সিলেট থেকে

সেই সিলেটেই তাইজুলের ১০ উইকেট, দুঃখ নয় এবার উল্লাস

ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল ঘুরে যেতে লাগল বামদিকে। সঙ্গে যোগ হলো বাড়তি বাউন্স। ডিফেন্স করার চেষ্টা করলেন ইশ সোধি, পারলেন না। ব্যাটের উপরের দিকের কানায় লেগে ক্যাচ জমা পড়ল সিলি পয়েন্টে থাকা জাকির হাসানের হাতে। অলআউট হয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। সিলেট টেস্টে নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় একটি জয়।

শনিবার দলকে ১৫০ রানের বড় জয় পাইয়ে দেওয়ার নায়ক তাইজুল ইসলামের একটি ব্যক্তিগত অর্জনও হয়ে যায় সেসময়। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনারের দ্বিতীয় ইনিংসে ষষ্ঠ শিকার ছিলেন সোধি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ম্যাচে ১০ উইকেট, সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দ্বিতীয়বারের মতো।

সাফল্যের মুকুটে এমন পালক আছে বাংলাদেশের আর দুই বোলারের। দুজনই স্পিনার— একজন সাকিব আল হাসান, আরেকজন মেহেদী হাসান মিরাজ। আঙুলের চোটে সাকিব এই টেস্ট খেলেননি। মিরাজ ছিলেন একাদশে, খুব কাছ থেকে দেখেন লাল বলের কোনো ম্যাচে তাইজুলের দ্বিতীয় ১০ উইকেট প্রাপ্তি।

সোধির ক্যাচ জাকির লুফে নেওয়ার পরক্ষণেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যখন উদযাপনে মেতে যান, তখন বোলিং প্রান্তে ফলো থ্রুতে তাইজুলকে বেশ নির্লিপ্ত দেখায়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন— শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতার উচ্ছ্বাসের জোয়ার তাকে ছুঁয়ে যায়নি যেন। এরপর পেছন ঘুরে দুই-তিন কদম এগিয়ে হয়তো বিদ্যুৎ খেলে যায় তার মনে!

খেলা শেষ বিধায় আম্পায়ারের দিকে ক্যাপ নিতেই এগোচ্ছিলেন তাইজুল। এরপর এই অভিজ্ঞ স্পিনার থেমে গিয়ে বাঁহাত মুষ্টিবদ্ধ করে সজোরে করে ওঠেন চিৎকার— তাতে মিশে ছিল অর্জনের আনন্দ, জয়ের উল্লাস। আশপাশ থেকে তখন কয়েকজন দৌড়ে এসে অভিনন্দন জানাতে থাকেন তাইজুলকে। তাকে জড়িয়ে ধরে মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিমের ফুর্তি ছিল দেখার মতো।

এই উল্লাসে ৩১ বছর বয়সী তাইজুল নিশ্চয়ই পাবেন পাঁচ বছর আগের দুঃখ ভোলার রসদ। ফেরা যাক ২০১৮ সালে। এবারের টেস্টের আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেটাই ছিল প্রথম ও একমাত্র টেস্ট।

তুলনামূলক দুর্বল জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৫১ রানের হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছিল। হ্যাঁ, ব্যাটিং ব্যর্থতাতেই। একবার দুইশ পার হয়নি বাংলাদেশের সংগ্রহ— প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে অলআউট হয়েছিল তারা।

অথচ তাইজুল সেবারই প্রথম পেয়েছিলেন কোনো টেস্টে ১০ উইকেট। সব মিলিয়ে তার শিকার ছিল ১১ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে তার শিকার ছিল ৬ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রানে ৫ উইকেট। দল হারায় তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাহাত্ম্য পড়ে গিয়েছিল ঢাকা।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নিজের সবচেয়ে বড় অর্জনও পুরোপুরি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে দেয়নি। সেই আফসোস এতদিন বয়ে বেরিয়েছেন তাইজুল। এখন থেকে আর না। তার দ্বিতীয় ১০ উইকেট শিকারের মঞ্চে টিম সাউদি-কেইন উলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। কিউইদের বিপক্ষে দেশের মাটিতে এটাই টাইগারদের প্রথম জয়। সব মিলিয়ে দ্বিতীয়— আগেরটি ছিল গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইতে।

আরও একটি মনে রাখার মতো অর্জন হয়েছে তাইজুলের। নয় বছর পর তিনি পেয়েছেন দ্বিতীয়বারের মতো টেস্টে ম্যাচসেরা হওয়ার অভিজ্ঞতা। ২০১৪ সালে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। সেটা ছিল তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট।

টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক সাকিব। তার শিকার ২৩৩ উইকেট। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই সংস্করণে নিয়মিত নন তিনি। সাকিবের অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮৭ উইকেট পাওয়া তাইজুলকেই স্পিন বিভাগের মূল অস্ত্রের ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। আর তা আস্থার সঙ্গেই করছেন তিনি। পার্শ্বনায়কের রূপ থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছেন নায়কে।

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s order and deadly aftermath

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

7h ago