ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: ৬ দিনেও খোঁজ নেই পটুয়াখালী-বরগুনার ৭২ জেলের

ছোটবাইশদিয়ার নিখোঁজ জেলে জহির প্যাদার মায়ের বিলাপ। ছবি: সংগৃহীত

ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ পটুয়াখালী ও বরগুনার ৭২ জেলের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। তাদের ফিরে পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পরিবারের সদস্যরা।

জেলেদের পরিবারের সদস্য ও পুলিশের বরাতে জানা গেছে, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ২৫ জন, কলাপাড়া উপজেলার ২২ জন এবং বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ২৫ জন জেলে নিখোঁজ আছেন। স্থানীয় প্রশাসন ছাড়াও পরিবারের সদস্যরা হন্য হয়ে তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। 

গত ১৭ নভেম্বর বঙ্গোপসাগর উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা পেয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বহু ট্রলার ফিরে আসে। তবে রাঙ্গাবালীর বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বাবুল হাওলাদারের মালিকানাধীন এফবি হিমু, মৌডুবি ইউনিয়নের দিদার মৃধার এফবি মায়ের দোয়া ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের হাসান জমাদ্দারের এফবি হাসান নামে তিনটি ট্রলার এখনো ফিরে আসেনি। এই তিন ট্রলারে ছিলেন ২৫ জন জেলে।

ছোটবাইশদিয়ার নিখোঁজ জেলে জহির প্যাদার স্ত্রী ফাতেমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আমার স্বামী নিখোঁজ হয়েছে। এতদিন পরেও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। তিনি ফিরে না এলে আমরা না খেতে পেয়ে মারা যাব।'

একই এলাকার অপর নিখোঁজ জেলে সাইফুল পাহলানের স্ত্রী উর্মি বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের সাত মাসের একটি ছেলে আছে। আমার স্বামী ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। এখন আমাদের কীভাবে চলবে?'

নিখোঁজ জেলে তামিমের মা শহর ভানু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার মানিককে কেউ আমার বুকে ফিরিয়ে দেন, কেউ তার সন্ধান দেন।'

স্থানীয় মৎস্য সমিতির সভাপতি জহির হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের সময় এই ট্রলারগুলো সাগরে মাছ ধরছিল। ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারগুলো সুন্দরবন বা অন্য কোথাও আশ্রয় নিতে পারে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করছি।'

উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আগাম বার্তা প্রচার করা হলেও কিছু জেলে অসচেতন হওয়ায় ঝড়ের কবলে পড়ে। তাদের সন্ধানে কাজ করছে প্রশাসন।' 

রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। মালিকপক্ষও খোঁজাখুঁজি করছে। আমরা উপকূলীয় এলাকার থানাগুলোতে বার্তা পাঠিয়েছি।' 

কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর এলাকার ট্রলারের ২২ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহিপুর থানার ওসি ফেরদৌস আলম খান।

এই ২২ জেলের মধ্যে রাঙ্গাবালীর কাজীকান্ধা গ্রামের বাহাউদ্দিনের দুই ছেলে তানমুন ও তানিম রয়েছেন। ছেলেদের খোঁজে খুলনা, বাগেরহাটের মোংলা ও সুন্দরবনসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়েও কোনো তথ্য না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

বাহাউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার দুই ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। ওরাই এখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি। ওদের দুজনেরই দুটি করে সন্তান আছে। বাচ্চাগুলোকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছি না। ছেলেদের ফিরে পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।'

ট্রলারের মালিক মো. রহমাতুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ট্রলারটি ঘূর্ণিঝড়ের সময় তীরে ফিরছিল। তবে উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। জেলেদের সন্ধানে অন্য ট্রলার পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাইনি। বিষয়টি পুলিশ এবং কোস্টগার্ডকে জানিয়েছি।' 

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোস্টগার্ড ও নৌ-বাহিনীর টিম নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে কাজ করছে। আমরা তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। এ ছাড়া, নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে।'

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাথরঘাটার দুটি ট্রলারসহ ২৫ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খোঁজে আমরা সাগরে ট্রলার পাঠিয়েছি। এ ছাড়া, উপকূলের বিভিন্ন স্থানে খোঁজা হচ্ছে। জেলেদের পরিবারের সদস্যরা বেশ উদ্বিগ্ন।'

পাথরঘাটা থানার ওসি শাহ আলম হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের কবল পড়ে সাগরে মাছধরারত ২৫ জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। আমরা তাদের উদ্ধারে বিভিন্ন থানায় বার্তা পাঠানোসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।' 

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

15h ago