রাজনৈতিক নেতাকর্মীর যেমন মানবাধিকার আছে, পুলিশেরও আছে: প্রধান বিচারপতি

রাজনৈতিক নেতাকর্মীর যেমন মানবাধিকার আছে, পুলিশেরও আছে: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

মানবাধিকার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীর যেমন মানবাধিকার আছে, পুলিশেরও আছে।

তিনি বলেন, 'সম্প্রতি কিছু ঘটনা ঘটেছে আপনারা দেখেছেন, সেখানে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হয়েছে।'

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

মানবাধিকারকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক নেতার যেমন মানবাধিকার আছে, রাজনৈতিক কর্মীর যেমন মানবাধিকার আছে, যিনি রাস্তায় আন্দোলন করবেন তার মানবাধিকার আছে, যে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন—তারও কিন্তু মানবাধিকার আছে, সেও একটি মানুষ; এই বিষয়টি আমরা মনে হয়, আমরা গুলিয়ে ফেলি।'

তিনি বলেন, 'একজন মানুষ, অবশ্যই সংবিধান তাকে নিশ্চিয়তা দিয়েছে, রাস্তায় তিনি আন্দোলন করবেন, মিছিল করবেন, সবই করবেন। অতিরিক্ত বল প্রয়োগ তিনিও যদি করেন পুলিশের ওপর আর পুলিশ যদি অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে; দুটিই কিন্তু অপরাধ। দুটিই কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে যায়। সম্প্রতি কিছু ঘটনা ঘটেছে আপনারা দেখেছেন, সেখানে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হয়েছে।'

ওবায়দুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর হত্যাকাণ্ডের বিচার করা যাবে না মর্মে যে আইনটি পাস হয়; ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স পাস করার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়। 

আদালত চত্বর থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'কোর্টের অনেক সময় ডাণ্ডা-বেড়ি পরিয়ে আসামিদের তোলা হয়। আমি যখন হাইকোর্টে ছিলাম, আমারই একটি অর্ডার ছিল ডাণ্ডা-বেড়ি না পরানোর। কোর্টে আসার আগে ডাণ্ডা-বেড়ি খুলে প্রবেশ করতে হবে। কারণ সে যেন কোর্টে একজন ফ্রি মানুষ হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে আদালতের ভেতরে।

'কিছু দিন আগে ঢাকা কোর্ট থেকে দুই জন জঙ্গি ছিনতাই হয়ে গেছে। দেখা গেল, পুলিশ ডাণ্ডা-বেড়ি না পরিয়ে নিয়ে এসেছে। বললো যে, ডাণ্ডা-বেড়ি পরিয়ে আনা যাবে না। আমার অর্ডারে বলা আছে, যদি খুব ভয়ঙ্কর আসামি হয়, তাকে যদি ডাণ্ডা-বেড়ি পরানোর প্রয়োজন হয়, আদালতের অনুমতি নিয়ে কোর্টে আনতে পারবে। পুলিশের নেগলিজেন্স ছিল বলে মনে হয়। পুলিশ সেটা করেনি এবং এই রায়টা তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়েনি,' বলেন তিনি।

আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'একজন মানুষের নাম ফজলু, এফআইআরে লেখে ফজলু ওরফে ফজইল্যা, অমুক নারীর নাম ওরফে ডাইল সুন্দরী; আজেবাজে নাম দিয়ে এফআইআর সাধারণত লেখা হয়। এটা আমার চোখে আসার পর আমি যখন হাইকোর্টে, এ ধরনের অর্ডার দিয়েছিলাম পুলিশকে যে, এ ধরনের এফআইআর আপনারা রিসিভ করবেন না।

'কারণ একজন মানুষের নাম তার পিতা-মাতা প্রদত্ত। এই নামটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা; এগুলো কোত্থেকে হয়, কীভাবে হয় আপনারা জানেন। সেগুলো বলার প্রয়োজন নেই। এই মানুষকে আদালতে তোলা হলে তাকে চিত্রায়িত করা হচ্ছে সেভাবে এবং এটাও তার মানবাধিকার লঙ্ঘন।

এ সময় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পরস্পরের প্রতি সহনশীল থাকার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।

মানবাধিকারকর্মীদের পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করে রোগীর অবস্থা জানার পরামর্শ দেন তিনি। ওবায়দুল হাসান বলেন, সম্পত্তি দখল করতে অনেকে তাদের সুস্থ আত্মীয়কে মানসিক হাসপাতালে রেখে আসেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আমাদের দেশের সঙ্গে বর্ডার আছে দুটি দেশের—ভারতের এবং মিয়ানমারের। সমুদ্রসীমায় থাইল্যান্ডের সঙ্গে থাকলে থাকতে পারে। আমার মনে হয়, বর্ডার ট্রাইব্যুনালের চিন্তা কিন্তু একেবারে খারাপ না। বর্ডারে যে ডিসপিউটগুলো হয়, সেখানে যদি ট্রাইব্যুনাল থাকে, সেখানে যদি বিচার শেষ হয়ে যায়, নিষ্পত্তি তাড়াতাড়ি হয়ে যেতে পারে বলে আমার মনে হয়। এটা সরকার চিন্তা করতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Luxury car sales plunge amid political, economic uncertainty

Sales have been nearly stagnant since the political unrest and mass protests of July last year

10h ago