্মরাগ উপন্যাস। যার আখ্যান-চরিত্র সবকিছুই নারীমুক্তি অভিমুখী।
প্রায় শতবছর পূর্বে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সিদ্দিকাকে যে উচ্চতায় চিত্রিত করেছেন একবিংশ শতকের তৃতীয় দশকে এসেও আমরা সেরূপ আপসহীন নারী খুব কম দেখি। পুরুষদের ওপর নির্ভরতা আজও নারীদের অতীতমুখী করে রেখেছে। কখনো শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা, কখনো সমাজভীতি নারীদের পূর্ণরূপে বিকাশের পথে অন্তরায়। পদ্মরাগ উপন্যাসের প্রতিটি নারী চরিত্র আজকের দিনেও অনুসরণ করার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। পদ্মরাগ তাই কালের বিবর্তনে ফিকে হয়ে যায়নি, আজও সমুজ্জ্বল।
Comments