আওয়ামী লীগ ও পুলিশ গাড়িতে আগুন দিচ্ছে: রিজভী

গাড়িতে আগুন দিচ্ছে আ.লীগ ও পুলিশ
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যানবাহনে আগুন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, 'অগ্নি সন্ত্রাস ও নাশকতা নিখুঁতভাবে এই সরকার পরিচালিত করছে। জনগণের পক্ষ থেকে যে শান্তিপূর্ণ হরতাল-অবরোধের মতো আন্দোলন কর্মসূচিকে অপবাদ দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে লাগাতার যে প্রচারণা, মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা অব্যাহত রেখেছে।'

তিনি বলেন, 'বারবার যে কথাটি আমরা বলি, সত্যকে যেমন ঢেকে রাখা যায় না, মিথ্যা প্রচার দিয়ে সত্যকে আড়াল করা যায় না। প্রতিনিয়ত প্রতিদিন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সকল নাশকতা, সন্ত্রাস, অগ্নি সন্ত্রাস, বোমবাজির প্রজননভূমি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। দেখুন, প্রতিদিন একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। তাদের মিথ্যাচারের মুখোশ তাদেরই বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়ে পড়ছে। ভোলাতে ছাত্রলীগ নেতার বাসায় যে ঘটনাটি ঘটেছে, ভয়ঙ্কর ঘটনা। বোমা তৈরির কারখানা। সেই কারখানায় বোমা বিস্ফোরিত হয়ে বোমা বানানোর কারিগর মারা গেছে।'

রিজভী বলেন, 'আমাদের চলমান শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও অংশগ্রহণে ফ্যাসিস্ট সরকার ভীত ও শঙ্কিত। তাই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে, আওয়ামী লীগ যে অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতা করছে, বিএনপি তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছে।'

এ সময় রিজভী প্রতিটি সন্ত্রাসী ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, 'নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্মমভাবে দমন করার জন্য নিজেরাই অগ্নি সন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অরাজকতা সৃষ্টি করছে জনবিচ্ছিন্ন সরকার। উদ্দেশ্য হলো, বিদ্যমান পরিস্থিতির ফায়দা লুটে, বিএনপি তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির ওপর হামলা-মামলা ও গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা। ক্ষমতার মোহে আওয়ামী অপশক্তি আজ সুপরিকল্পিতভাবে মানুষ হত্যা করছে, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে। তারা অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে।'

'গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে দুঃশাসনের নীলনকশা হিসেবে পুলিশ হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা-বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে। গত ৩ সপ্তাহে আমাদের ১৪ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। এসব মামলায় বিএনপি মহাসচিবসহ জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ করা হয়েছে, যা দেশে-বিদেশে কোনো বিবেকবান মানুষ বিশ্বাস করেনি, করা সম্ভব নয়,' বলেন তিনি।

রিজভী আরও বলেন, 'পুলিশকে হত্যা, বোমা বিস্ফোরণ, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া, ইত্যাদি নৃশংস অভিযোগের মাধ্যমে বিএনপির অহিংস ও শান্তিপূর্ণ ধারাবাহিক কর্মসূচিগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্র। এসব প্রহসনমূলক মামলা ও রায়ে পুনঃপ্রমাণিত হচ্ছে দেশের বিচার ব্যবস্থার বিচারহীনতা ও নগ্ন দলীয়করণ, তথা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সর্বগ্রাসী অবক্ষয়, যা বছরের পর বছর ধরে চলছে,' যোগ করেন তিনি।

জ্বালাও-পোড়াও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অধিকাংশ ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বা বড় পুলিশ চেকপোষ্টের কাছাকাছি ঘটছে। যেমন, গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের চাতরী চৌমহনী বাজারের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ঠিক পাশে দাঁড়ানো একটি বাসে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন তথা আওয়ামী লীগ অগ্নিসংযোগ করে। গত ৩১ অক্টোবর আশে পাশে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ভাইরাল ছবিতে দেখা গেছে যে, ঢাকার বাংলামোটর মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে একটি গণপরিবহন জ্বলছে, যাকে ঘিরে অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। একইভাবে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার কাকরাইলে আরেকটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে একটি মোটরসাইকেলে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তি, যারা পুলিশের ভেস্ট পরে ছিল, অথচ পুলিশ অপরাধীদের জন্য কোনো দায় নিচ্ছে না।

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, 'প্রকৃতপক্ষে, আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী এবং তাদের আজ্ঞাবাহী পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে চালক বা তাদের সহকারীদের বক্তব্যেই স্পষ্ট যে, কীভাবে পুলিশ বা ছাত্রলীগ-যুবলীগকর্মীরা তাদের বাসে আগুন দেওয়ার জন্য দায়ী। দেশের সর্বত্র র‌্যাবের শত শত পেট্রল টিম এবং বিজিবির শত শত প্লাটুন অস্ত্রসজ্জিত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ যেন পরিণত হয়েছে এক যুদ্ধক্ষেত্রে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও বিরোধী দলের কোনো সদস্য কোনো প্রকার সহিংসতা বা অগ্নি সংযোগের কাজে লিপ্ত হবে, এই দাবি সর্বত্রই হাস্যকর।'

Comments

The Daily Star  | English

Jubo Dal leader dies in custody after 'jt forces picked him up'

The body of Touhidul Islam, 42, bore marks of trauma and injuries from his waist to the knees, family members said, alleging that he was tortured to death

1h ago