আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

ডুসেনের দৃঢ়তায় সেমির আগে রান তাড়ায় আত্মবিশ্বাস বাড়ালো দক্ষিণ আফ্রিকা

৪৭.৩ ওভারেই পেয়ে যাওয়া জয়ে সেমিতে প্রোটিয়ারা প্রবেশ করবে দ্বিতীয় স্থানে থেকেই। প্রথম পর্ব শেষ করলো তারা ১৪ পয়েন্টে। আর আফগানিস্তানের সেমির আশা প্রথম ইনিংস অনেকটা উবে যায়। যদিও ৯ ম্যাচে ৪ জয়ে স্মরণীয় এক বিশ্বকাপ পার করলো রশিদ খানরা।য়া

ডুসেনের দৃঢ়তায় সেমির আগে রান তাড়ায় আত্মবিশ্বাস বাড়ালো দক্ষিণ আফ্রিকা

Rassie van der Dussen

গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে লড়াকু মানসিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হল আফগানরা। ২৪৪ রানের পুঁজি নিয়েই ১৮২ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রোটিয়াদের টপকে দেওয়ার সম্ভাবনাই জাগিয়েছিলেন তখন আফগানরা। কিন্তু রাসি ফন ডার ডুসেনের দৃঢ়তার সঙ্গে আন্দিল ফেহলুকয়ায়োর সহায়তায় জয় পেল প্রোটিয়ারাই। 

৪৭.৩ ওভারেই পেয়ে যাওয়া জয়ে সেমিতে প্রোটিয়ারা প্রবেশ করবে দ্বিতীয় স্থানে থেকেই। প্রথম পর্ব শেষ করলো তারা ১৪ পয়েন্টে। আর আফগানিস্তানের সেমির আশা প্রথম ইনিংস অনেকটা উবে যায়। যদিও ৯ ম্যাচে ৪ জয়ে স্মরণীয় এক বিশ্বকাপ পার করলো রশিদ খানরা।

আহমেদাবাদে শুক্রবার ২৪৫ রানের লক্ষ্যে নেমে ফর্মের ধারা বজায় রেখে খেলে যান কুইন্টন ডি কক। টেম্বা বাভুমাকে প্রথম ইনিংসে খুড়িয়ে চলতে দেখা গিয়েছিল। ব্যাটিংয়েও সেভাবেই খেলে যান। ঠিকমতো দৌঁড়াতে না পারা বাভুমাকে নিয়ে ডি কক পাওয়ারপ্লে পার করে ৫৭ রান এনে। কিন্তু এর পরই মুজিব উর রহমানের বলে মারতে গিয়ে ২৩ রানে ধরা খেয়ে যান বাভুমা। ডি ককও পরের ওভারেই একই পথ ধরেন মোহাম্মদ নবির বলে রিভার্স সুইপে এলবিডাব্লিউ হয়ে। ৪৭ বলে ২ চার ও ৩ ছয়ে ৪১ রানেই থেমে যান ইনফর্ম ব্যাটার। 

ওয়ান ডাউনে নামা রাসি ফন ডার ডুসেন আফগান স্পিন পরীক্ষায় সতর্কতার সাথে খেলে যান। এইডেন মার্করামও এসে আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্যাট করেন। দুজনের জুটিতেই ২০.১ ওভারে একশ রান ছুঁয়ে ফেলে প্রোটিয়ারা। আফগানিস্তানের ভরসা রশিদ খান এরপর হাজির হন তার কারিশমা নিয়ে। মার্করামের পর দ্রুত ফিরিয়ে দেন ভয়ঙ্কর হেইনরিখ ক্লাসেনকেও। ৩২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৫ রান করে ফিরে যান মার্করাম। রশিদের থেমে আসা বলে লিডিং এজে মার্করাম ক্যাচ তুলে দেন কাভারে। ক্লাসেনের অফ স্টাম্প আঘাত করে ১৩ বলে ১০ রানের বেশি করতে দেননি রশিদ। 

ডুসেন যদিও আফগানদের বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ান। ৬৬ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে ফেলেন। ডেভিড মিলারও এসে ভালো শুরু পেয়ে গেলে আফগানদের আশার আলো নিভতে থাকে। কিন্তু ২৪ রানেই মিলারকে ফিরতি ক্যাচে ফিরিয়ে দেন নবি। ১৮২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখনও যদিও প্রোটিয়াদের প্রয়োজন ৭৭ বলে ৬৩ এর বেশি নয়। আস্কিং রেট নাগালে রেখে নিরাপদের চাদরে থেকে এগিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। 

