চট্টগ্রামে নৌকার লড়াই ‘বিদ্রোহীদের’ সঙ্গে

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম। ফাইল ফটো

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বেশিভাগকেই দলের মনোনয়নবঞ্ছিত 'বিদ্রোহী' প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।

দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ইতোমধ্যে অনেক নেতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।  

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, 'বিদ্রোহী' বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলের নমনীয় মনোভাবের সুযোগ নিয়ে এখন তারা নিজ নিজ আসনে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে চান। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকে দলের সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্ত নিয়ে চিন্তিত আছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, কোনো নেতা দলের অনুমতি ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। 

অবশ্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে আগ্রহী অনেকে বলছেন যে, তারা এই নতুন নির্দেশনার বিষয়ে জানেন না।

যেমন, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এই আসন থেকে ৭ বার নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তার ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল।

এদিকে, আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য ও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন এই আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে গিয়াস উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যে, নির্বাচন অবশ্যই উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে হবে। আমি মনে করি, দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত।'
 
দলের অনুমতি ছাড়া কোনো নেতা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন না, এমন ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে গিয়াস বলেন, 'এ ঘোষণার বিষয়ে আমি জানি না। কেন আমার পার্টির অনুমতি লাগবে? দল ইতোমধ্যে দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার অনুমতি দিয়েছে।'

'আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কি  দলীয় অনুমতির প্রয়োজন আছে?' প্রশ্ন রাখেন তিনি।


  
চট্টগ্রাম-১ আসনের মতো চট্টগ্রামের ৯টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। 

সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়তে ১০টি আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৭ হেভিওয়েট নেতাসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ১৩ নেতা।

বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৩ বার নির্বাচিত হন। 

এবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায়, সামশুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন।
  
সোমবার সামশুল তার নির্বাচনী এলাকার অনুসারীদের নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে এক মতবিনিময় সভা করেন। সভায় বর্তমান ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একাংশ উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্র জানায়। 

সেখানে উপস্থিত নেতারা সামশুলের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দেন। 

এ বিষয়ে সামশুল হক চৌধুরীর মন্তব্য জানতে তাকে ফোন করা হলেও, তিনি রিসিভ করেননি।
  
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। 

এ আসনে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। 

যোগাযোগ করা হলে মোতালেব ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এবং ৩০ নভেম্বর জমা দেবেন। 
দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে মোতালেব বলেন, 'সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে যারা দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পার্টি নির্দেশনা দিয়েছে। অন্যান্য নেতাদের জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।'
  
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য ও চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের ৩ বারের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বারও এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে জব্বার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
 
তিনি আরও বলেন, 'দলের পক্ষ থেকে নেতাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। সাধারণ ভোটাররা চায় আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি, সেজন্য তাদের চাপের কারণে আমাকে বাধ্য হয়ে নির্বাচন করতে হচ্ছে।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

8h ago