ডিজিটাল মাধ্যমে নারীবিদ্বেষ ও রুখে দাঁড়ানোর উপায় বিষয়ক আলোচনা

ঢাকার ব্র্যাক ইনে ‘অনলাইনে নারীবাদ বিরোধী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া’র ওপর একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

'যখনই কোনো সামাজিক আন্দোলন হয়, সেখানে নারীরা দেখতে কেমন এবং কী পড়ে আছেন, তার ভিত্তিতে তাদের টার্গেট করা হয় এবং পুরো কথোপকথনটি তখন নারীদের নিয়ে হয়ে যায়; আন্দোলনটি বিশেষভাবে কী অর্জনের চেষ্টা করছে, সেটা নিয়ে নয়।'

সম্প্রতি 'অনলাইনে নারীবাদ বিরোধী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া'র ওপর একটি গোলটেবিল বৈঠকে এমন মন্তব্য করেছেন গবেষক ওয়াসেমা ফারজানা।

ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ (ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) যৌথভাবে গত ২৮ নভেম্বর ঢাকার ব্র্যাক ইনে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের নেতৃত্বে এবং সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির অর্থায়নে 'কাউন্টারিং ব্যাকল্যাশ, রিক্লেইমিং জেন্ডার জাস্টিস' নামে ছয় বছর মেয়াদি প্রকল্পের আওতায় বৈঠকটি আয়োজিত হয়।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, নারীবাদ বিরোধী জটিল নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বিষয়ক নতুন জ্ঞান উৎপাদন করা এবং নারী অধিকার সংস্থা ও জেন্ডার জাস্টিস নিয়ে কাজ করছেন, এমন অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য সুযোগ তৈরি করে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বিরোধিতা এবং জেন্ডার জাস্টিসের ক্ষতি মোকাবিলায় অবদান রাখা।

সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে নারীবিদ্বেষের ধরন নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণার ফলাফল সবার সামনে তুলে ধরা হয় এই গোলটেবিল বৈঠকে।

৩৪ জন অ্যাক্টিভিস্ট, এনজিওকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, অনলাইনে নারীবিদ্বেষী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার শিকার যারা হয়েছেন, তাদের জন্য উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যম তৈরি করা এবং সম্মিলিতভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কৌশল খুঁজে বের করা।

নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সংঘটনের পেছনে প্রধানত কারা দায়ী এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কীভাবে তারা নারীবাদী ব্যক্তিত্বদের ওপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, সে সম্পর্কে ফলাফল তুলে করেন ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ গবেষকরা।

অনলাইনে নারীবাদী ও জেন্ডার জাস্টিস আন্দোলনগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মোকাবিলার জন্য কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন, এই বিষয়ে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বিআইজিডির গবেষকরা। তাদের মতে, ভিন্নতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সম্মিলিতভাবে শেখার এবং কৌশল তৈরির বিকল্প নেই।

প্রতিটি উপস্থাপনার পর অনলাইনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ধরন এবং তা মোকাবিলার ওপর আলোচনা হয়। আলোচনায় সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন ব্র্যাক জেপিজি স্কুল অব পাবলিক হেলথের কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার নাজিয়া জেবিন।

অনলাইন মাধ্যমগুলোয় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার তাদের কাজ ও ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রগতি কীভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তা তুলে ধরেন অ্যাক্টিভিস্টরা।

অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি ও নারীবাদী সংগঠক তৃষিয়া নাশতারান বলেন, 'চিন্তার বিষয় হলো, আমরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। একটা সময় আমাদের মনে হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক।'

এ ছাড়া, আলোচনা করা হয় অনলাইনে নারী ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যাক্টিভিস্টদের চ্যালেঞ্জ, নারীবাদ বিরোধী প্রতিক্রিয়ার সংস্কৃতি জিইয়ে রাখতে সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ভূমিকা, নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় অর্থবহ ও কার্যকর উদ্যোগ খোঁজা এবং কার্যকর আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি করার বিষয়ে।

বিআইজিডির হেড অব জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন ক্লাস্টার মাহিন সুলতান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, 'যারা আমাদের সঙ্গে একমত নন, তাদের জন্যও বাক স্বাধীনতার মান বজায় রেখে আমরা কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো থেকে জবাবদিহিতা অর্জন করতে পারি, তা বোঝার জন্য আমাদের এই ধরনের আরও বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা প্রয়োজন।'

'কাউন্টারিং ব্যাকল্যাশ, রিক্লেইমিং জেন্ডার জাস্টিস' নিয়ে ব্র্যাক জেপিজি স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং বিআইজিডি ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছে। পিতৃতান্ত্রিকতা, পুরুষের ভূমিকা, পুরুষত্বের প্রতিক্রিয়া এবং পুরুষ মিত্রতার বিভিন্ন দিকে নিয়ে গবেষণা পরিচালনা এবং নতুন জ্ঞান উৎপাদন করছে ব্র্যাক জেপিজি স্কুল অব পাবলিক হেলথ।

ব্র্যাক জেপিজি স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক সাবিনা এফ রশিদ ও অধ্যাপক মুশতাক চৌধুরী। বর্তমানে এই দলে রয়েছেন ইশরাত জাহান, ইসরার হাসান ও রাইয়ান মাহবুব।

নারীদের জেন্ডার জাস্টিস নিয়ে কাজ করছেন এমন অ্যাক্টিভিস্ট ও সংস্থাকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কীভাবে প্রভাবিত করছে এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারা কীভাবে ভূমিকা রাখছেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে বিআইজিডি। বিআইজিডির গবেষণা দলে রয়েছেন ইফফাত জাহান অন্তরা, প্রজ্ঞা মাহপারা, মাহিন সুলতান, সামসাদ নাভিয়া নভেলি ও এম মোহাইমিনুল ইসলাম।

Comments

The Daily Star  | English

Public admin reforms: Cluster system may be proposed for ministries

The Public Administration Reform Commission is likely to recommend reducing the number of ministries and divisions to 30 from 55 to improve coordination and slash the government’s operational cost.

7h ago