আমাদেরকে পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার একনেক সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বোঝা কমাতে বিদ্যুৎ ও পানির মতো পরিষেবাগুলোতে প্রাথমিকভাবে ভর্তুকি দেওয়ার প্রবণতা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে বর্তমান সরকারের সর্বশেষ একনেক সভায় সভাপতিত্বকালে এ নির্দেশনা দেন।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ ও পানির মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোতে ভর্তুকি দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মান্নান বলেন, 'আমাদেরকে পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি দেওয়ার অনুশীলন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিদ্যুৎ ও পানির মতো পরিষেবাগুলো সর্বজনীন এবং সবাই ব্যবহার করে। মন্ত্রী থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী সবাই সমানভাবে এই ধরনের ভর্তুকির সুবিধা ভোগ করেন।'

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এলাকাভিত্তিক, আয়-ভিত্তিক ও পরিবার-ভিত্তিক দৃষ্টিকোণ অনুসারে এই ধরনের পরিষেবাগুলোতে চার্জ বা ফি নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, এটি এখনো প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক চিন্তাভাবনা এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সংশ্লিষ্ট চার্জ এবং ফি আরও ন্যায়সঙ্গত করতে এ নিয়ে আরও কাজ করবেন।

উন্নত দেশগুলোর অনুশীলনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই জাতীয় ব্যবস্থা তৈরি করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং এটিই মূল বার্তা।'

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দীর্ঘমেয়াদে দেশব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টোল আদায়ের মাধ্যমে একটি ডেডিকেটেড ফান্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর প্রধানমন্ত্রী আবারও জোর দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা মহাসড়কের উভয় পাশে নিচু এলাকা থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন যেন বৃষ্টির পানি সড়ক ও মহাসড়ক থেকে ওইসব এলাকায় নিষ্কাশন করা যায় এবং এতে মহাসড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

মান্নান বলেন, রাজধানীর চলমান বা ভবিষ্যৎ বহুতল ভবন যেন বিমান চলাচলের পথে এয়ার ফানেল তৈরি করতে না পারে সেদিকে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজর রাখতে বলেছেন।

বিএনপির ডাকা চলমান অবরোধ নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন কি না, জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা মোটেও চিন্তিত নই। আমরা আমাদের মাতৃভূমিতে বসবাস করছি। তাই ভয় পাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পের সুবিধাগুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালানোর ওপর জোর দেন, যেন তারা এগুলো প্রচুর পরিমাণে পেতে পারে।

মান্নান বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইসলামে নারীর ভূমিকার বিষয়ে তার জোরালো কণ্ঠস্বর উল্লেখ করার পাশাপাশি সদ্য শেষ হওয়া সৌদি আরব সফরে ফিলিস্তিনের নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর ইসরাইলের বর্বর হামলার নিন্দা জানান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দিনের সাড়ে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মোট ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কারণ নির্বাচন কমিশন আগামী সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর আর একনেক বৈঠক হবে না।

মান্নান বলেন, আবারও নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে আওয়ামী লীগ জাতির উন্নয়নে কাজ করে যেতে পারবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, সরকার স্পষ্টতই জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে, যার জন্য প্রতিটি উন্নত প্রকল্প পিইসি সভায় অনুমোদনের পর একনেকে পাস করা হয় এবং আইএমইডিও প্রকল্প পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। 

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, একনেক সভায় প্রকল্প অনুমোদনের সঙ্গে আগামী সাধারণ নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি জানান, এই একনেকে বেশ কিছু প্রকল্প অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার জন্য ওই প্রকল্পগুলোর জন্য একনেকের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল।

এছাড়া পরিকল্পনা সচিব বলেন, আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের একনেক শাখায় ঝুলে আছে।

Comments

The Daily Star  | English
court orders exhumation of 114 july killing victims

July killings: Court orders exhumation of 114 bodies for identification

A Dhaka court today ordered the authorities concerned to exhume 114 bodies of individuals killed during the July uprising in order to identify them

1h ago