আর কোন উইকেট না পেয়ে নবির কোটা শেষ হয়ে যায় ৩৫ রানে দুই উইকেটে। সমান উইকেটে ৩৭ রানে রশিদের ওভারও শেষ হয়। ৫ ওভারে ৩৪ রানের প্রয়োজন যখন আসে প্রোটিয়ারা, ফেলুকওয়ায়ো ৩০ বলে ১৪ রানে। এরপর নাভিনের ওভারে ফেলুকওয়ায়ো ছক্কা মারলে প্রায় সাত ওভারের বেশি সময় পর বাউন্ডারি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ৩ ওভারে ১৪ রানের দরকার তিন বলেই মিটিয়ে দেন ফেলুকওয়ায়ো। বাঁহাতি ব্যাটার নাভিনকে দুই ছক্কা ও চার মেরে ১৫ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করেন। ৩৭ বলে তিনি অপরাজিত থাকেন ৩৯ রানে, আর ডুসেন ৯৫ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৭৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে ধীরেসুস্থে শুরু করে আফগানিস্তান। দেখেশুনে খেলে ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়িয়ে ৮ ওভারে ৪১ রান তুলে ফেলে তারা। এরপর চাকা উল্টো ঘুরতে শুরু করে। কেশব মহারাজ দুর্দান্ত ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ তোলান রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। ২২ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৫ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান গুরবাজ। পরের দুই ওভারেই একই পথ ধরেন আরও দুই আফগান। দশম ওভারে ইব্রাহিম জাদরান আউট হয়ে যান ৩০ বলে ১৫ রান করে। একাদশ ওভারে মহারাজ এসে শিকার করে ফেলেন অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শহিদিকে।

টানা তিন ওভারে উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় আফগানিস্তান। রহমত শাহ ও ওমরজাই মিলে পুনরুদ্ধারের কাজে মন দেন, কিন্তু বেশ মন্থর গতিতে এগিয়ে চলে তাদের জুটি। বেশ টার্ন পেয়ে দুর্দান্ত আঁটসাঁট বোলিংয়ে মহারাজ তাদের ডানা মেলতে দেননি। একশ পেরিয়ে যেতে ইনিংসের অর্ধেক পার হয়ে যায় আফগানদের। ব্যক্তিগত ২৬ রানে ফেলুকওয়ায়োর ভুলে রানআউট হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন রহমত। কিন্তু ওই রানেই পরে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ৪৬ বলের ইনিংস খেলে। 

দলীয় ৯৪ রানে রহমতের ফেরার পর ইকরাম আলীখিলও চলে যান ১১২ রানেই। দুই বাউন্ডারিতে ১২ রান এনে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে ইকরাম ফিরে গেলে জেরাল্ড কোয়েটজি পান দ্বিতীয় উইকেট।  রান যোগ করতেই আরেকটি উইকেট হারিয়ে বসে আফগানিস্তান। মোহাম্মদ নবি ফিরে যান মাত্র ২ রান করেই। ১১৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট খুইয়ে ধুঁকতে থাকা আফগান ইনিংসে কিছুটা প্রাণ সঞ্চার হয় পরের জুটিতে।

একপাশে অবিচল থেকে খেলে যাওয়া ওমরজাই ফিফটি পেয়ে যান ৭১ বলে। কিন্তু সঙ্গীর অভাবই পড়ে যায় তার। ১৪ রানের রশিদ খান ফিরে গেলে ভেঙে যায় ৪৪ রানের জুটি। এরপর নূর আহমেদ এসে অপ্রত্যাশিতভাবে তাকে সঙ্গ দেন ৪টি চারে ৩২ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে। তবে ওমরজাই দেড়শর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা আফগানিস্তানকে নিয়ে যান একেবারে শেষ ওভারে। 

ওমরজাই নিজে তখন ব্যক্তিগত ৯৬ রানে। স্ট্রাইক বদল করে আবার শেষ তিন বলে ফিরে পান স্ট্রাইক। কিন্তু তিনটি বলেই কিছু করতে না পারলে সেঞ্চুরির আক্ষেপে পুড়তে হয় তাকে। ওমরজাই অপরাজিত থাকেন ১০৭ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৯৭ রান করে। শেষ বলে নাভিন উল হকের রানআউটের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।

দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার কোয়েটজি ৪৪ রানে ৪ উইকেট পান। দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ দেখিয়ে বাঁহাতি স্পিনার মহারাজ তার কোটা শেষ করেন ২৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে। সমান সংখ্যক উইকেট নিতে খরুচে পেসার লুঙ্গি এনগিদি দেন ৬৯ রান।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

5h ago