১৫ বছরে মির্জা আজমের সম্পদ বেড়েছে ১২২ গুণ, স্ত্রীর ৭৯ গুণ

মির্জা আজম। ফাইল ফটো স্টার

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের সম্পদ গত ১৫ বছরে বেড়েছে ১২২ গুণ। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত এ সংসদ সদস্যের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৮২ গুণ।

নবম থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।

১৫ বছরের ব্যবধানে মির্জা আজমের বার্ষিক আয় সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে পৌনে চার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে পৌনে ২৬ কোটি টাকা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা ছয় বার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মির্জা আজম। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি ২০০১ সালে বিরোধী দলের হুইপ এবং ২০০৮ সালে সরকারদলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ২০১৯ সালে তাকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবার সপ্তমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন তিনি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের বার্ষিক আয় ছিল চার লাখ ৪৮ হাজার ১৮৫ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এখন তার বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৬৬ লাখ দুই হাজার ৫৭ টাকায়।

যদিও এবার তিনি জমি বিক্রি বাবদ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন। এ ছাড়া বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ তিনি এক কোটি ৯৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭ টাকা আয় দেখিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তার বার্ষিক আয় ছিল এক কোটি ২৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪২ টাকা। ২০১৪ সালে তার আয় ছিল ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৮৬ টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে তার আয় বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৭ গুণ।

২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের কাছে নগদ ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার কোনো জমানো টাকা কিংবা কোনো বিনিয়োগ ছিল না। এরপর তিন বার সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনের পর তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও কোম্পানির শেয়ার ও স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা। এরমধ্যে দুই কোটি ৩৯ লাখ টাকা দামের তিনটি জিপ ও ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার ব্যবসায়িক মূলধনও আছে।

২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদ ছিল ২৭ কোটি ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬৯ টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৫ টাকা। গত নির্বাচনের সময় তার হাতে নগদ ছয় কোটি তিন লাখ ৫৫ হাজার ৫৩১ টাকা থাকলেও এবার তিনি নগদ টাকার পরিমাণ কম উল্লেখ করেছেন। ২০২৩ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় তার হাতে নগদ ১৯ লাখ টাকা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

পেশায় ব্যবসায়ী মির্জা আজম এবারের হলফনামায় ৩১ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার ১৯২ টাকার স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। এরমধ্যে পাঁচ কোটি ৬৩ লাখ টাকা মূল্যের ১৭ দশমিক ৬৩ একর কৃষিজমি, ১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা দামের প্রায় দেড় একর অকৃষিজমি, ১১ কোটি সাড়ে ২৮ লাখ টাকা মূল্যের দুটি দালান ও ৩৬ লাখ সাড়ে ১৯ হাজার টাকার একটি ফ্ল্যাট আছে বলে উল্লেখ করেছেন।

পাঁচ বছর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় স্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল ১৩ কোটি ৮২ লাখ ২৮ হাজার ৬২ টাকা। এরমধ্যে কৃষিজমি দুই দশমিক ৪৫ একর থেকে ১৭ দশমিক ৬৩ একর হয়েছে। তবে এবার তার অকৃষিজমির পরিমাণ কমেছে বলে উল্লেখ করেছেন। ১৫ বছর আগে তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৫২ টাকা। তখন তিনি বাড়ি বা কোনো অ্যাপার্টমেন্টের কথা উল্লেখ করেননি। যদিও ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিনি ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট ও জামালপুরে নয়টি দালানের কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

মির্জা আজমের সাথে বেড়েছে তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণও। টানা ১৫ বছরে তার স্ত্রী আলেয়া আজমের সম্পদ বেড়েছে ৭৯ গুণেরও বেশি। ২০০৮ সালে মির্জা আজমের স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৮ টাকা। এর মধ্যে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া নেত্রকোনা শহরে ১০ লাখ টাকা মূল্যের ছয় শতাংশ জমি, তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের দুই দশমিক ১৯ একর কৃষিজমি ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তখন তার নামে কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পোস্টাল সঞ্চয় ও ব্যবসায়িক মূলধনের তথ্য ছিল না।

বর্তমানে মির্জা আজমের স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি ৫১ লাখ এক হাজার ৪০১ টাকা। এর মধ্যে দুই কোটি ৩৬ লাখ মূল্যের ফ্ল্যাট, তিন কোটি ৪১ টাকা মূল্যের দুটি দালান ও এক কোটি ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ১৬৮ টাকার ব্যবসায়িক মূলধন রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ১১ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ২৭০ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে তার আড়াই গুণেরও বেশি সম্পদ বেড়েছে।

২০০৮ সালে বিয়ের উপহার হিসেবে মির্জা আজমের স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণ ছিল। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ ভরিতে। ২০১৮ সালে সোনার পরিমাণ ২০০ ভরিতে ঠেকলেও এবার তা ১২১ ভরি উল্লেখ করেছেন।। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের একটি জিপ ও একটি পিকআপ থাকলেও এখন তার তিনটি জিপ গাড়ি আছে। তবে হলফনামায় মির্জা আজমের স্ত্রীর গাড়ির তথ্য নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago