ভুয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রেম, প্রতারণার টাকায় বাগানবাড়ি-ডুপ্লেক্স ভবন

গ্রেপ্তার বেনজির হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস নেই তার। তারপরেও পাঁচ বিঘা জমির ওপর তিনি গড়ে তুলেছেন দুটি ডুপ্লেক্স ভবন। তার সম্প্রতি কেনা আরেকটি বিলাসবহুল ভবনও তিন বিঘা জমির ওপর তৈরি। আছে ২০ বিঘার মাছের ঘেরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্মীয়মান আরও কয়েকটি ভবন।

ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ৫০ জন নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ দিয়ে এ সবকিছু করেছেন তিনি।

এই প্রতারকের নাম মো. বেনজির হোসেন (৪০)। তিনি নড়াইল সদর উপজেলার আড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা। ২২ নভেম্বর কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের হাতে গেপ্তার হয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে আজ সোমবার ঢাকায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রতারক বেনজির যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিদ হাসান নামে এক বাংলাদেশি বিমান চালকের ফেসবুক আইডি কপি করে একটি ভুয়া আইডি তৈরি করেন। এটি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য তিনি শাহিদ হাসানের প্রোফাইল থেকে নেওয়া বিমান চালনার ছবি ও ভিডিও নিয়মিত পোস্ট করতেন। টার্গেট করতেন নিঃসঙ্গ নারীদের। পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। এক পর্যায়ে বিপদে পড়ার কথা বলে তার দেওয়া বিভিন্ন নগদ নাম্বারে টাকা পাঠাতে বলতেন তিনি।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বেনজিরের প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত এমন ১৩টি নগদ নাম্বারে গত চার মাসে এক কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। নড়াইলের বাড়িতে থেকে প্রতারণার কাজ করলেও তিনি তা ক্যাশ আউট করতেন যশোর ও খুলনার বিভিন্ন ক্যাশ আউট পয়েন্ট থেকে। নগদ নাম্বারগুলোতে ব্যবহৃত সিমকার্ডের রেজিস্ট্রেশন করা হয় অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে।

ক্যাশ আউট করার সময় প্রতারক বেনজির চেহারা গোপনের জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মাস্ক পরে থাকতেন বলেও উল্লেখ করা হয় ব্রিফিংয়ে। বলা হয়, সম্প্রতি এমন একজন সিঙ্গেল মাদার বেনজিরের প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় কোটি টাকা খুইয়েছেন। আরেক জন খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

এমন একজন গত ২১ নভেম্বর ওয়ারী থানায় মামলা করলে ছায়া তদন্তে নামে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। ২২ নভেম্বর বেনজিরকে খুলনায় নগদ নাম্বার থেকে ক্যাশ আউটের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি।

সিটিটিসি বলছে, রোমান্স স্ক্যাম ছাড়াও বেনজির বিভিন্ন সময় পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা, সেনাবাহিনী ও পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, হুন্ডি ব্যবসা ও মানব পাচারের মতো নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। প্রতারণার টাকা দিয়ে তিনি অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। নড়াইলে পাঁচ বিঘা জমির ওপর দুটি ডুপ্লেক্স ভবনসহ বাগানবাড়ি, জেলার বিভিন্ন জায়গায় ২০ বিঘার মতো মাছের ঘের ও একাধিক নির্মীয়মান ভবনের পাশাপাশি যশোর ও সাভারেও বহুতল ভবন আছে তার।  

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বেনজিরের কাছ থেকে জব্দ করা স্মার্ট ফোন থেকে প্রতারণার শিকার ৫০ জনের বেশি নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে।  

 

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

9m ago